নিজস্ব প্রতিনিধি
Published:02 Mar 2024, 04:09 PM
দুই সংস্থা তদন্তের দেড় বছর পর মামলার আর্জিতে সময় পরিবর্তন
নরসিংদী (সদর) প্রতিনিধি :
প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নরসিংদীর পলাশ দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল আদালতে করা সি,আর মো: নং ১০/২২ইং দুই সংস্থা তদন্তের প্রায় দেড় বছর পর মামলার মূল আর্জিতে ঘটনার সময় পরিবর্তন করে বিবাদী পক্ষের নিরীহদের হয়রানি ও ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিকার চেয়ে ঘটনার তদন্ত করে জড়িত দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়ে গেল ১২ ফেব্রুয়ারি ওই মামলার শুনানিতে বিবাদী পক্ষের কামরুল নামে এক ভুক্তভোগী উক্ত আদালতে লিখিত দরখাস্ত জানিয়েছেন।
লিখিত দরখাস্তে জানা যায়, ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল নরসিংদী পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের ইসলামপাড়া গ্রামের ফরিদ আহম্মেদের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বাদি হয়ে দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল আদালতে সি,আর ১০/২২ইং মোকদ্দমাটি আদালতে দাখিল করার পর বিজ্ঞ আদালত পলাশ থানাকে তদন্তের নির্দেশ দিলে তদন্ত কর্মকর্তা যথা সময়ে এম- সির ব্যাখ্যাসহ তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন। কিন্তু বাদীপক্ষ পক্ষ তাঁতে অসন্তুষ্টি জানালে আদালত পুনরায় উক্ত মামলাটি সিআইডি নরসিংদী কে তদন্তের নির্দেশ দেন। সিআইডি দীর্ঘ সময় তদন্তের পর বিভিন্ন ডকুমেন্টের সাথে বাদীর করা মামলার কপি সংযুক্তি করে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করেন। তাতেও বাদী সন্তুষ্ট না হলে বিজ্ঞ আদালত ডিবি পুলিশ নরসিংদীকে পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন।
কিন্তু আদালত থেকে ডিবি পুলিশের কাছে পাঠানো মামলার কপির সাথে আগের তদন্ত সংস্থা গুলোর কাছে পাঠানো মামলার কপিতে ঘটনার সময় দুই ঘন্টা গড়মিল রয়েছে । শুধু তাই নয়, বে- আইনি ভাবে সি,আর মামলার মূল আর্জিতে ঘটনার সময় কাটাকাটি ও ঘষা মাজা করে বাদীর আগের দেওয়া সময় রাত ১০.০০ টা থেকে ১.০০ টা পরিবর্তন করে রাত ৮.০০ টা থেকে ১১.০০ টা বানানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। ন্যায় বিচারের স্বার্থে বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক তদন্তপূর্বক জড়িত দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা দাবি জানানো হয় লিখিত দরখাস্তে ।
এ বিষয়ে, এই মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা পলাশ থানার তৎকালীন ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, আদালতে নির্দেশে সি,আর মামলা ১০/২২ মামলাটি তদন্ত করার দায়িত্ব পেলে মামলার কপিতে ঘটনার সময় রাত ১০.০০ থেকে রাত ১.০০ টা দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে তদন্ত করে একাধিক নিরপেক্ষ সাক্ষী প্রমাণের ভিত্তিতে এম, সির ব্যাখ্যাসহ বিজ্ঞ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
এ মামলার দ্বিতীয় তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি নরসিংদী ইন্সপেক্টর মিজানুর রহমান জানান, বিজ্ঞ আদালত থেকে পাঠানো মামলার কপিতে ঘটনার সময় রাত ১০.০০ টা থেকে ১.০০ টা দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে সরেজমিন তদন্তে করে বাদীর মানিত ও নিরপেক্ষ সাক্ষীদের জবানবন্দী ও বিভিন্ন তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে এম,সির ব্যাখাসহ পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন বিজ্ঞ আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।
এ মামলার বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা নরসিংদী ডিবি পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর লিটন কুমার সাহা জানান, আদালতের নির্দেশে সি,আর ১০/২২ইং মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছি। মামলার কপিতে ঘটনার সময় কাটাকাটি ঘষামাজা ও ইনিশিয়াল স্বাক্ষর দেওয়া। ঘটনার সময়, রাত ৮.০০ টা থেকে ১১.০০ টা দেওয়া হয়েছে । কিন্তু এর আগে এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার দের কাছে পাঠানো মামলার কপিতে ঘটনা রাত ১০.০০ থেকে ১.০০ টা দেওয়া হয়েছিল বলে জানা যায় । মামলার তদন্ত চলছে, তদন্ত শেষে সঠিক প্রতিবেদন যথা সময়ে বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হবে।
এ বিষয়ে এই মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী সাবরিনা অপি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান, কি না কি হইছে, কেমনে কি হইছে বলতে পারতেছি না। মামলার আরজির ভিতরে ঠিক আছে কিনা এটা হচ্ছে বিষয়। ফটোকপিতে কোন একটা জামেলা হয়েছে ।
এ বিষয়ে দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল আদালতের পেশকার মতিন জানান, এই বিষয়টা নিয়ে গত তারিখে আদালতে শুনানি হয়েছে। বিষয়টা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নলেজে আছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তে যা পাবে তা তিনি দাখিল করবেন।
নরসিংদী জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম রিপন বলেন, কোন ক্রিমিনাল মামলা আদালত গ্রহণ করার পর থেকে ওই মামলার আর্জিতে কেউ বেআইনিভাবে ঘষামাজা কাটাকাটি করেতে পারে না। এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ । আদালত খুঁজে বের করুক কারা এ কাজের সাথে জড়িত।
নরসিংদী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট কাজী নাজমুল ইসলাম বলেন, মামলার আরজিতে রেকর্ড টেম্পারিং করা অপরাধ, মামলার আরজি সাধারণত পেশকারের দায়িত্বে থাকে। তারা খুঁজে বের করুক এটা কারা করেছে। এটা অবশ্যই একটা ফৌজদারি অপরাধ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাদীপক্ষ মামলায় শুরুতে ঘটনার যে সময় দিয়েছিলেন তার প্রায় আড়াই ঘন্টা আগে রাত ৭.৩০ মিনিটে দিকে কালিগঞ্জ থেকে আসার পথে ডাঙ্গা ইসলামপাড়া বাজারের পশ্চিম পাশে বিবাদী পক্ষের দুই ব্যবসায়ী সহ পাঁচজনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে টাকা লুটের অভিযোগ উঠে সি,আর মামলার মামলার বাদী সাবিনা ইয়াছমিনের স্বামী ফরিদ, তার ছেলে অভি, তার চাচাতো ভাসুর হুজুর আলীসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে।
ওই ঘটনায় বিবাদী পক্ষের কামরুল বাদি হয়ে পলাশ থানায় অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে অভিযোগটি আমলে নিয়ে এটি মামলা হিসাবে রেকর্ড ভুক্ত হয়। যার পলাশ থানা মামলা নং: ০১, তারিখ ৪-০৪-২০২২ ইং। পরবর্তীতে ওই মামলাটি নরসিংদী ডিবি পুলিশকে তদন্তের দায়িত্ব দিলে তৎকালীন ডিবি পুলিশ মোট ১১ জনকে অভিযুক্ত করে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দায়ের করেন। যার মধ্যে ১০/২২ইং মামলার বাদী সাবিনা ইয়াসমিনের স্বামী ফরিদ, তার ছেলে অভি, তার ভাসুর হুজুর আলী, হুজুর আলীর ছেলে শান্ত অন্যতম। বর্তমানে ওই মামলাটি নরসিংদী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এসব ঘটনা ফলাও করে তৎকালীন দেশের বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার একাধিক সংবাদ ও প্রকাশিত হয়।
মূলত ১০/২২ইং মামলার বাদী তার মামলার এজাহারে ঘটনার যে সময় দিয়েছেন ওই সময়ে মামলার অধিকাংশ বিবাদীরাই হাসপাতালে ভর্তি, কিছু বিবাদী আহতদে সাথে হাসপাতালে চিকিৎসা কাজে সহযোগিতা করা ও তিনজন বিবাদী একে খান কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। থানা পুলিশ ও আগের তদন্ত কারী ডিবি নরসিংদী এবং সিআইডির তদন্তে এসব তথ্য উঠে এসেছে । এসব ঘটনার পর বিস্তারিত প্রতিবেদন বিজ্ঞ আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে ।
এ মামলার বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন ও তদন্তে ব্যাঘাত ঘটিয়ে তদন্তের মোড় অন্যদিকে প্রভাবিত করতে সি,আর ১০/২২ ইং মামলার আর্জিতে নতুন করে ঘটনার সময় কাটাকাটি ও ঘষামাজা করে সময় পরিবর্তনের করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে । বিজ্ঞ আদালত তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে দাবী জানিয়েছেন নিরঅপরাধ বিবাদীরা ।
© দিন পরিবর্তন