দিন পরিবর্তন ডেস্ক
Published:10 Apr 2021, 07:25 AM
করোনা রোগী সামার দিতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতাল কর্মীরা
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মৃত্যু সংখ্যা সাড়ে নয় হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
ভাইরাসের ব্যাপক সামাজিক সংক্রমণের কারণে এখন ঢাকার বাইরেও প্রত্যন্ত এলাকায় প্রচুর রোগী শনাক্ত হচ্ছে।
প্রতিদিনই হাজারো মানুষ আক্রান্ত হওয়ায় মারাত্মক চাপে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে বাংলাদেশে ৬৫৪টি সরকারি এবং ৫০৫৫টি বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারির সময় রোগীর চাপ ও আতঙ্কে সাধারণ রোগীরাও অতি জরুরি না হলে হাসপাতালে যাচ্ছেন না।
এমন অবস্থায় বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশন বলছে, গত ৮ দিনে চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন ৪১৪ জন, আর মারা গেছেন দুইজন চিকিৎসক।
নার্স আক্রান্ত হয়েছেন ১২২জন । এ ছাড়া ৭০ জন মেডিকেল টেকনিশিয়ানও আক্রান্ত হয়েছেন।
নোয়াখালী কোভিড হাসপাতালের পরিচালক ড. নিরুপম দাস বলছিলেন, স্বাস্থ্য কর্মীরা আক্রান্ত হওয়ার ফলে আরো হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসা দিতে।
তিনি বলছেন "রোষ্টার ডিউটিতে যেখানে একজনকে ৮ ঘন্টা কাজ করতে হয় সেখানে জনবল কম হওয়ার কারণে ১২ঘন্টা পর্যন্ত কাজ করা হচ্ছে"।
"বুঝতেই পারছেন, এই গরমে পিপিই পরে এতক্ষণ ডিউটি করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে"।
তিনি বলছিলেন এবারে করোনাভাইরাসের ২য় ঢেউয়ের সময় তারা দেখছেন যে তরুণ চিকিৎসকরা বেশি করে আক্রান্ত হচ্ছেন।
পরিস্থিতি সামাল দিতে যেসব জায়গায় রোগী কম কিন্তু ডাক্তার বেশি - সেখান থেকে ডাক্তার এনে যেখানে রোগী বেশি সেখানে কাজ করানো হচ্ছে।
সব চিকিৎসকদের শিক্ষা-কালীন ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এমনকি যারা ট্রেনিং করছিলেন তারাও পূর্ণকালীন কাজ করছেন।
বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক মিলি দে বলছেন, "এখানে মাঝখানে কয়েক মাস চাপ কম ছিল কিন্তু এখন মারাত্মক চাপ। হাসপাতালের ছয়তলা কেবিন বেড ,সেখানে ১০০টা বেড এবং ২০টা আইসিইউ বেড রয়েছে। কোনটাই খালি থাকছে না"।
তিনি বলছিলেন "রোগীদের সিরিয়াল এত দীর্ঘ যে একটা বেড খালি হলে সঙ্গে সঙ্গে রোগী ভর্তি করতে হচ্ছে"।
মিলি দে বলেন, চিকিৎসকরা বিপদে পড়ছেন যখন জেনারেল ওয়ার্ডে চিকিৎসা দিতে যাচ্ছেন তখন। কারণ একটা করোনা পজেটিভ রোগীর ক্ষেত্রে তিনি পিপিইসহ সব প্রস্তুতি নিয়ে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন।
"কিন্তু জেনারেল ওয়ার্ডে একটা রোগী এক সপ্তাহ পর জ্বর-কাশি হচ্ছে, তাকে টেস্ট করালে পজিটিভ আসছে। এর মধ্যে যেহেতু আমরা তার সংস্পর্শে গিয়েছি, তাই এভাবেই চিকিৎসকরা বেশি সংক্রমিত হচ্ছে"।
করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন - সংকটাপন্ন রোগীর জন্য আইসিইউ থেকে এখন বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে উচ্চচাপে অক্সিজেন সরবরাহ করা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে দেশের মাত্র ২৩টি সরকারি হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা আছে।
বাকী হাসপাতালে চাহিদা পূরণের জন্য রয়েছে প্রায় ১৬ হাজার অক্সিজেন সিলিন্ডার।
হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেলিন চৌধুরী বলেন, "আমাদের এখানে কোন আইসিইউ বেড ফাঁকা নেই, সাধারণ বেড যেগুলো আছে সেগুলোর কয়েকটা সাধারণ রোগীদের জন্য রেখে, কোভিড রোগীদের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে"।
স্বাস্থ্য বিভাগ হিসেবে সারা দেশে সরকারি বেসরকারি মিলে আইসিইউ বেড আছে ১২৫০টি।
এর মধ্যে ৮০০টির মত আইসিইউ বেড কোভিড রোগীদের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
ড. লেলিন আহমেদ বলেন "এক বছরের বেশি সময় ধরে এই স্বাস্থ্য কর্মীরা কোভিডের সেবা দিচ্ছেন, তারা এখন মানসিক, শারীরিকভাবে চূড়ান্ত ক্লান্ত এবং হতাশ"।
"তারা প্রতিদিন মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখছে শুধু তাইনা , তাদের সহকর্মীদের প্রতিনিয়ত কোভিডে আক্রান্ত হতে দেখছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে তাদের মৃত্যু দেখছেন"।
"এই অবস্থায় স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের মানসিক অবস্থা চাঙ্গা করার জন্য কিছু কাজ করা দরকার। যেমন তাদের এক মাস ডিউটি করলে দুই মাসের বেতন দেয়া এবং ডিউটি প্যাটার্ন পরিবর্তন করে টানা সাত দিন কাজ করার পর সাত দিন ছুটি দিতে হবে। এতে করে তারা কিছুটা মানসিক চাপমুক্ত হবেন" - বলেন মি. আহমেদ।
এদিকে সরকারের করোনাভাইরাসের টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ইকবাল আরসালান বলেন "প্রথম ওয়েভ করোনাভাইরাস মোকাবেলা করার জন্য তখন স্বাস্থ্য কর্মীরা যেভাবে ইমারজেন্সি ভিত্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, প্রশাসনের লাল ফিতা ভেঙে তারা মানুষের প্রয়োজনে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন কাজ করেছিল। "
"কিন্তু পরবর্তীতে তাদের কাজের বৈধতা দেয়া হয় নি। এটা তাদের মারাত্মক হতাশ করেছে" - বলেন তিনি। - বিবিসি বাংলা
© দিন পরিবর্তন