logo

দুশ্চিন্তায় সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের প্রায় ৩ লাখ কৃষক

নিজস্ব প্রতিনিধি

Published:23 Jan 2024, 12:32 PM

দুশ্চিন্তায় সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের প্রায় ৩ লাখ কৃষক


সুনামগঞ্জ :
চাষাবাদে খরচ বাড়ায় চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলার হাওরাঞ্চলের প্রায় তিন লাখ কৃষক। বিশেষ করে সার, বীজ ও কীটনাশক, শ্রমিকের মজুরি, বিদ্যুৎ, ডিজেলসহ সব কিছুর দাম বেড়েছে। এতে বোরো চাষাবাদের খরচও বেড়েছে কৃষকদের।

কৃষকরা বলছেন, গত বছর প্রতি কেয়ার জমিতে উৎপাদন খরচ ছিলো ৫ হাজার টাকা। এবছর বেড়ে হয়েছে ৭০০০-৮০০০ টাকা। এতে কৃষকের ২-৩ হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। খরচ যেভাবে বেড়েছে মৌসুম শেষে ধানের বাড়তি দাম না পেলে উৎপাদন খরচ উঠবে না।

জেলা কৃষি অফিসের একটি সুত্র জানিয়েছে, সুনামগঞ্জের প্রায় সাড়ে তিন লাখ কৃষক এবার দুই লাখ ২৩ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমিতে বোর চাষাবাদ করছেন। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১৩ লাখ ৭০ হাজার ২০২ মে.টন। টাকার অংকে যার মূল্য ৪ হাজার ১১০ কোটি টাকা।

এদিকে ডিজেল, কেরোসিন ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। কৃষি উপকরণ কীটনাশক, বীজ, সার এবং শ্রমিকের মজুরি ও যন্ত্রপাতির দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচও বেড়েছে। এদিকে গত বছর হাওরে ব্রি ধান ২৮, ২৯ রোপন করে অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। তাই এবছর অধিকাংশ কৃষকরা ব্রি ৯২, ৯৬, ৮৯, ৮৮ ইত্যাদি জাতের বীজ রোপন করছেন।

জেলার বিশম্ভরপুর উপজেলার মুক্তিরখলা গ্রামের কৃষক কামরুল ইসলাম বলেন, গত বছর থেকে এবার বোরো ধান চাষাবাদে খরচ অনেক বেশি পড়ছে। খরচার হাওরে ১৬ কেয়ার জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ করছি। ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়ার পর থেকে পানি সেচ ও জমির হালচাষে খরচ বেড়েছে। গত বছর প্রতি ঘণ্টায় পানি দিতে খরচ পড়ত ১০০-১১০ টাকা। এবছর বেড়ে হয়েছে ১৫০-২০০ টাকা। এছাড়া জমি তৈরিতে ৯০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩০০ টাকা। সার খরচ গত বছর ৯০০-১০০০ থাকলেও এবছর ১৩০০-১৪০০ টাকা প্রতি বস্তা কিনতে হচ্ছে কৃষকদের। কেজি প্রতি গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ১২ টাকা।

বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ৬০০ থেকে বেড়ে ৮০০ টাকা হয়েছে। শ্রমিকের মজুরি গত বছর ৪৫০-৫০০ থাকলেও এবছর ৫৫০-৬০০ টাকা দিতে হচ্ছে। এতে গত বছরের তুলনায় প্রতি কেয়ারে ৩০০০ টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে কৃষকদের।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কুরবাননগর ইউনিয়নের হাছনবাহার গ্রামের কৃষক আব্দুল খালিক জানান, গত বছরের দামে কোন কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। জমির বীজ থেকে শুরু করে সার সহ সকল কিছুর দাম বেশি। হালচাষ থেকে শুরু করে ফসল গড়ে তোলার আগে পর্যন্ত খরচ হবে।

তেলের (ডিজেল-কেরোসিন) দাম বাড়ায় হালচাষ ও পানি সেচে গত বছরের তুলনায় এবছর ৪০০-৫০০ টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। জমি হালচাষে কেয়ার প্রতি ১৫০০-১৮০০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। গত বছর যে বীজ ৫০০ টাকায় কেনা গেছে, এবছর ৬০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। সার, কীটনাশক ও মজুরী তো আছেই। ১১ কেয়ার জমিতে বোরো আবাদ করেছি যদি ফসল ভালো হয় তাহলে খরচটা ওঠবে। এবার খরচ বেশি হওয়ায় অনেক কৃষকই চিন্তায় পড়েছেন।

খুচরা বিক্রেতা ইউনুস আলী বলেন, খুচরা বাজারে ডিজেল ১২৫ টাকা বিক্রয় করা হচ্ছে যা গত বছরের চেয়ে অনেকটা বেশি। পানি সেচে কৃষকদের খরচ বেশি গুনতে হচ্ছে। তেল সংকট থাকায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। মেসার্স বকুল বালা ট্রেডার্সের কর্মচারী ব্যবসায়ী রিপন মিয়া জানান, বেশি টাকায় কিনতে হচ্ছে, তাই সার থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকমের কীটনাশকের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার সারের দাম নির্ধারণ করে দেয়ার পরও কিছু কিছু সারের দাম বেড়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বললেন, হাওরে ৯৯ ভাগ ফসল রোপন করা হয়েছে। গত বছর ফসলের ক্ষতি হওয়ায় এবছর নতুন জাতের বীজ রোপন করার পরামর্শ দিয়েছি কৃষকদের। বিএডিসি মাধ্যমে যারা সেচ সংযোগ নিয়েছেন, তাদেরকে সরকার থেকে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। এক লাখ কৃষকের মধ্যে বীজ বিতরণ করা হয়েছে। খরচ বেশি হওয়াতে ভাল জাতের ফসল চাষাবাদ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কৃষকদের।

এছাড়াও এবার ৩ হাজার হেক্টর জমিকে আবাদযোগ্য করা হয়েছে। খরচ বেশি হওয়ার ব্রি ধান ৮৮, ৮৯, ৯২, ৯৬ সহ বিভিন্ন জাতের উচ্চ ফলনশীল বীজ রোপন করার পরামর্শ দিয়েছি। এতে কৃষকরা ফসল বেশি পাবে, বাড়তি খরচটাও উঠে আসবে।

 

 



© দিন পরিবর্তন