নিজস্ব প্রতিনিধি
Published:22 Feb 2024, 05:19 PM
তেঁতুলিয়ায় ফের হাতি আতঙ্ক, সতর্কতায় মাইকিং
পঞ্চগড় :
দুই হাতি অনুপ্রবেশের একদিন পর আবার হাতি আতঙ্ক তৈরি হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাত আড়াইটার সময় থেকে তেঁতুলিয়া উপজেলা সদরের তেলিপাড়াসহ সীমান্ত ঘেষা গ্রামগুলোতে ভারতীয় বন্য হাতি আসার খবর নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মাইকিংয়ের মাধ্যমে সতর্ক বার্তা প্রচার করতে দেখা গেছে।
প্রচার মাইকিংয়ে বলা হয়, তেঁতুলিয়ার সদরের পুরাতন বাজার হতে দক্ষিণে-পশ্চিমে হাফতিয়াছ (ভারত) সীমান্তবর্তী ফরেস্ট এলাকায় ভারতীয় বন্য হাতি অনুপ্রবেশ করেছে। যেকোন সময় বাংলাদেশের লোকালয়ে প্রবেশ করে জানমালের ক্ষতি করতে পারে। তাই অতি উৎসাহী হয়ে হাতি দেখার নামে কেউ অযথা সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থান করবেন না। সীমান্তবর্তী এলাকার জনসাধারণকে সাবধানতা অবলম্বনপূর্বক নিরাপদে থাকার জন্য আহবান করা হলো’।
সীমান্তে ফের হাতি আতঙ্কের বিষয়টি জানতে সীমান্ত প্রবাহিত মহানন্দা নদীর তীরস্থ তেঁতুলিয়া পুরাতন বাজার ও দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতের হাফতিয়াগছ সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভারতীয় বনবিভাগ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে (বিএসএফ) ফরেস্ট এলাকায় অবস্থান নিতে দেখা গেছে। তারা সকাল থেকে অবস্থান নিয়েছেন বলে জানা যায়। এ সময় মহানন্দা নদীর তীরস্থ সীমান্ত এলাকায় শতাধিকের বেশি বাংলাদেশিদের হাতি দেখতে জড়ো হতে দেখা গেছে। তাদের সাথে কথা বললে, তারা হাতি দেখেন নি বলে জানান। তবে হাতি রাতে প্রবেশ করেছে বলে জানান। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে বলে জানা যায়।
তেঁতুলিয়া সদর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ করিম সিদ্দিকী জানান, রাতে সদরের তেলিপাড়া ও দক্ষিণ-পশ্চিম হাফতিয়া ফরেস্ট এলাকায় দুটি ভারতীয় বন্য হাতি প্রবেশ করার কারণে আমরা সীমান্ত বসবাসকারীদের সতর্কতা অবলম্বন করে নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে। আর কেউ যাতে অতি উৎসাহিত হয়ে হাতি দেখতে ওই সীমান্ত এলাকায় গিয়ে অবস্থান না করে সে বিষয়ে একটি প্রচার মাইকিং করা হচ্ছে। বিষয়টি বিজিবি, পুলিশকে জানানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফজলে রাব্বী বলেন, রাতে হাতি আসার খবরে সীমান্তে সতর্কতা প্রদান করা হয়। এ জন্য স্থানীয়রা মশাল জ্বালায় যাতে করে ভারত থেকে বন্য হাতি বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে। আর এলাকায় সীমান্তে বসবাসকারী জনসাধারণকে সতর্ক ও নিরাপদে থাকতে মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রশাসনিকভাবে জোরদার নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে একদিন আগে ২০ ফেব্রুয়ারিতে রওশনপুর বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকার সীমান্ত পিলার ৭৩৫/২ এস এর মধ্যবর্তী ইসলামবাগ এলাকা দিয়ে ২টি ভারতীয় বন্য হাতি বাংলাদেশে অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। পরে হাতি দুটি তিরনইহাট এলাকা হয়ে গোয়ালগছ বিওপির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্তে কাশিমগঞ্জ এলাকায় এসে অবস্থান নিয়ে বেপরোয়া হয়ে কিছু বাড়ি ঘরে সামান্য ভাংচুর করে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের নিরাপত্তার স্বার্থে বিজিবি, থানা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। অনুপ্রবেশ করা হাতি দুটিকে বিরক্ত না করতে তাদেরকে সরিয়ে দেয়া হয়।
পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিজিবি সদর দপ্তরের নির্দেশনায় বিকেল ৪টায় কাশিমগঞ্জ সীমান্ত এলাকার ৭৩০ পিলারে বাংলাদেশ ও ভারতীয় বনবিভাগের প্রয়োজনীয় সমন্বয় সাধনের জন্য পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পতাকা বৈঠকে ভারত হতে বাংলাদেশে আসা হাতি দুটি ভারতে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য বাংলাদেশি বনবিভাগের সদস্যদের সাথে ভারতীয় বনবিভাগ বিভাগের সদস্যদের সাথে প্রয়োজনীয় আলোচনা হয়। পরে সন্ধ্যার দিকে বাংলাবান্ধা ইউপির অন্তর্গত ১৮ বিজিবি গোয়ালগছ ক্যাম্পের বিপরীতে ৭৩০ এর নিকটবর্তী বিএসএফ ব্যাটালিয়নের ফাঁসিদেওয়া ক্যাম্প এলাকা দিয়ে নদী পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করে হাতি দুটি। ওই ঘটনায় নুরুজ্জামান (২৫) নামের এক বাক প্রতিবন্ধী মারা যায়।
© দিন পরিবর্তন