নিজস্ব প্রতিবেদক
Published:02 Aug 2022, 07:41 PM
কেঁচো সারে ঘুরেছে ভাগ্যের চাকা
সাতক্ষীরার তালায় কেঁচো কম্পোস্ট সার উৎপাদন করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন মোড়ল আব্দুল মালেক এক ব্যক্তি। তার বাড়ি জেলার তালা উপজেলার শিবপুর গ্রামে। ২০১৩-১৪ সাল থেকে জৈব সার উৎপাদনের কাজ শুরু করেন। বর্তমানে আব্দুল মালেকের খামারে প্রতিমাসে প্রায় দশ টন কেঁচো কম্পোস্ট সার উৎপাদন হচ্ছে। যা নিজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
কেবল মোড়ল আব্দুল মালেকই নন, একইভাবে কেঁচো কম্পোস্ট সার উৎপাদন করে জীবিকা অর্জন করছেন উপজেলার প্রায় ১২০০ খামারি। কেঁচো কম্পোস্ট সার উৎপাদনে এ যেন এক নতুন সম্ভাবনা।
ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদনকারী মোড়ল আব্দুল মালেক বলেন, আমি ২০১৩-১৪ সালের দিক থেকে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করছি। আমার খামারে প্রতি মাসে প্রায় ১০ টন সার উৎপাদন হয়। এই সার ব্যবহার করে একদিকে যেমন কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন, পাশাপাশি স্বাবলম্বী হচ্ছে আমার মত খামারিরা।
ওই গ্রামের আরেকজন ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনকারী আব্দুল আজিজ বিশ্বাস বলেন, ২০১৮ সালে বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন প্রচেষ্টার সহায়তায় সর্বপ্রথম আমি ও আমার স্ত্রী সালমা বেগম কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করি। তখন আমাদের অনেক অভাব ছিল। জৈব সার উৎপাদন ও বিক্রি করে আমাদের বর্তমানে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে আমার খামার থেকে প্রতি দেড় মাসে প্রায় ১৫ টন ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায় এ উৎপাদিত সার। দিন যতো যাচ্ছে ভার্মি কম্পোস্টের চাহিদাও তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা পেলে আমার মতো খামারিরা ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন করে সাফল্য অর্জন করতে পারবে।
আব্দুল আজিজ বিশ্বাসের স্ত্রী সালমা বেগম বলেন, কেঁচো সার আমার পরিবারের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। সারের পেছনে অনেক খাটাখাটনি করা লেগেছে আমাদের, কিন্তু সব সময় চেষ্টা করেছি ভালো সার তৈরি করার জন্য। এই কেঁচো সার থেকে এখন গরু-ছাগলের ছোট একটা খামারও করেছি আমরা।
তালার সবুজ বাংলা সিআইজি কৃষক সমবায় সমিতির কোষাধ্যক্ষ. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের সমিতির সদস্যরা নিজেদের জমিতে কেঁচো সার ব্যবহার করেন৷ ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করলে ফলন ভালো হয়। রাসায়নিক সারের মতো ব্যয়বহুল নয় এবং ফলন ভালো পাওয়ায় কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন জৈব সার ব্যবহারে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, গত অর্থবছরে তালার ৪০ জন খামারিকে নিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট সারের প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে। এছাড়া উপজেলায় প্রায় ১২০০ ছোট বড় ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদনকারী রয়েছেন, যারা উপজেলার চাহিদা পূরণ করে বাইরেও এই সার বিক্রি করছেন।
তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা খাতুন বলেন, ভার্মি কম্পোস্ট জৈব সারের এক নতুন সম্ভাবনার নাম। গোবর থেকে কেঁচোর মাধ্যমে উৎপাদিত এই সার কৃষি জমির উবর্রতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। কৃষকরা ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহার ও উৎপাদনে উৎসাহী হচ্ছেন। কৃষি অফিস থেকে আমরা তাদের সার্বিক সহায়তা দিয়ে আসছি।
© দিন পরিবর্তন