নিজস্ব প্রতিনিধি
Published:05 Feb 2024, 01:05 PM
চালের দাম বৃদ্ধির জন্য জেলে যেতে হবে : খাদ্যমন্ত্রী
বগুড়া ব্যুরো :
চালের দাম বৃদ্ধির জন্য করপোরেট, মিল মালিক থেকে খুচরা ব্যবসায়ী সব পক্ষকেই দায়ী করেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। চাল ব্যবসার সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টদের হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, আপনারা যত চালাক আইন তার চেয়ে বেশি চালাক। আইন বসে থাকবে না। ভরা মৌসুমে চালের মূল্য বৃদ্ধির কোন যুক্তি নেই। এখনই সাবধান হয়ে যান। নতুন আইন হচ্ছে। শুধু জরিমানা নয়, জেলে যেতে হতে পারে।
মন্ত্রী রোববার বগুড়া জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে করণীয় নির্ধারণে অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন। বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং খাদ্য অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং বগুড়ার চালকল, আড়ৎ এবং পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। বগুড়া চাল কল মালিক সমিতির সভাপতি, চাল ব্যাবসায়ী সমিতির সভাপতি, বিভিন্ন বাজার কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, বিভিন্ন ব্যবসায়ী কমিটির নেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
খাদ্যমন্ত্রী চালের মিলার ও আড়তদারদের উদ্যেশে বলেন, আপনারা শিয়ালের চেয়ে ধূত। সৎ ভাবে ব্যবসা করেন, মহান আল্লাহ বরকত দিবে। যদি মনে করেন সেবার ধার ধারিনা, তাহলে আইন বসে থাকবে না। মিল থেকে চাল বের করার আগে চালের বস্তায় ধানের জাতের নাম, মূল্য তালিকা এবং উৎপাদনের তারিখ উল্লেখ করতে হবে। এই সরকারের নির্বাচনী ইসতেহারে পণ্যের মূল্য কমানোর কথা বলা হয়েছে। যে কোন মূল্যে পণ্যের দাম কম রাখার ব্যবস্থা করা হবে।
মতবিনিময় চলাকালে চাল ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা চালের মূল্য বৃদ্ধির জন্য একে অপরকে দোষাররোপ করেন। তবে তারা চালের মূল্যবৃদ্ধির জন্য স্পষ্ট কোনো ধারণা দিতে পারেননি।
আলোচনার শুরুতে খুচরা ব্যবসায়ীর পক্ষে কলোনী বাজার মালিক সমিতির সভাপতি নাহিদ ইসলাম বলেন, খুচরা বাজারে ব্যবসায়ীরা মূলত যেখান থেকে চাল সংগ্রহ করেন, সেখানে দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ থাকে না। বরং মিল ব্যবসায়ী যারা আছেন তারা মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। তার কথার সঙ্গে একমত পোষণ করে বগুড়া জেলা চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শাহ মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বগুড়ায় বর্তমানে খুচরা বাজার স্বাভাবিক আছে। দাম যা আছে সেটা আলহামদুলিল্লাহ। মিডিয়াম ও মোটা চাল স্বাভাবিক, তবে চিকন চালটা একটু কম আছে। চিকন চালের দাম বেঁধে দেয়া ছিল ৬২ টাকা। কিন্তু আমরা কিনেছি ৬৬-৬৭ টাকায়। চাল মজুদের সঙ্গে মিল মালিকরা দায়ী না এমন দাবি তুলে জেলা হাস্কিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম দুদু বলেন, আমরা ধান কিনে চাল করি। ধানের বাজার বেশি থাকলে আমাদের করণীয় থাকে না। আমরা যখন কম দামে চাল প্রস্তুত করি, সেই চাল কোথায় যায়। অটোরাইস মিল মালিক গোলাম কিবরিয়া বাহার বলেন, আমরা অটোমিলাররা ধান কিনে চাল প্রস্তুত করি। যখন যে দামে পাই, সেই দামে কেনা হয়। কিন্তু বড় বড় মিল, কোম্পানিরা ধান কেনার সময় যা পায় সব কিনে নেয়। এতে বাজারে হঠাৎ করে ধানের ক্রাইসিস হয়ে যায়।
করপোরেট প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপের বগুড়া মিলের প্রতিনিধি প্রকৌশলী কেতাউর রহমান দাবি করেন, তাদের মিল এখনও পরীক্ষামূলক অবস্থায় আছে। এখনও চাল উৎপাদনের কাজ শুরু করা হয়নি। তবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বগুড়া সদরের মানিকচক এলাকায় নির্মাণাধীন অবস্থায় মেঘনার রাইসমিলে অবৈধ দুই হাজার মেট্রিকটন চাল জব্দ হয়। ওই ঘটনায় একটি মামলাও করেছিল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তর। মতবিনিময় সভায় সেই মামলার অবস্থা জানতে চান জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম। জবাবে কেতাউর রহমান বলেন, মামলা চলমান আছে। খুচরা ব্যবসায়ী ও করপোরেট মিল উভয়কেই দোষ দেন শাজাহানপুর উপজেলা চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন। তিনি বলেন, এখানে খুচরা ব্যবসায়ী যা বলছে তা বাজারের সঙ্গে কোনো মিল নেই। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বগুড়ার শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন জিহাদী আড়তদার এবং মিল মালিকদের বিরুদ্ধে গোপনস্থানে ধান ও চাল মজুদের অভিযোগ উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, অবৈধ মজুদের পাশাপাশি তারা বিক্রির রশিদের লেখা দরের চেয়ে কম দামে বিক্রি করে, ধান চাল বিক্রির টাকা অন্য ব্যবসার হিসাবে জমা রাখছে, যা এক ধরনের মানি লন্ডারিং।
চালের মূল্য বৃদ্ধির জন্য জেলা খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের ভৎর্সনা করেন মন্ত্রী। এ সময় তিনি মাঠ পর্যায়ে খাদ্য কর্মকর্তাদের নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের এবং আগামী ৭ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে অবহিত করার নির্দেশ দেন।
© দিন পরিবর্তন