নিজস্ব প্রতিনিধি
Published:15 Feb 2024, 05:32 PM
কুষ্টিয়ায় মধুর খামার সরিষা খেতে
নুরুন্নাহার সীমা, কুষ্টিয়া :
প্রকৃতি হলুদের দোয়ার উন্মুক্ত করে দিয়েছে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার মাঠ। ক্ষেতের পর ক্ষেত সরিষা আর সরিষা। সরিষা ফুলের অপূর্ব হলুদ সবার চোখ জুড়ানোর দৃশ্য পথচারীদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করেছে। দৃষ্টির সীমানা দূরের সরষে ফুলের হলুদ রঙের অপরূপ রূপে সেজেছে।
এ যেন এক অপরূপ দৃশ্য। পুরো মাঠ যেন ঢেকে আছে হলুদ গালিচায়। মাঠে চোখ মেললেই মন জুড়িয়ে যায়। সরিষার রূপ আর গন্ধে মাতোয়ারা চারিধার । আর তারই বুক জুড়ে মৌমাছি, প্রজাপতির অবিরাম খেলা। এর মধ্যেই সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে ক্ষেতের পাশে পোষা মৌমাছির শত শত বাক্স নিয়ে হাজির হয়েছেন মৌয়ালরা। মৌমাছিরা সরিষার ফুলে ফুলে ঘুরে ঘুরে তুলে নেয় মধু, আর সেই মধু সংগ্রহ করতেই যেন মৌয়ালরা উৎসবে মেতেছেন। এই মধু খেতে বক্স সাজিয়ে মধুর খামার স্থাপন হয়েছে কুষ্টিয়ার মিরপুরে ।
ক্রমেই কুষ্টিয়াতে সরিষা খেতে মৌ চাষের মাধ্যমে মধু আহরণ জনপ্রিয় হচ্ছে। কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য মতে, সরিষা মৌসুমে কুষ্টিয়ার ছোট-বড় মোট ৫৫ জন খামারি মৌবক্সের মাধ্যমে মধু আহরণ করে থাকেন।
ইতোমধ্যেই কুষ্টিয়ায় মধু আহরণ শুরু করেছেন খামারিরা। বর্তমানে ৫৫ জন খামারি জেলার বিভিন্ন মাঠে তাদের মৌবক্স স্থাপন করেছেন। এখন পর্যন্ত ৭৯৮টি মৌবক্সের মাধ্যমে ২ টন মধু আহরণ করেছেন।
গত মৌসুমে কুষ্টিয়া জেলায় ৫৫ জন খামারি বা মৌয়াল ১ হাজার ১৬৪টি মৌবক্সের মাধ্যমে ৫ টন মধু সংগ্রহ করেছিলেন। যার বাজার মূল্য ছিল প্রায় ৩০ লাখ টাকা।
সরিষা খেত থেকে মধু আহরণ করে সেই মধু বিক্রি করে নিজেকে স্বাবলম্বী করেছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার গেটপাড়া গ্রামের যুবক মামুন অর রশিদ। নিজের বেকারত্ব ঘুচিয়ে করেছেন দুই শতাধিক লোকের কর্মসংস্থান, মামুন থেকে পরিচিতি পেয়েছেন মধু মামুন নামে।
মামুন সরিষা খেতেই মৌমাছির মৌবক্সের মাধ্যমে মধু আহরণ করেন এবং সেখান থেকেই তা বিক্রি করেন।
মামুন জানান, ১৯৯৭ সালে তার এক বন্ধুকে সঙ্গে দিয়ে মাত্র ২ হাজার ৬০০ টাকায় ৪টি মৌবক্স কিনে মৌমাছি পালন শুরু করেন। পরে মৌ চাষ বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেন মধু আহরণের কাজ। আস্তে আস্তে তার আয় বাড়তে থাকে। বর্তমানে তার খামারে কয়েকশ মৌমাছির বক্স রয়েছে। গড়ে তুলেছেন মিষ্টি মৌ খামার।
সরেজমিন দেখা যায়, বিস্তৃত সরিষা মাঠে চলছে মধু আহরণ। সরিষা খেতের মধ্যে ফাকা একটু জায়গায় বেশ কিছু মৌবক্স রাখা। সেখানে পুরো মাঠেই মৌমাছির আনাগোনা। প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেসব বাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে।
মামুন-অর-রশিদ বলেন, ‘প্রথমে শখের বসে ২ হাজার ৬০০ টাকা দিয়ে মাত্র ৪টি মধুর বাক্স কিনে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ শুরু করি। এরপর আত্মকর্মসংস্থান এবং কিছু মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে মধুর বাণিজ্যিক চাষ শুরু করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি কেজি মধু ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি। সেই হিসাবে চলতি মৌসুমে আমি ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা আয় করব।’
মধু খামারে কাজ করা শ্রমিক জাহান আলী বলেন, ‘মধুর খামারে কাজ করে আমার সংসার চলে। কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে আমাকে মধু সংগ্রহ করতে হয়। সরিষার মৌসুমে আমার মতো আরও অনেকেই বিভিন্ন মধু খামারিদের সঙ্গে কাজ করেন। সরিষার মৌসুমে আমাদের কাজের অভাব হয় না। এ মৌসুমে অন্য মৌসুমের থেকে আমাদের আয়ও বেশি হয়।
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘উপজেলার অনেক ব্যক্তি মধুর চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। অনেকেই আবার বাণিজ্যিকভাবে মধু চাষেও আগ্রহী হচ্ছেন। সাধারণ উপায়ে মধু সংগ্রহ করতে গেলে মধুর মান ৪০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু মধু আহরণে প্রযুক্তির ব্যবহার করলে মধুর মান অক্ষুণ্ন থাকে। আবার মৌ চাষের মাধ্যমে সরিষা খেত থেকে মধু আহরণ করলে মৌমাছির মাধ্যমে ভালো পরাগায়ন হয় এবং সরিষার ফলনও বাড়ে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুব আলম বলেন, ‘এবার আবহাওয়া অনুকূলে আছে। মাঠে সরিষার চাষও আগের বছরের তুলনায় বেশি হয়েছে। তাই ভরা মৌসুমে এবার অন্য বারের তুলনায় বেশি মধু আহরণ হবে বলে আশা করছি।’
© দিন পরিবর্তন