নিজস্ব প্রতিবেদক
Published:11 Jan 2024, 03:21 PM
কলা আবাদে আগ্রহ বাড়ছে টাঙ্গাইলের কৃষকদের
হাফিজুর রহমান.টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি:
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে দাম বৃদ্ধি সহ কলা আবাদে খরচ কম হওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকেরা ঝুঁকছেন কলা চাষে। ধান চাষিরা ধান আবাদ করে বারবার লোকসান গুনার কারণে এবং বাজারে ধানের পর্যাপ্ত দাম না পাওয়ায় কলা চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
উপজেলার কলা চাষি আস্কের আলী, নূরুল ইসলাম, ছানোয়ার হোসেন ও হাফিজুর রহমান স্বপন ফকির এরা জানান, কলা চাষ করে শুধু দুঃখই ঘোচাননি, পারিবার-পরিজন নিয়ে ভালোভাবেই চলতে পারছেন তারা। আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় কলা চাষের দিকে দিনদিন আগ্রহ বেড়েছে কলা চাষিদের। কলা চাষ করে এ উপজেলায় সাবলম্বীও হয়েছেন অনেক কলা চাষি। আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে পাওয়ার কারণে তাদের সন্তানদের ভালোভাবে পড়ালেখাও করাতে পারছেন। অর্থকরি ফসল হিসাবে উপজেলায় বিবেচিত হচ্ছে এই কলা।
উপজেলার একাধিক কলা চাষি জানান, কলা চাষ করে অন্যান্য ফসলের চেয়ে বেশি লাভবান হওয়া যায়। কলা চাষে প্রথম অবস্থায় সাথী ফসল হিসাবে মসলা জাতীয় ফসল, সকল ধরনের সবজি, ধানসহ অন্যন্যা ফসলও আবাদ করা যায়। কলা চারা গাছ লাগানোর অল্প দিনের মধ্যে বেড়ে উঠে এবং দ্রুত ফল পাওয়া যায়। বৈশাখ মাসে কলা চারা রোপণ করলে অগ্রহায়ণ মাস থেকে ফলন পাওয়া যায়। যে সব জমিতে পানি জমে না সে সব জমিতে কলা চাষ ভালো হয়। এক বিঘা জমিতে কলা চাষের জন্য জাতভেদে আড়াইশ’ থেকে সাড়ে তিনশ’ কলা চারা রোপণ করা যায়। একটি কলা গাছ ২ থেকে আড়াই মণ পর্যন্ত কলা দিতে পারে। এক বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হলেও তিন-চার গুণ টাকার কলা বিক্রি করা যায়। একবার কলা চারা রোপণ করলে একটানা তিন বছর ভালোভাবে ফলন দিতে পারে। যা অন্য কোনো ফসলে সম্ভব হয় না।
চাষিরা জানান, এই এলাকার কলা ভালোমানের হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে কলা ক্রয় করে ঢাকা, চট্রগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, বরিশালসহ দেশের বিভিন্নস্থানে নিয়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাণাজ্যিক ভিত্তিতে সর্বি, মহেরে সাগর, চাঁপা, মানকিসহ বিভিন্ন জাতের কলা চাষ করেন টাঙ্গাইলের চাষিরা। এসব জাতের কলা গাছ রোপণের অল্প দিনেই ফল পাওয়া যায়।
উপজেলার হাজরাবাড়ী পীরপুর গ্রামের কৃষক সুলতান আহম্মেদ বলেন, এবছর ৩ বিঘা জমিতে কলা চাষ করেছি। প্রতি বিঘায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সকল খরচ বাদে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকার মত লাভ হবে। কলা বিক্রি করতে কোনো ঝামেলা হয় না। দেশের বিভিন্নস্থান থেকে কলা পাইকাররা এসে যেমন নিয়ে যায় তেমনই স্থানীয় বাজারে কলা বিক্রি করা যায়।
চাষি আমজাদ হোসেন ও রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের অঞ্চলে কলার ভালো ফলন হয়। কলা আবাদ করে এখানকার চাষিদের কোনো লোকসান না হওয়ায় দিনদিন আগ্রহ বেড়েই চলছে। এখানকারপ্রতি ছড়ি কলা প্রকারভেদে সাগর কলা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, সবজি কলা (আনাজ) ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চাপা কলা ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করা যায়।
ধনবাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাসুদুর রহমান মাসুদ জানান, “উপজেলায় এবার ৪০ হেক্টর জমিতে কলা চাষ হয়েছে। কলা চাষে লাভবান হওয়ায় কলা চাষি ও কৃষকরা কলা চাষের দিকে আগ্রহ বেড়েই চলছে। কলা চাষে তেমন কোনো ঝামেলা না থাকার কারণে ও অধিক লাভ জনক হওয়ায় স্থানীয়রা কলা চাষ করেছে। চাষের জন্য উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে কলা চাষিদের নানা ধরনের পরামর্শও দান করছে। যাতে করে চাষিরা লাভবান হতে পারেন।”
© দিন পরিবর্তন