নিজস্ব প্রতিবেদক
Published:22 Jul 2022, 05:14 PM
তীব্র গরমে অসুস্থ হচ্ছে শিশুরা
রীষ্মের প্রচণ্ড গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ। সেইসাথে চলছে লোডশেডিং। লোডশেডিং আর প্রচণ্ড গরমে শিশুরাই বেশি অসুস্থ হচ্ছে। বিশেষ করে প্রাণচঞ্চল শিশুরা সহজেই রোগে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে রয়েছে জ্বর, সর্দি কাশি, ডায়রিয়া, সামার বয়েল, ঘামাচি ইত্যাদি। সাবধানতা অবলম্বন করে চললে সহজেই এসব রোগ থেকে শিশুদের রক্ষা করা যাবে বলে মনে করছেন শিশু বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, সম্প্রতি শিশু হাসপাতালে বহির্বিভাগে দিনে ৮শ’র বেশি শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। আর ভর্তি আছে ৬৭৩ জন শিশু। বহির্বিভাগে শিশু রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। হাসপাতালে ভর্তির জন্য সিট খালি পাওয়া কষ্টকর, তাই সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরী। নইলে স্ট্রোকের মতো ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
গরমে শিশুর বেশি যত্ন নেয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ডা. ইশরাত জাহান জোনাক। তিনি বলেন, চলছে গ্রীষ্ম মৌসুম। গরম সবার জন্যই কষ্টকর। তবে শিশুরা খুব বেশি স্পর্শকাতর বলে অনেকে গরম আবহাওয়ায় সহজে খাপ খাওয়াতে পারে না। ফলে জ্বর, পেট খারাপ, সর্দি, কাশিসহ নানা শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়। এ কারণে গরমে ছোটদের বিশেষ যত্ন নেয়া খুবই প্রয়োজন।
তিনি বলেন, অতিরিক্ত গরমে শিশুদের অতিরিক্ত ঘেমে শিশুরা পানিশূন্যতায় ভুগতে পারে। শিশুদের প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যেতে পারে। জ্বর, বমি, ডায়রিয়ার আশঙ্কা থাকে। চামড়ায় ঘামাচি হয়। বেশি সময় ডায়াপার পরে থাকলেও এ সমস্যা হতে পারে।
ছয় বছরের শিশু রামিতা তাবাসরুম রাফা। রাজধানীর পূর্ব গোড়ানে বসবাসকারী স্কুল শিক্ষিকা নাসরিনের মেয়ে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতির সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপরই তার প্রচণ্ড জ্বর উঠেছে। তাৎক্ষণিকভাবে পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে জ্বরের ওষুধ খাওয়ানো হয়। জ্বরের সঙ্গে তার সমস্ত শরীরে ব্যথা। রাফার মতো ঘরে ঘরে বহু শিশু ঠান্ডা ও জ্বরে অসুস্থ হচ্ছে।
এ ব্যাপারে শিশু বিশেষজ্ঞরা জানান, দীর্ঘদিন পর হঠাৎ করে বিদ্যুতের লোডশেডিং ও প্রচণ্ড গরমে শিশুরা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। রাফার মতো বহু শিশু এখন প্রতিদিন অসুস্থ হচ্ছে। অনেকেই বাসাবাড়িতে থেকে চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আবার অনেকের হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। এ নিয়ে ঘরে ঘরে শিশুদের মায়েরা টেনশনে আছেন। তাদের মধ্যে বাড়ছে অস্থিরতা।
গত কয়েকদিন শিশু রোগী বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ডা. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি জানান, আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগ শিশু ঠান্ডা, কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত। হাসপাতালে বেড খালি না থাকলেও বহির্বিভাগে শিশুদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এখন প্রতিদিন শিশু রোগী বাড়ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। অনেক শিশু, নিউমোনিয়া ও জন্ডিসে আক্রান্ত বলে তিনি জানান। তিনি আরো জানান, শিশুদের চিকিৎসার সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন।
এদিকে প্রচণ্ড গরম, লোডশেডিংয়ের মধ্যেও বাতাসের তীব্রতা নেই বলে জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. দেবব্রত বনিক। তিনি জানান, বিদ্যুৎ না থাকলে শিশুরা গরমে ঘামতে থাকে। গরম ও ঠান্ডা লেগে তারা বেশি অসুস্থ হয়। এজন্য ঘরে বিকল্প হিসেবে শিশুদের হাত পাখা দিয়ে বাতাস করা বা ঘরের বাইরে বাতাস আছে এমন স্থানে নিয়ে বসানোর পরামর্শ দেন তিনি। তাপমাত্রার সমস্যার কারণে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়। তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বলে ডা. দেবব্রত বণিক জানান।
এছাড়া মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন জানান, এ গরমে শিশু ও বয়স্করা বেশি অসুস্থ হচ্ছেন। লোডশেডিংয়ের সময় অনেক ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক বাতাসও ঘরে না থাকলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। তাই শিশুদের পানি ও স্বাভাবিক খাবার খাওয়াতে তিনি পরামর্শ দেন।
কিশোর নামে এক শিশুর অভিভাবক অমরেশ রায় বলেন, শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত ঘরে ঘরে শিশু ও বয়স্করা গরমে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। তার মতে, শিশুদের অসুস্থতার সুযোগে এখন ওষুধের দোকানে শিশুর জ্বরের ওষুধ নাপা সিরাপসহ অন্য ওষুধের দামও বাড়ছে বলে অভিযোগ করেন। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ওষুধের দোকানে জ্বরের ওষুধের সংকটের কথা বলে দাম বেশি নেয়া হচ্ছে। আবার অনেকেই বলছে দাম কিছুটা বাড়ছে।
এ বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তারা ফোন রিসিভ না করায় তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, লোডশেডিংয়ের কারণে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছাড়া প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে রোগীদের কিছুটা সমস্যা হবে। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে অপারেশন থিয়েটারে কিছুটা সমস্যা হতে পারে বলে অনেকেই মন্তব্য করেন।
এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, লোডশেডিংয়ের সমস্যা ও বিদ্যুৎ সংকট কাটিয়ে উঠতে ভার্সিটিতে ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহারে সবাইকে আরও সচেতন ও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
© দিন পরিবর্তন