দিন পরিবর্তন ডেস্ক
Published:21 May 2021, 06:02 AM
আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া পরিকল্পনাতেই আগামী প্রজন্ম দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার ভবিষ্যতে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের একটি কাঠামো করে দিয়ে যাচ্ছে, যাকে ধরে আগামী প্রজন্ম দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।
তাঁর সরকারের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় তিনি যেটা করতে পেরেছেন, এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটা কাঠামো তিনি তৈরি করে দিয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সাল পর্যন্ত কি করণীয়, স্বাধীনতার শতবর্ষ উদযাপনকালে ২০৭১ সালে বাংলাদেশ কোথায় যাবে বা ২১০০ সালে এই ব-দ্বীপ অঞ্চলের বাসিন্দারা যেন এক সুন্দর জীবন পেতে পারে তারও একটা পরিকল্পনা করে দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারণ লক্ষ্য যদি স্থির থাকে তাহলে এগিয়ে চলা সম্ভব। সেজন্য যতটুকু আমরা করে দিয়ে যাচ্ছি এতে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যারাই আসবে তারা যেন উন্নয়নের গতিধারাকে অব্যাহত রাখতে পারে।
তিনি বলেন, এই কাঠামোটা সময়ের বিবর্তনে পরিবর্তনশীল। কারণ যুগের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়েই সকলকে চলতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তি, বিজ্ঞানের বিকাশ, নব নব উদ্ভাবন আমাদেরকে নতুন করে পথ দেখাবে। যার সঙ্গে তাল মিলিয়েই চলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সকালে স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২১ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
তিনি ৯ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে দেশের সর্বোচ্চ সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২১ এ ভূষিত করেন।
জাতীয় পর্যায়ে গৌরবজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের মাঝে এ পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্ষেত্রে এবার চারজন স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন। তারা হলেন মরহুম এ কে এম বজলুর রহমান, শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খুরশিদ উদ্দিন আহমেদ ও মরহুম আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন ড. মৃন্ময় গুহ নিয়োগী। সাহিত্যে কবি মহাদেব সাহা, সংস্কৃতিতে নাট্যজন আতাউর রহমান ও সুরকার-গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন।
‘সমাজসেবা/জনসেবা’ ক্ষেত্রে অধ্যাপক ডা. এম আমজাদ হোসেন এবং গবেষণা ও প্রশিক্ষণে স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল।
যে আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল ’৭৫ এর পর তা হারিয়ে গেলেও তাঁর সরকার সেই আদর্শকে আবারো ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমাদের নতুন প্রজন্ম এখন ইতিহাসকে জানতে চায়। শিকড়ের সন্ধান করে বিজয়ের কথাটা চিন্তা করে নিজেদেরকে গর্বিত মনে করে-এই ধারা অব্যাহত থাকলে অবশ্যই বাংলাদেশ সারা বিশে^ উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে এবং জাতির পিতার স্বপ্ন আমরা পূরণ করতে সক্ষম হব।’
সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে এ পুরস্কার প্রদান করে আসলেও এবার করোনার কারনে বিলম্ব হয়।
স্বাধীনতা পুরস্কারের ক্ষেত্রে পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ৫ লাখ টাকা, ১৮ ক্যারেট মানের ৫০ গ্রাম স্বর্ণপদক, পদকের একটি রেপ্লিকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেয়া হয়।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আয়োজিত এই পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এবং তিনিই পুরস্কার বিজয়ীদের সাইটেশনও পাঠ করেন।
পুরস্কার বিজয়ীদের পক্ষে আতাউর রহমান নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
যারা পুরস্কার পেয়েছেন তাদের সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এটাই চাই আপনাদের পদাংক অনুসরণ করে আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে,স্ব-স্ব কর্মস্থানে মেধা এবং মননের মাধ্যমে তারা যোগ্য একটা অবস্থান করে নেবে এবং দেশ ও জাতির জন্য তাঁরা কিছু অবদান রেখে যাবে। আপনাদের কাছ থেকে তারা অন্তত উৎসাহ পাবে। দেশের জন্য, জাতির জন্য বা জাতির কল্যাণের জন্য কাজ করতে।’
অদৃশ্য শত্রু করোনাভাইরাসের নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে তিনি পুনরায় বলেন, দেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে সেটা যেন এগিয়ে যেতে পারে সেজন্য সকলে দোয়া করবেন এবং কাজ ও করবেন এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন ও এই দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী দেশ স্বাধীন হবার পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ দেখিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমের প্রশ্ন ‘এখানেতো কিছুই নেই, আপনি কি করে দেশ গড়বেন’-এর প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধুর উত্তর ‘আমার মাটি আছে, মানুষ আছে, আমি এদেরকে দিয়েই বাংলাদেশ গড়ে তুলবো’-স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি আমাদের দেশের মানুষ এবং মাটি এটাই বড় শক্তি এবং আমরা সে প্রচেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছি।’
তাঁর দেশের আনাচে কানাচে মনি মুক্তার মত অনেক প্রতিভা ছড়িয়ে রয়েছে এবং যাঁর খুব কম সংখ্যক লোককে এখন পর্যন্ত সম্মাননা জানানো সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা জানি হয়তো হাতেগোনা কয়েকজনকে পুরস্কার দিতে পেরেছি কিন্তু আমাদের সমাজে অনেকে রয়েছে যাদেরকে আমাদের পুরস্কৃত করা উচিত। কারণ সমাজের অনেক ক্ষেত্রে অবদান তারা রেখে যাচ্ছেন। তাদেরকে পুরস্কৃত করতে পারা মানে আমাদের জাতিকে এবং নিজেদেরকে পুরস্কৃত করা।
তিনি বলেন, আমরা চাই আমাদের দেশটা যেন এগিয়ে যায় এবং দেশের মানুষ যাতে সব সময় মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে। আর আজকে দেশের ৫০ বছর পুর্তিতে উন্নয়নশীল দেশের যে মর্যাদাটা পেয়েছি সেটাকে ধরে রেখেই আমরা আরো সামনে এগিয়ে যেতে চাই।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে এইটুকু বলতে পারি আমাদের সবসময় একটা প্রচেষ্টা ছিল যে আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি। তাই সারাবিশে^ মাথা উঁচু করে চলবো। কারো কাছে হাত পেতে, করুণা ভিক্ষা করে আমরা চলবো না। বাংলাদেশকে আত্ম মর্যাদাশীল হিসেবে গড়ে তুলবো।
আজকের বাংলাদেশকে সে অবস্থানে নিয়ে আসতে অনেক ঘাত প্রতিঘাত তাঁকে অতিক্রম করতে হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত ৪০ বছরের সংগ্রামের মধ্যদিয়ে অন্তত এটুকু করতে পেরেছি যে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার ৫০ বছর যখন আমরা উদযাপন করছি তখনই এই স্বীকৃতিটা আমরা পেলাম।
তাঁর সরকার যখনই দেশ পরিচালনায় এসেছে তখনই মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্ট করেছে, যে সম্মান ’৭৫ এর পর ভূলুণ্ঠিত হয়েছিল।
তিনি বলেন, ইতিহাস থেকে জাতির পিতার নাম মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। জাতির পিতাকে হত্যার পর এমন একটা সময় এসেছিল কেউ মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেয়ার সাহস পেতনা। মনে হত সেটা যেন বেশ অপরাধের ব্যাপার ছিল, অথচ জাতির পিতার ডাকে মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা অংশ নিয়েছিলেন তারা সবকিছু ফেলে চলে গিয়েছিলেন। তাদের পরিবার পরিজনও নানাভাবে কষ্ট পেয়েছে। তাই তারা বংশ পরম্পরায় যেন সম্মানটা পায় সেজন্য আমার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন,মুক্তিযোদ্ধারা অনেকেই আজকে বেঁচে নেই কিন্তু তাঁদের পরিবার রয়েছে, তাঁদের ঘর করে দেওয়া থেকে মাসোহারার ব্যবস্থা করাসহ নানাভাবে আমরা সহযোগিতার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি সেই দিন জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে যারা হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন তাঁরা যদি সেই সাহসটা না দেখাতেন তাহলে আমরা স্বাধীনতা পেতাম না, হয়তো সব ব্যর্থ হয়ে যেত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা একটি বৈরি পরিবেশ থেকে সমগ্র জাতির মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সঞ্চারিত করে জাতিকে রক্তস্নাত বিজয় এনে দেন।
তিনি জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের উদাত্ত আহবান-‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’-এর উল্লেখ করে বলেন, এই বাণী যেন বাঙালির হৃদয়ের প্রতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনুপ্রাণীত হলো এবং প্রত্যেকটা বাঙালি জেগে উঠলো। যার যা কিছু ছিল তাই নিয়েই তাঁরা জাতির পিতার আহবানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করে আমাদের বিজয় ছিনিয়ে আনলো।
তিনি এ সময় মিত্রশক্তিকে মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার জন্য আবারো কৃতজ্ঞতা জানান।
বাবা-মা হারিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ভালবাসাকে শক্তি হিসেবে নিয়ে জাতির পিতার আদর্শ ধারণ করেই তাঁর এই পথচলা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা একাত্তরে জাতির মহান আত্মত্যাগ পুণরায় স্মরণ করে দৃপ্ত কন্ঠে বলেন,‘ এত রক্ত, এত ত্যাগ কোন দিনও বৃথা যেতে পারেনা। একে আমরা বৃথা যেতে দিতে পারিনা। আমরা একে বৃথা যেতে দেবনা।’
© দিন পরিবর্তন