logo

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে তামাক কোম্পানি

নিজস্ব প্রতিবেদক

Published:23 Aug 2022, 05:36 PM

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে তামাক কোম্পানি


আইন সংশোধন প্রক্রিয়াকেও বাধাগ্রস্থ করতে বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান ও অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে তামাক কোম্পানিগুলো।  এমন অভিযোগ করেছেন তামাক বিরোধীরা।  তারা বলছেন, তামাক কোম্পানিগুলো এতদিন আইন বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে যেভাবে বাধাগ্রস্ত করছিলো সেভাবেই আইন সংশোধন প্রক্রিয়াকেও বাধাগ্রস্থ করছে তামাক কোম্পানিগুলো ।  

আজ সোমবার বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা) ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্টের সম্মিলিত উদ্যোগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে “তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন ও সংশোধনের বর্তমান অবস্থা ও করণীয় বিষয়ক” গণমাধ্যমের সাথে একটি মতবিনিময় সভা বক্তারা এসব কথা বলেন। 

তারা জানান,  তামাক ব্যবহার মানবদেহে সৃষ্ট বিভিন্ন মরণব্যাধি অন্যতম প্রধান কারণ।  তামাকের কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে।  এর ব্যবহার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে গ্রহণ করছে নানামুখী পরিকল্পনা ও কর্মসূচি।  কিন্তু তামাক কোম্পানীগুলো সার্বিক তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে।  সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের মাধ্যমে যুগোপযোগী করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।  তামাক কোম্পানিগুলো এতদিন আইন বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে যেভাবে বাধাগ্রস্ত করছিলো সেভাবেই আইন সংশোধন প্রক্রিয়াকেও বাধাগ্রস্থ করতে বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান ও অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।   

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা)’র উপদেষ্টা আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম হাসিব এর  সঞ্চালনায়  সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ডিআরইউ  সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু, আলোচক হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস এর কান্ট্রি ম্যানেজার নাসির উদ্দিন শেখ, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ, প্রত্যাশা সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক বিল্লাল হোসেন, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী।   সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্টের কর্মসূচি প্রধান সৈয়দা অনন্যা রহমান।  

সভায় আলোচকরা বলেন, তামাক কোম্পানি আইনটি প্রণয়নে পর থেকেই বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।   বর্তমানে কোম্পানিগুলোর আইন সংশোধন বিষয়ে নেতিবাচক প্রচারণার মূল উদ্দেশ্য তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা।  

শুধুমাত্র আইন সংশোধন নয় তামাক নিয়ন্ত্রণের স্বপক্ষে প্রায় সকল নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রেই তামাক কোম্পানিগুলোর হস্তক্ষেপের দৃষ্টান্ত দৃশ্যমান।   অতি সম্প্রতি স্থানীয় সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রন আইন বাস্তবায়ন নির্দেশিকা স্থগিত করার প্রচেষ্টা, তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধিতে হস্তক্ষেপ, আইন সংশোধন প্রক্রিয়াকে বাঁধাগ্রস্ত করা তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।  
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনটি যুগোপযোগী করার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি খসড়া প্রস্তাব পেশ করা হয়।   এমতাবস্থায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে তামাক কোম্পানিগুলো সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের প্রচেষ্টাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য নানা ধরনের বিভ্রান্তকর তথ্য প্রচার করছে।   তামাক কোম্পানির  ভাষ্যমতে ভেপিং বা ইসিগারেট নিষিদ্ধ করা হলে তামাক ত্যাগের প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হবে।   ভেপিং বা ইলেকট্রনিক সিগারেট জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।   বর্তমানে সারা বিশ্বের প্রায় ৪০টির বেশি দেশ ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করেছে।   পাশ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কাতেও ই-সিগারেট নিষিদ্ধ।  

বক্তারা বলেন, কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে “খুচরা সিগারেট বিক্রয় বন্ধ হলে দরিদ্ররা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাবে” এ ধরনের বিভ্রান্তকর প্রচারণা চালানো হচ্ছে।   বাংলাদেশে অনেক পণ্য খোলা বা খুচরা বিক্রি বন্ধ এতে করে কোন সমস্যা তৈরি হচ্ছে না।  সুতরাং সিগারেটের ক্ষেত্রেও এ ধরনের প্রচারণা অযৌক্তিক।  বাজারে খুচরা সিগারেট বিক্রয় হওয়ায় খুব সহজেই তরুণ ও নতুন গ্রাহক তৈরি এবং প্যাকেটের গায়ে স্বাস্থ্য সর্তকবাণী প্রদানের উদ্দেশ্য ব্যহত হয়।   সংশোধিত আইনের খসড়া প্রস্তাবনায় লাইসেন্সিং ব্যবস্থা নিয়ে কোম্পানিগুলো অপপ্রচার শুরু হয়েছে।   প্রকৃত সত্য হচ্ছে লাইসেন্সিং ব্যবস্থা চালু হলে সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা শক্তিশালী হবে এবং রাজস্ব ফাঁকি রোধ করা সহজ হবে।  এছাড়া, তামাকজাত দ্রব্যের অনিয়ন্ত্রিত বিক্রয় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।  ফলশ্রুতিতে এর ব্যবহার খুব দ্রুতই কমে আসবে। 
সভায় বক্তারা তামাক নিয়ন্ত্রণে কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দ্রুত তামাক কোম্পানি থেকে সরকারের শেয়ার প্রত্যাহার, এফসিটিসি এর আর্টিক্যাল ৫.৩ অনুসারে কোড অফ কন্ডাক্ট প্রণয়ন, সকল ধরনের রাষ্ট্রিয় পুরুস্কারের তালিকা থেকে তামাক কোম্পানির নাম বাদ দেয়া এবং তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যরত সংগঠনগুলোকে আর্থিক বরাদ্দের মাধ্যমে মনিটরিংয়ে যুক্ত করার জোর দাবি জানান।  



© দিন পরিবর্তন