নিজস্ব প্রতিবেদক
Published:02 Aug 2022, 07:03 PM
তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর
ভারিবর্ষণ ও উজানের ঢলে নীলফামারীর ডিমলায় চরখড়িবাড়ি এলাকার তিস্তানদীর বাম তীরে দেড় কিলোমিটার বালুর বাঁধের ১০০ মিটার বিলীন গেছে। তলিয়ে গেছে চরের প্রায় দেড় শতাধিক বিঘার আমন ধান। এ ছাড়া নদীর ডান তীরের প্রধান বাঁধঘেঁষে নদীর পানি প্রবাহিত হওয়ায় সেখানকার ৫০ বিঘা জমির আমন ক্ষেত পানি ঢুকেছে। এতে আতঙ্কিত এলাকাবাসী।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ পাঠক (পানি পরিমাপক) নূরুল ইসলাম জানান, গতকাল সকাল থেকে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার (৫২.৬০) দুই সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। যা বেলা তিনটায় বিপৎসীমা অতিক্রম করে ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তানদীর পানি সামলাতে ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রেখেছে পানি উন্নয়ন বোড (পাউবো)।
এদিকে, উজানের ঢল অব্যাহত থাকায় পানি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় তিস্তার চর এলাকাগুলো প্লাবিত হতে শুরু করেছে। ডিমলা উপজেলার চরখড়িবাড়ি এলাকাবাসী জানান, বামতীরে যে বালির বাঁধটি রয়েছে সেটি তারা স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি করেছিল ৫ বছর আগে। ওই বাঁধ টিকিয়ে রাখার জন্য ইউপি চেয়ারমান ময়নুল হক বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কয়েক লাখ টাকা ব্যয় করে।
ভেন্ডাবাড়ি এলাকার বানভাসি জলিল মিয়া (৪৮) জানিয়েছেন, নদীভাঙনে ভিটেমাটি সব বিলীন হয়ে যাচ্ছে। চোখের সামনে নদীর পানির স্রোত সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেলেও কিছুই করার নাই। একই এলাকার ভিটেমাটি আর ঘরবাড়ি হারিয়ে মনজিলা বেগম জানান, আমার একটা ঘর ছাড়া আর কিছুই নিয়া আসতে পারি নাই। স্রোতে সব ভেসে গেল।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কয়েকদিন ধরে প্রভাবশালীরা ওই বালির বাঁধ ঘিরে বোমা মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করায় উজানের ঢলে বাঁধটির ১০০ মিটার বিলিন হলো। তাদের চিহ্নিত করে বোমা মেশিন জব্দ ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেন। এ ব্যাপারে, টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মঈনুল হক জানান, উজানের ঢল ও নদীর পানি বাম তীরে চাপ বেশি থাকায় বালির বাঁধটি বিলীন হয়েছে। অপরদিকে, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিমলার ২২টি চর প্লাবিত হতে শুরু করেছে।
পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খাঁন জানান, তার এলাকার প্রায় ৭০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। খগাখড়িবাড়ি এলাকায় সাড়ে ৩ শত পরিবার, খালিশাচাপানী এলাকায় ৪০০ পরিবার, ঝুনাগাছচাপানী এলাকার সাড়ে ৩০০ পরিবারের বসতভিটা তলিয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। বিশেষ করে খালিশাচাপানী এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে।
নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা জানান, সকাল থেকে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার (৫২.৬০) দুই সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। যা বেলা তিনটায় বিপৎসীমা অতিক্রম করে ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে, বন্যার পানি সামাল দিতে ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রেখেছে পানি উন্নয়ন বোড (পাউবো)।
উল্লেখ্য, ভারতীয় অংশে তিস্তা নদীর ওয়েব সাইড থেকে জানা যায়, গতকাল ভোর ৪টা থেকে তিস্তা নদীর পানি দো-মহনী পয়েন্টে বিপৎসীমা (৮৫.৯৫) অতিক্রম করেছে। যা সকাল ৭টায় বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার (৮৬.১৮) উপর দিয়ে বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসে। তবে দুপুর ২টায় দো-মহনী পয়েন্টে তিস্তার পানি কমে বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
© দিন পরিবর্তন