নিজস্ব প্রতিবেদক
Published:24 Mar 2021, 08:00 PM
ঈদ পর্যন্ত বন্ধই থাকছে স্কুল-কলেজ
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৩০ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে না। এ ছুটি আরো পিছিয়ে দেওয়া হবে। নতুন করে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় ঈদুল ফিতর পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এমন খবর জানায়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, করোনা পরিস্থিতি বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত পিছিয়ে দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।শিক্ষার্থীদের গিনিপিগ বানিয়ে তাদের নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে না। তাদের সুরক্ষার কথাটি আগে বিবেচনা করে স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছিলেন ৩০ মার্চ স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া হবে। তখন শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলেও প্রাক-প্রাথমিক খুলছে না। এ বিষয়ে পরে জানিয়ে দেওয়া হবে। পঞ্চম, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস নেওয়া হবে। অন্যান্য ক্লাসের শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে একদিন ক্লাস নেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে।
এরপরই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর ও মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর স্কুল খুলতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দেয়। ফলে দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা স্কুল-কলেজ সংস্কারের উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। এরপর স্কুল-কলেজ খোলার আগে শিক্ষকদের টিকাগ্রহণ বাধ্যতামূলক করে দুই মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৮৫ শতাংশ শিক্ষক করোনা টিকার আওতায় এসেছে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
কিন্তু সম্প্রতি করোনা সংক্রমণের হার ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে জনমনে আবারো প্রশ্ন উঠেছে। এরই মধ্যে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, স্কুল-কলেজ খোলা হলে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
এর মাঝে গত ২২ মার্চ ঢাকা শিক্ষাবোর্ড ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণ কার্যক্রমের ঘোষণা দিয়েছে। এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের কোনো ধরনের নির্বাচনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না বলেও শিক্ষাবোর্ড থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৩০ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও সেদিন শবে বরাতের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ কারণে সেদিন স্কুল-কলেজ খোলা হবে না।’ তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে দু-একদিনের মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালকের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। ৩০ মার্চ ছুটি ঘোষণা করে মাউশিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে বলা হবে।’ ছুটি বাড়ানোর বিষয়ে মাহবুব হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল খায়ের বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৩০ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় শবে বরাতের ছুটি ২৯ মার্চ ছিল। কিন্তু পরে ইসলামী ফাউন্ডেশন ঘোষণা দিয়েছে ৩০ মার্চ শবে বরাতের ছুটি। সে প্রেক্ষিতে ৩০ মার্চ ছুটি থাকবে।
গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে স্কুল-কলেজ বন্ধ রেখে ভার্চুয়াল মাধ্যমে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হলেও তা থেকে অনেকে পিছিয়ে পড়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সচ্ছল পরিবারের ছেলে-মেয়েরা ইন্টারনেটের ওপর আসক্ত হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি আমাদের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঝরে পড়া, বাল্যবিয়ে, শিশুশ্রম, অপুষ্টি ও পরিবারের মধ্যে অশান্তি বেড়ে গেছে। এসব কারণে ৭৬ শতাংশ অভিভাবক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী স্কুল-কলেজ খোলার পক্ষে মতামত দিয়েছেন। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর দাবি সবার।
এই শিক্ষাবিদ আরও বলেন, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে শুধু সরকারিভাবে ঘোষণা নয়, যাদের সক্ষমতা নেই তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা প্রয়োজন। সব স্থানে এটি নিশ্চিত করতে শিক্ষক ও জনপ্রতিনিধিদের দক্ষতা প্রয়োজন রয়েছে। এজন্য কড়া মনিটরিং প্রয়োজন।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (কারিকুলাম) মশিউজ্জামান জানান, ছাত্র-ছাত্রীদের যে ক্ষতি হয়েছে তা পরের বছরের পাঠের সঙ্গে পূরণের জন্য শিক্ষক নির্দেশিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, নিচের ক্লাসের যে বিষয়টি না পড়ে কোনো শিক্ষার্থী উপরের ক্লাসে উঠেছে, নতুন ক্লাসে সে ধরনের বিষয় পড়ার সময় আগের ক্লাসের বিষয়টিও পড়ানো হবে। করোনা পরিস্থিতি কমে গেলেও ভার্চুয়াল ক্লাস অব্যাহত রাখা হবে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ের ডিজিটাল ভার্সন রাখা হবে, যেন শিক্ষার্থীরা যে কোনোভাবে সেগুলো আয়ত্ত করে নিতে পারে।
জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ কমিটির প্রণেতা অধ্যাপক ড. একরামুল কবির বলেন, ভার্চুয়াল মাধ্যম থেকে প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত। শহরকেন্দ্রিক এ সুবিধা পাওয়ায় স্কুল খুললেও শহরে বসবাস করা শিক্ষার্থীরা বাসায় বসে স্কুল করতে চাইবে। স্কুলে উপস্থিতির বিষয়ে তাদের অনাগ্রহ তৈরি হতে পারে। বঞ্চিতদের চিহ্নিত করে আলাদাভাবে ক্লাস নিয়ে এগিয়ে নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাসের সময় বাড়াতে হবে।
© দিন পরিবর্তন