logo

দুই জেলার সীমান্তে দাপুটে অপহরণ চক্র, নারীসঙ্গ প্রলোভনে মুক্তিপন

নিজস্ব প্রতিনিধি

Published:07 Mar 2024, 02:53 PM

দুই জেলার সীমান্তে দাপুটে অপহরণ চক্র, নারীসঙ্গ প্রলোভনে মুক্তিপন


বগুড়া ব্যুরো :
নারীসঙ্গ প্রলোভনে যুবকদের ডেনে নিয়ে অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে ব্লাকমেইল, ছিনতাই ও আটকে রেখে নির্যাতনের পর মুক্তিপন আদায় করে সংঘবদ্ধ চক্র। বিদেশ ফেরত প্রবাসীসহ ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে বগুড়া ও নওগাঁ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অপহরণ চক্রের সদস্যরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। দুবাইফেরত এক যুবককে অপহরণ করে নির্যাতনের সময় স্থানীয় জনতা দুইজনকে হাতেনাতে আটকের পর পুলিশে সোপর্দ করেছে।

গত বুধবার আটককৃতদের অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে নওগাঁর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। অপহরণ চক্রের সদস্যরা হলো- বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার গুলিয়া কৃষ্ণপুর গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে আব্দুল করিম (৩২) এবং একই গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে রিপন আহমেদ (২৮)।

জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা জানান, নওগাঁ জেলার শেষ সীমান্ত আর বগুড়া জেলার সীমান্তের শুরুতে অপহরণ ও ছিনতাই চক্রের অবস্থান। বিভিন্ন এলাকা থেকে মুখে টেপ লাগিয়ে অপহরণ করে নন্দীগ্রাম উপজেলার গুলিয়া কৃষ্ণপুর গ্রামে আটকে রেখে নির্যাতন ও মুক্তিপন আদায় করতো চক্রের সদস্যরা। প্রত্যন্ত গ্রামের রাস্তায় সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে ছিনতাইয়ের সঙ্গেও তারা জড়িত। দুই জেলার সীমান্তে গুলিয়া বাজার, নাগরনদী ব্রিজ ও চয়েনের মোড় এলাকায় দিনে-রাতে ঘুরে বেড়ায় অপরাধীরা। তাদের দাপটে এলাকাবাসীও অতিষ্ঠ। সন্ধ্যার পর সন্তানরা ঘরের বাইরে বের হলেই অপহরণ ও ছিনতাই শঙ্কায় থাকেন অভিভাবকরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জনপ্রতিনিধি বলেন, স্বাধীন দেশে এ যেন অনিরাপদ জনপদ। কতিপয় রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকে এইসব অপরাধী। তাঁরা নারীসঙ্গ প্রলোভনে কিশোর ও যুবকদের ডেকে নিয়ে যায়। নির্দিষ্ট বাড়িতে আটকে রেখে জোরপূর্বক নারীর সঙ্গে অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ধারণ করে। এরপর শুরু হয় ব্ল্যাকমেইল। মোটাঅংকের টাকা আদায় করাসহ ব্যাংক চেক ও নন-জুড়িশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে ছেড়ে দেওয়া হয়।

স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, গত সোমবার রাতে নওগাঁর রানীনগর উপজেলার ওপর-তালিমপুর এলাকা থেকে দুবাইফেরত আজাদুল ইসলাম রঞ্জু (৪৩) নামের যুবককে অপহরণ করা হয়। তিনি ওই গ্রামের মৃত মাজেদ আলীর ছেলে। দুবাইফেরত যুবককে নন্দীগ্রামের গুলিয়া কৃষ্ণপুর এলাকার একটি বাড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন করে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবিতে পাঁচটি নন-জুড়িশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয় অপহরণকারীরা। বিষয়টি টেরপেয়ে রাত ১২টার দিকে স্থানীয় শতাধিক জনতা মিলে ওই বাড়িতে ঢুকে অপহৃত যুবককে উদ্ধার ও হাতেনাতে অপহরণ চক্রের দুই সদস্যকে আটক করে।

নন্দীগ্রাম থানার ওসি আজমগীর হোসাইন আজম জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আব্দুল করিম ও রিপন আহমেদ নামের দুইজনকে আটক করে থানায় আনা হয়। অপহরণের ঘটনাস্থল নওগাঁর রানীনগর হওয়ায় আটককৃতদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

রানীনগর থানার ওসি আবু ওবায়েদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, দুবাইফেরত আজাদুলকে অপহরণ করে একটি বাড়িতে আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি করার ঘটনা টেরপেয়ে স্থানীয় লোকজন পুলিশের সহায়তায় তাঁকে উদ্ধারসহ দুইজনকে হাতেনাতে আটক করে। পরে আইনি প্রক্রিয়া শেষে গত মঙ্গলবার রাতে নন্দীগ্রাম থানা পুলিশ আমাদের কাছে আটক ব্যক্তিদের হস্তান্তর করলে থানায় দায়েরকৃত মামলায় আসামীদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

ওসি আবু ওবায়েদ জানান, অপহরণ চক্রের সঙ্গে আরও যাঁরা জড়িত, তাঁদেরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এর আগে মঙ্গলবার রাতে রানীনগর উপজেলার ওপর-তালিমপুর গ্রামের আজাদুল ইসলাম রঞ্জু বাদী হয়ে আটক দুইজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও চারজনকে আসামী করে থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেছেন।

অপহরণের পর উদ্ধার হওয়া আজাদুল ইসলাম বলেন, আমি দীর্ঘ ১৬ বছর দুবাই ছিলাম। তিন বছর আগে দেশে ফিরেছি। অপহরণকারীরা পাশের গ্রামের বাসিন্দা। মুখ পরিচিত হলেও তাদের নাম-ঠিকানা বা তাদের সম্পর্কে কিছু জানা ছিল না। সোমবার রাত ১০টার দিকে স্কুল মাঠে তাদের সঙ্গে দেখা হয়। তাদের অনুরোধে একসঙ্গে চা খেয়ে বাড়ি ফেরার সময় তাঁরা আমাকে জোরপূর্বক মোটরসাইকেলে তোলে। মুখে টেপ লাগিয়ে নন্দীগ্রামের গুলিয়া কৃষ্ণপুরে অপহরণকারী রিপনের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে ঘরের মধ্যে আটকে রেখে মারপিট ও গলায় চাকু ধরে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।

 

 



© দিন পরিবর্তন