logo

কোন্দল থাকলে ভোটে বিপর্যয়ের শঙ্কায় কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

Published:15 Sep 2022, 06:48 PM

কোন্দল থাকলে ভোটে বিপর্যয়ের শঙ্কায় কাদের


আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে দলের নেতাদের মধ্যে সকল দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলার তাগিদ দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সতর্ক করেছেন বিরোধ নিয়ে নির্বাচনে গেলে সাফল্য পাওয়া যাবে না। 

আগামী নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনেই হবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ‘দুঃস্বপ্ন’ না দেখার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, এমন সরকার জাদুঘরে চলে গেছে।  গতকাল বুধবার ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। 

একই দিন নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট হবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে।  সেই নির্বাচনে জিততে পারলে আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করবে। 

গত তিন মেয়াদে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে দাবি করা ক্ষমতাসীন দলের জন্য এই ভোট তাদের জনপ্রিয়তার প্রমাণ দেওয়ার চ্যালেঞ্জ।  তবে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকার কারণে দলের ভেতর যে নানা উপদলীয় কোন্দল, এক নেতার সঙ্গে আরেক নেতার রেষারেষি তৈরি হয়েছে, সেটি ভাবাচ্ছে আওয়ামী লীগকে।

ওবায়দুল কাদের জোর দিচ্ছেন দলীয় ঐক্যে।  নেতাকর্মীদের তিনি বলেন, দলের মধ্যে অন্তঃকলহ দূর করতে হবে।  দ্বন্দ্ব চিরতরে পরিহার করতে হবে।  দল যদি ঐক্যবদ্ধ না থাকে তাহলে নির্বাচনে সফলতা আসবে না তাই অবশ্যই দলের ভেতরের দ্বন্দ্ব দূর করতে হবে। 

দল অন্তপ্রাণ কর্মীদের মূল্যায়নের ওপরও জোর দিয়ে কাদের বলেন, দুঃসময়ের ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে।  আওয়ামী লীগে বসন্তের কোকিলদের নেতা বানানো যাবে না।  বিএনপির সব ‘বিষোদগার’ আর ‘অপপ্রচারের’ জবাব উন্নয়নের মাধ্যমে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তাকে ভয় পায়।  তাই তারা নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। 

বিএনপি যদি আন্দোলনের নামে আগুন সন্ত্রাস নিয়ে মাঠে নামে তাহলে জনগণকে নিয়ে কঠোরভাবে তার জবাব দেওয়ার ঘোষণাও দেন তিনি।  বলেন, আওয়ামী লীগ কখনো আক্রমণ করবে না।  কিন্তু যতক্ষণ না পর্যন্ত আক্রান্ত হই, আক্রান্ত হলে এর জবাব দিতে প্রস্তুত।  নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে বিএনপি দাবি আবারো নাকচ করলেন ওবায়দুল কাদের। 

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে এই সরকার বাতিল করার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুঃস্বপ্ন দেখে কোনো লাভ নেই, এ সরকার ব্যবস্থা এখন জাদুঘরে।  পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো বাংলাদেশেও যথা সময়ে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার শুধু রুটিন দায়িত্ব পালন করবে। 

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরানোর দাবিতে বিএনপির আন্দোলনের পরিকল্পনাকে ‘গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল’ বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ নেতা।  বিএনপি আন্দোলনের পাশাপাশি ক্ষমতায় গেলে যে জাতীয় সরকারের ঘোষণা দিয়েছে, তাতে নেতা কে হবেন, সে প্রশ্নও রাখেন তিনি। 

২০১৮ সালে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা হলে সেদিনই যুক্তরাজ্যে অবস্থান করা তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করে বিএনপি।  দুই বছর পর ২০২০ সালের মার্চে খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত হওয়ার পর তিনি ঘরে ফিরলেও তারেকের সেই পদ রয়েই গেছে। রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না বিএনপি নেত্রী। 

ওবায়দুল কাদের বলেন, দলটি নেতৃত্বশূন্য অথচ আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করার ঘোষণা দিয়েছে।  কিন্তু তাদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবে কে? আগামী নির্বাচন বা বিএনপির দাবিকৃত জাতীয় সরকারের নেতা কে হবেন? বিএনপির আন্দোলনেরও নেতা নেই, নির্বাচনেও নেতা নেই।  মির্জা ফখরুল বড় বড় কথা বলেন, ঢাল নাই, তলোয়ার নাই, নিধিরাম সর্দার’- বলেন তিনি। 

তারেক রহমানকে ইঙ্গিত করে কাদের বলেন, লন্ডন থেকে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে বাংলাদেশে পদ্মা-মেঘনা-যমুনায় কি ঢেউ আসবে? 

ধামরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মালেকের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান এবং ধামরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সাকু প্রমুখ। 



© দিন পরিবর্তন