নিজস্ব প্রতিবেদক
Published:23 Aug 2022, 05:41 PM
আখাউড়ায় আমন আবাদে ব্যস্ত কৃষক
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে চলতি মৌসুমে আমন ধান আবাদ শুরু করেছে কৃষকরা। জমিতে হাল চাষ, সেচপানি দিয়ে জমি প্রস্তুুতসহ চারা রোপনে তারা এক প্রকার ব্যস্ত সময় পার করছে। তবে জ্বালানি তেল, সার, মজুরি, কিটনাশকসহ কৃষি উপকরনের মূল্যবৃদ্ধিতে আমন ধান আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে কৃষকরা। অনেকে বাড়তি খরচ জোগাতে ধার দেনা করে জমি আবাদ করছেন। এরমধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ক্ষুদ্র কৃষকরা।
স্থানীয় একাধিক কৃষক জানায় এ মৌসুমে আমন ধান আবাদ করতে জ্বালানি তেল, সেচ পানি, তেল, সার, মজুরি, কিটনাশক, জমি নিরানি, ধান কাটা পর্যন্ত প্রতি বিঘাতে তাদের ১৪ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা লাগবে। যা অন্য সময়ের তুলনায় ৪-৫ হাজার টাকা বেশী ব্যয় হচ্ছে। ফসল বিক্রি করে উৎপাদন খচর তুলতে পারবেন কি না এমন চিন্তা এখন কৃষকদের। তবে যদি ধানের ফলন ভালো ও ন্যায্য মূল্য পাওয়া যায় তাহলে তারা অনেকটাই লাভবান হবেন বলে তারা জানায়।
গত বোরো মৌসুমে ধানের ফলন ও বিক্রিতে ভাল দাম পাওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা খুবই খুশি। তাই তারা আমন ধান আবাদে মাঠে নেমে কাজ করছেন। বোরোর চেয়ে চলতি আমন আবাদে জমিতে ফলন ভাল করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন কৃষকরা ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে আমন আবাদে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। রোপনকৃত জমির মধ্যে উন্নতফলনশীল বীজসহ বিভিন্ন রকমের বীজ রয়েছে।
সরেজমিনে পৌর এলাকায় তারাগন, দেবগ্রাম, নারায়নপুর, উপজেলার নুরপুর,হীরাপুর, উমেদপুর, বাউতলা, সাতপাড়া, ধাতুরপহেলা, কুসুমবাড়ি, নুনাসারসহ বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায় স্থানীয় কৃষকরা আমন ধান আবাদে জমি প্রস্তুত, চারা উত্তোলন ও রোপনের কাজে তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে আমন চাষ আবাদে শ্রমিক সংকট থাকায় মজুরিও বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে টানা কয়েক দিন বৃষ্টিপাত হওয়ায় বীজ তলা নষ্ট হওয়ার আশংকায় স্থানীয় কৃষকরা এক প্রকার চিন্তিত হয়ে পড়েন। তবে পযর্ন্ত বীজ তলার কোন ক্ষতি হয়নি।
উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের কৃষক মো. ফজলু বলেন, চলতি মৌসুমে ৫ বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করতে জমি প্রস্তুত করেছেন। ডিজেল সারসহ অন্যান্যা কৃষি উপকরনের মূল্য বৃদ্ধিতে খরচের পরিমান কয়েকগুন বেড়েছে। তিনি বলেন বর্তমানে এক বিঘা জমিতে ট্রাক্টর দিয়ে চাষ দিতে ৪শ৫০ থেকে ৫শ টাকা খরচ লাগছে। যা ছিল ২শ৫০ থেকে ৩শ টাকা। সব জিনিসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের চাষাবাদের খরচ কয়েকগুন বেড়ে গেছে। সরকারের সহায়তার পাশাপাশি ধানের ন্যায্য মূল্য পাওয়া গেলে অনেকটাই লাভবান হওয়ার আশা করছেন।
কৃষক মো. মানিক মিয়া বলেন জানায়, গত মৌসুমে ১৪ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করে ভালো তিনি ফলন পেয়েছেন। তাই এ মৌসুমে তিনি ৮ বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করতে জমি প্রস্তুত করেছেন তিনি। তবে জ্বালানি তেল, সার, মজুরি, কিটনাশকসহ কৃষি উপকরনের মূল্যবৃদ্ধিতে ধান আবাদ নিয়ে তিনি অনেকেটাই দিশাহারা হয়ে পড়েন । ইতিমধ্যে ২ বিঘা জমিতে আমন ধানের চারা লাগানো হয়েছে বলে জানায়। তবে শেষ পযর্ন্ত যদি ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়া যায় তাহলে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে।
কৃষক মো. জমির খাঁন বলেন জ্বালানি তেল, সার, মজুরি, কিটনাশকসহ কৃষি উপকরনের মূল্যবৃদ্ধিতে আমন ধান আবাদ নিয়ে অনেকটাই দু:শ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন। এরপরও তিনি ধানের নায্য মূল্যের আশায় এ মৌসুমে ১০ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করতে ইতিমধ্যে হাল চাষ, সেচ দিয়ে জমি প্রস্তুুত করেছেন। তিনি আশা করছেন এক সপ্তাহের মধ্যে জমিগুলোতে চারা রোপনের কাজ শেষ হবে। তবে গত মৌসুমে বোরো ধান আবাদ করে ও ধানের নায্য মূল্য পাওয়ায় তিনি লাভবান হন। এ আশায় এ মৌসুমে আমন ধান আবাদ করছেন।
কৃষক তাজুল ইসলাম বলেন, যেভাবে চালের দাম বাড়ে সে অনুযায়ী ধানের দাম বাড়ে না। ধানের দাম বৃদ্ধি পেলে কৃষকরা লাভবান হতো উৎসাহ নিয়ে ধান আবাদের পরিধি বাড়তো। তিনি আরো বলেন জ্বালানি তেল, সার, মজুরি, কিটনাশকসহ কৃষি উপকরনের মূল্যবৃদ্ধিও কারণে জমির আবাদের পরিমান কমিয়ে আনা হয়েছে। গত আমন মৌসুমে ৭ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করা হয়েছে এবার ৫ বিঘায় চাষ করা হবে বলে জানায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহেনা বেগম বলেন, এ উপজেলায় পুরোদমে আমন ধান আবাদ শুরু হয়েছে। সার ও ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে খুব বেশি ক্ষতি হবে না কৃষকরা। তবে আশা করছি মুল্য বৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচ বাড়লেও সাথে সাথে কৃষকের উৎপাদিত ফসলের দাম ও বাড়বে। সেইসাথে বৃদ্ধি পাবে তাদের মুনাফাও। তবে সারের ব্যাপারে প্রতিনিয়ত মনিটরিং করা হচ্ছে। আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদেরকে উচ্চফলনশীল ধান আবাদে উৎসাহিত করছি। শেষ পযর্ন্ত আবহাওয়া অনুকুলে এবং সেচ ব্যবস্থা ঠিকমতো ভাল থাকলে আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে।
© দিন পরিবর্তন