নিজস্ব প্রতিনিধি
Published:09 Feb 2024, 02:36 PM
গুরুদাসপুরে রসুনের ক্ষেতে সাথী ফসল তরমুজ ও বাঙ্গির আবাদ
এস,এম ইসাহক আলী, গুরুদাসপুর (নাটোর) :
নাটোরের গুরুদাসপুরে রসুনের ক্ষেতে সাথী ফসল হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তরমুজ ও বাঙ্গি। রসুনের লাভ ছাড়াও বাড়তি এই আবাদ করে বিঘা প্রতি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা লাভ হওয়ায় উপজেলার কৃষকদের দিন দিন আগ্রহ বেড়েই চলছে।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০০১ সাল থেকে উপজেলায় বিনা হালে রসুনের আবাদ শুরু হয়। বিভিন্ন সময় রসুনরে দরপতনে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন এলাকার কৃষকেরা। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সাথি ফসল হিসেবে তরমুজ, বাঙ্গি, মিষ্ঠি কুমড়া, ক্ষীরাসহ মসলাজাতীয় ফসল চাষের পরামর্শ দেওয়া হয় কৃষকদের। এবছর ৫ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে রসুন রসুনের আবাদ হয়েছে। বিপরীতে ৭১৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ, ৯৩০ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি ও ১১৫ হেক্টর জমিতে মিষ্ঠি কুমড়া আবাদ হয়েছে।
খোঁজনিয়ে জানাগেছে, রসুনের বয়স ১ মাস হলেই প্রথম সপ্তাহ হতে রসুনের জমিতে দুই বেডের মাঝে দেড় থেকে দুই হাত দুরে পিট (গাড্ডা) তৈরি করতে হয়। এতে করে বিঘা প্রতি ৫০০ থেকে ৫৫০ টি পিট তৈরি করা হয়। প্রতি পিটে জৈব সার ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে একটি হালকা সেচ দিয়ে ৭ দিন রাখতে হয়। ৭ দিন পর প্রতি পিটে দুইটি করে তরমুজ বীজ বপন করে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য বীজ রোপনের পুর্বে বীজগুলোকে রোদে শুকিয়ে ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখার পর প্রায় ২০ মিনিট অল্প পানিতে বীজগুলোকে দুই হাতের মাধ্যমে চাপ দিয়ে (কছলিয়ে) বীজের পিচ্ছিল পদার্থ অপসারন করতে হয়। অতঃপর বীজ শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে প্রায় ৫০ গ্রাম করে বীজ শুকনো কাপড়ে পেচিয়ে কৃষক/কৃষাণী ২৪ ঘন্টা পর বীজ রোপন করতে হয়। এতে করে বীজের অংকুরোদগম ভাল হয়।
শুক্রবার (৯ ফেব্রয়ারি) গুরুদাসপুর উপজেলার সিধুলি, বিন্নাবাড়ি ও ধারাবারিষা মাঠে গিয়ে দেখা গেছে,- মাঠের পর মাঠ বিনা হালে রসুনের আবাদ হয়েছে। রসুনের চারাগুলো গঁজিয়ে উঠেছে। গজিয়ে ওঠা চারার ফাঁকে ফাঁকে কেউ তরমুজের বীজ বপন করছে। কেউ কেউ আবার গর্তের চার পাশে কাঠি দিয়ে পলিথিন মুড়িয়ে দিচ্ছেন। অনেক মাঠে তরমুজের চারা গজিয়ে উঠেছে। কৃষক ও কৃষক বধুরা তরমুজের চারা পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
সিধুলী গ্রামের কৃষক রোমজান আলী দিন পরিবর্তনকে জানান, প্রতি বছরই ১০ থেকে ১২বিঘা জমিতে বিনা চাষে রসুনের আবাদ করতেন। রসুনের জমিতে বিকল্প ফসলের কথা ভাবতেই পারেননি। প্রতিবেশী একজন কৃষকের দেখাদেখি দুই বছর ধরে রসুনের জমিতে তরমুজের আবাদ শুরু করেন। খরচ বাদেও প্রায় ৫-৬ লাখ টাকা লাভ হয়েছিল। এবার ১০ বিঘা জমিতেই রসুনের সাথী ফসল হিসেবে তরমুজ করেছেন। একই গ্রামের কৃষক বিমল কুমার দিন পরিবর্তনকে জানান, গত প্রায় ৫ বছর ধরে তিনি রসুন আবাদ করেন। কৃষি বিভাগের পরামর্শে তিনি ৪ বিঘা জমিতে রসুনের সাথী ফসল হিসাবে তরমুজের আবাদ শুরু করেন। সেটা ৩ বছর আগের কথা। প্রথম বছরেই তরমুজের দাম পেয়েছেন। খরচ বাদে বিঘা প্রতি তার ৫০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। তাঁরমতে, রসুন ছিল তার বোনাস ফসল। এবছর তিনি ৬ বিঘা জমিতে রসুনের সাথী ফসল তরমুজের আবাদ করেছেন।
চলোনালী গ্রামের কৃষক ফরহাদ আলী দিন পরিবর্তনকে জানান, তিনি ৫ বিঘা জমিতে রসুনের আবাদ করে তিনি অর্থনৈতিক ভাবে স্বচ্ছল হয়েছিলেন। গত বছর কৃষি অফিসের পরামর্শে ২ বিঘা জমিতে সাথী ফসল তরমুজ করে ছিলেন। রসুন ও তরমুজ বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন। তার দেওয়া তথ্যমতে,তরমুজে সার,কিটনাশক,সেচ ,সঠিক ভাবে পাওয়াতে তরমুজ উৎপাদনে তেমন বেগ পেতে হয়নি। রসুনের জমিতে সাথি ফল তরমুজ কৃষকের বাড়তি উপার্জনের আর্শীবাদ বলে মন্তব্য করেন। তাঁদের মত শত শত কৃষক রসুনের জমিতে তরমুজ, বাঙ্গি ও ক্ষীরা চাষ করে আর্থিক ভাবে ভাগ্য বদলে নেমেছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশীদ দিন পরিবর্তনকে জানান, উপজেলায় এবছর ৫ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ হয়েছে। এছাড়াও একই জমিতে তরমুজ ৭১৫ হেক্টও, বাঙ্গী ৯৩০ হেক্টর ও মিষ্ঠি কুমড়া ১১৫ হেক্টর আবাদ করছেন কৃষকরা। এক বিঘা জমিতে ২৫-৩০ মন হারে রসুন উৎপাদন হয়। খরচ বাদ দিয়েও অনেক লাভবান হন কৃষকরা। মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করায় কৃষকরা সাথি ফল তরমুজ,বাঙ্গী ও মিষ্ঠি কুমড়া আবাদ করেছেন। অনেকটা বিনা খরচে একই জমিতে তরমুজ চাষ অধিক লাভজনক হওয়ায় অনেক কৃষকের ভাগ্য বদলেছে।
© দিন পরিবর্তন