logo

গুরুদাসপুরে রঙিন ফুলকপি চাষ করে আব্দুল আলিমের সফলতা

নিজস্ব প্রতিনিধি

Published:08 Feb 2024, 03:42 PM

গুরুদাসপুরে রঙিন ফুলকপি চাষ করে আব্দুল আলিমের সফলতা


গুরুদাসপুর(নাটোর) :
প্রথমবারের মত পরীক্ষা মূলক ভাবে রঙিন হলুদ-বেগুনি ফুলকপি চাষ করে সফলতা পেয়েছেন কৃষক মো. আব্দুল আলিম। শুধু হলুদ-বেগুনি ফুলকপি নয়। তার জমিতে রয়েছে রঙিন বাঁধাকপি, বিষমুক্ত ক্যাপসিকাম, বারি-১২ জাতের রঙিন বেগুনও। অধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় বাজারে এসব সবজির দামও বেশি।

কৃষক আব্দুল আলিমের বাড়ি নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের বিলকাঠোর গ্রামে। সেখানেই মাত্র ১০ কাঠা জমিতে রঙিন হলুদ-বেগুনি ফুলকপি চাষ করেন। ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে এসব সবজি চাষ করে প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার টাকার ফসল উৎপাদন হয়েছে আব্দুল আলিমের। তার বিচিত্র এই সবজি ক্ষেত এলাকায় সাফল্যে সাড়া পড়েছে। এলাকার অনেক কৃষক নতুন আঙ্গিকে এই সবজি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

জানা গেছে, চারা রোপণ থেকে উত্তোলন পর্যন্ত পরিচর্যা, জৈবসারসহ মোট খরচ হয়েছিল মাত্র ২০ হাজার টাকা। চারা রোপণের দুই মাস পর অর্থাৎ ৬০ থেকে ৬৫ দিনের মধ্যে জমি থেকে ফসল উত্তোলন করে বাজারে বিক্রি করে খরচ বাদে তার লাভ হয়েছে প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার টাকার মত। প্রথম বারেই কৃষক আব্দুল আলিমের এমন সফলতা দেখে এখন উৎসাহ পাচ্ছেন এলাকার অন্য কৃষকেরা। এদিকে স্থানীয় বাজারে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এই রঙিন ফুলকপি। পাশাপাশি বাজারেও সাদা ফুল কপির চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এই রঙিন ফুলকপি, অনেকেই কৌতূহল বশত: কিনছেন এই সবজি। সবজি বিক্রেতা থেকে শুরু করে পাইকারি বিক্রেতারাও হন্যে হয়ে খুঁজছেন এই রঙিন ফুলকপি। ফলে এই ফুলকপি চাষাবাদ নিয়ে এখন রঙিন স্বপ্ন দেখছেন স্থানীয় কৃষকেরা।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ কৃষিতে ভিন্নতা আনতে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। তারমধ্যে কৃষক আব্দুল আলিমের সবজি ক্ষেত অন্যতম। কৃষি বিভাগ বলছে, স্বল্প ব্যয়ে বিষমুক্ত উচ্চ ফলনশীল জাতের সবজি চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে কৃষক আব্দুল আলিমের খেতে পরীক্ষামূলক নানা জাতের সবজি চাষ করা হয়েছে। গুরুদাসপুর উপজেলায় এবারই প্রথম পলিনেটের মাধ্যমে বারি-১২ জাতের বেগুন, দুই জাতের রঙিন ফুলকপি, বেগুনি রঙের বাঁধাকপি, উন্নত জাতের মুলা এবং উচ্চ ফলনশীল ক্যাপসিকামের ২ হাজার ২০০ বীজ বপন করেছিলেন কৃষক আব্দুল আলিম। এরপর চারা গজালে প্রক্রিয়ামতো রোপণ করেন। এতে ফলও পেয়েছেন ভালো। ভিটামিন এ, সি, ক্যারোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে এসব সবজিতে।

কৃষক আব্দুল আলিম জানান, নাটোর জেলার মধ্যে তার জমিতেই এই প্রথম রঙিন বিষমুক্তি সবজি চাষ করা হয়েছে। বাজারের সাধারণ টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ক্যাপসিকামের দাম বেশি। তিনি বলেন, চারা রোপণের পর থেকে পরবর্তী ৬০ থেকে ৬৫ দিনের মধ্যেই এসব সবজি বিপণন যোগ্য হয়েছে। তার খেতের রঙিন ফুলকপি এবং বাঁধাকপি এবার আকার ভেদে ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে খুচরা বিক্রি করেছেন।

গুরুদাসপুর পৌর শহরের চাঁচকৈড় বাজারে সবজি বিক্রেতা মোঃ টুটুল প্ররামানিক ও মোঃ এয়ারুল হোসেন বলেন, রঙিন ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন আসায় সাধারণ সবজির চাহিদা কমেছে। দাম বেশি হলেও রঙিন সবজি কিনছেন মানুষ। এ কারণে আব্দুল আলিমের জমিতে গিয়ে তারা এসব সবজি পাইকারি দরে ক্রয় করে বাজারে আনছেন।

গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুনুর রশীদ জানান, রঙিন এসব সবজি চাষে জৈব সারের ব্যবহার হচ্ছে। এ কারণে ক্ষতিকারক রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমছে। তাছাড়া রঙিন ফুলকপিতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাও বারে। রঙিন এসব সবজিতে ২৫ গুণ বেশি ভিটামিন থাকে। পুষ্টিগুণ আর ভিন্ন রঙের কারণে স্থানীয় বাজারে এর প্রচুর চাহিদাও রয়েছে।

 



© দিন পরিবর্তন