logo

খুলল ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের নতুন দুয়ার

নিজস্ব প্রতিবেদক

Published:13 Feb 2024, 01:42 PM

খুলল ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের নতুন দুয়ার


দিনপরিবর্তন প্রতিনিধি, রাজশাহী:

৫৯ বছর পর বাংলাদেশ-ভারত নৌ-প্রটোকলে চালু হলো রাজশাহী-মুর্শিদাবাদ নৌপথ। গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ থেকে মুর্শিদাবাদের মায়া নৌপথে আনুষ্ঠানিকভাবে নৌযান চলাচল শুরু হয় গতকাল বেলা সোয়া ১১টায়। প্রথম দিন সাড়ে ১১ টন গার্মেন্টস ঝুট এ পথে বাংলাদেশ থেকে ভারত পাঠানো হয়। বেলা ১১টায় সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌপথে পণ্যবাহী নৌযান চলাচলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা, আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এবং রাজশাহীতে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাইকমিশনার মনোজ কুমারসহ রাজশাহীর স্থানীয় সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়ার অনেক উন্নত, উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করছে। বাংলাদেশকে আমরা বদলে দিয়েছি। শুধু বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধারণের কারণে বদলে গেছে বাংলাদেশ।

১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আগপর্যন্ত সুলতানগঞ্জ-মায়া ও গোদাগাড়ী-ভারতের লালগোলা নৌঘাটের মধ্যে নৌপথে বাণিজ্য চালু ছিল। পরে রুটটি বন্ধ হয়ে যায়। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পরে রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ ঘাটটি নদীবন্দরের মর্যাদা পেল।
সুলতানগঞ্জ নৌবন্দরের মাধ্যমে ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে সময় ও খরচ কমে যাবে। এতে উপকৃত হবেন বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের ব্যবসায়ীরা। তারা আশা করছেন, বছরে এ নৌপথে দুই দেশের মধ্যে হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হবে।

এর আগে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভায় বাংলাদেশের রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ আর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ধুলিয়ান নৌরুটে বাণিজ্য চালুর সিদ্ধান্ত হয়। ৭৮ কিলোমিটারের একটি নৌপথের অনুমোদন থাকলেও পদ্মার নাব্য সংকটের কারণে তা কার্যকর করা যায়নি। ফলে রুটটি সংক্ষিপ্ত করে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ থেকে ভারতের মুর্শিদাবাদের মায়া নৌবন্দর পর্যন্ত আড়াআড়িভাবে ২০ কিলোমিটার পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে পণ্য আনা-নেওয়ার পরিকল্পনা হয়। শুরুতে এ নৌপথে ভারত থেকে পাথর বালি ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্যসামগ্রী আনা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সুলতানগঞ্জ থেকে মায়া নৌঘাটের নদীপথে দূরত্ব মাত্র ১৭ কিলোমিটার। সুলতানগঞ্জ নৌঘাটটি রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়ক থেকে এক কিলোমিটার দক্ষিণে পদ্মার শাখা নদী মহানন্দার মোহনার কাছাকাছি। সারা বছর সুলতানগঞ্জের এ পয়েন্টে গভীর পানি থাকে।

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা নৌপথের উদ্বোধন ঘিরে সুলতানগঞ্জ এলাকায় বিপুল মানুষের সমাগম হয়। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, এই পথ চালুর ফলে স্থানীয়ভাবে ছোট-বড় ব্যবসার প্রসার ঘটবে। মানুষের কর্মসংস্থানও হবে। সুলতানগঞ্জ নৌবন্দরকে নতুন করে সাজানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে যাবতীয় কাজ শেষ হয়েছে। পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য তৈরিকরা হচ্ছে রাস্তা। পল্টুনও তৈরি হয়েছে। নৌ-ঘাটের শেড তৈরি করা হয়েছে।

উদ্বোধনের পর স্থানীয় সুলতানগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা, রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমোডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইডব্লিউটিএ যুগ্ম সচিব মো. সেলিম ফকির।

অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের মায়া নৌঘাটটি মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর মহকুমা শহরের কাছে ভারতীয় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সঙ্গে যুক্ত। ফলে সুলতানগঞ্জ-মায়া পথে নৌবাণিজ্য শুরু হওয়ায় পরিবহন খরচ অনেকাংশে কমে যাবে। এতে রাজশাহীর অর্থনীতি গতিশীল হবে এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।



© দিন পরিবর্তন