নিজস্ব প্রতিবেদক
Published:06 Feb 2024, 02:24 PM
দেশের যে ১৪টি পণ্য জিআই সনদের অপেক্ষায়
নিজস্ব প্রতিবেদক:
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের মোট ২১টি পণ্য জিওগ্রাফিক্যাল আডেন্টিফিকেশন (জিআই) বা ভৌগোলিক নির্দেশক হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে। এখন নতুন করে আরও ১৪টি পণ্যের জন্য জিআই আবেদন জমা পড়েছে। এছাড়া আবেদনের প্রক্রিয়ার মাঝে আছে আরও দু’টি পণ্য।
বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে পেটেন্টস, ডিজাইন এবং ট্রেডমার্ক বিভাগ (ডিপিডিটি) থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, যে ১৪টি পণ্যের জন্য আবেদন জমা পড়েছে, সেগুলো হলো-
যশোরের খেজুর গুড়; নরসিংদীর লটকন; নরসিংদীর অমৃতসাগর কলা; জামালপুরের নকশীকাঁথা; মধুপুরের আনারস; সুন্দরবনের মধু; মৌলভীবাজারের আগর-আতর; রংপুরের হাড়িভাঙ্গা আম; মুক্তাগাছার মণ্ডা; রাজশাহীর মিষ্টিপান; শেরপুরের ছানার পায়েশ; ভোলার মহিষের কাঁচা দুধ; গোপালগঞ্জের রসগোল্লা; নওগাঁর নাগ ফজলি আম; এছাড়া আবেদনের প্রক্রিয়ার মাঝে আছে আরও দু’টি পণ্য। যথা- দিনাজপুরের লিচু ও টাঙ্গাইলের শাড়ি
যদিও কোনো পণ্যের জন্য আবেদন করার অর্থ এই নয় যে সেগুলো জিআই সনদ পাওয়ার মতো যোগ্য বা পাবেই। নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর নির্ধারিত হয় যে কোন পণ্য এই তালিকায় উঠবে। যাচাই-বাছাইয়ের পর এগুলোর কোনোটি যদি জিআই সনদ পেয়ে যায়, তাহলে তখন সেগুলো বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য হিসেবে বিশ্ব দরবারে পরিচিতি লাখ করে।
এ বিষয়ে ডিপিডিটি মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান বলেন, অ্যাপ্লাই করলেই যে সনদ দিবো, তা না। কাগজপত্র পরীক্ষার পর যদি দেখা যায় যে সব ঠিক আছে, তখন জার্নালে প্রকাশ করি। তখন আবার আপত্তি দেয়ার জন্যও প্রসিডিওর আছে। সব কিছু বিবেচনার পর এটিকে হ্যাঁ-ও করা হতে পারে, নাকচও করা হতে পারে।
কোনো দেশের পরিবেশ, আবহাওয়া ও সংস্কৃতি যদি কোনো একটি পণ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখে; সেই সাথে, ভৌগোলিকভাবে ও ঐতিহ্যগতভাবে যে পণ্যগুলোকে ‘নিজস্ব’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যায়, তাহলে সেটিকে ওই দেশের ‘ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এর ফলে সেটিকে বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডিং করা সহজ হয়।
তখন দেশে বিদেশে ঐ পণ্যগুলোর একটি আলাদা কদর থাকে। শুধু তাই নয়, সনদ প্রাপ্তির পর ওই অঞ্চল বাণিজ্যিকভাবে পণ্যটি একাধারে উৎপাদন করার অধিকার এবং আইনি সুরক্ষা পায়। অন্য কোনো দেশ বা অন্য কেউ তখন আর এই পণ্যের মালিকানা বা স্বত্ব দাবি করতে পারে না।
নিয়ম অনুযায়ী, কৃষিপণ্য, প্রকৃতি থেকে আহরিত সম্পদ ও কুটির শিল্পকে এই সনদ দেওয়া হয়। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যেসব জি-আই পণ্য আছে, সেখানে এর সবগুলো ধরনই রয়েছে।
বাংলাদেশে যেসব পণ্য জি আই সনদ পেয়েছে
জি আই আইন বিধিমালা পূরণ করে এখনও পর্যন্ত মোট ২১টি পণ্য জি আই সনদ পেয়েছে। সেগুলো হলো- জামদানি শাড়ি; বাংলাদেশের ইলিশ; চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আম; বিজয়পুরের সাদামাটি; দিনাজপুরের কাটারিভোগ; কালোজিরা; রংপুরের শতরঞ্জি; রাজশাহীর সিল্ক; ঢাকার মসলিন; বাগদা চিংড়ি; রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম; শীতলপাটি; বগুড়ার দই; শেরপুরের তুলসীমালা; চাপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া আম; চাপাইনবাবগঞ্জের আশ্বিনা আম; বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল; নাটোরের কাঁচাগোল্লা; টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম; কুমিল্লার রসমালাই; কুষ্টিয়ার তিলের খাজা। যদিও ডিপিডিটি'র ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের জার্নালে ১৭টি পণ্যের কথা উল্লেখ আছে।
হঠাৎ জিআই সনদ আলোচনায় যে কারণে
চলতি বছরের পহেলা ফেব্রুয়ারি দুপুরে ভারত সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেইজে একটি পোস্টে টাঙ্গাইল শাড়িকে পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহ্য উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, এটি এই অঞ্চলের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের বহিঃপ্রকাশ।
যদিও ‘টাঙ্গাইল শাড়ি’ বাংলাদেশে বহুল পরিচিত একটি বিষয়। সেই সঙ্গে ঢাকার কাছে টাঙ্গাইল জেলার সাথে এর নামও জড়িয়ে আছে। এই পুরো বিষয়টিতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন দেশের মানুষ।
এর আগে ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন পেটেন্ট, ডিজাইন অ্যান্ড ট্রেড মার্কস বিভাগের পক্ষ থেকে টাঙ্গাইল শাড়িকে পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, রাজ্যটির নিজস্ব পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে সুন্দরবনের মধুও।
এ বিষয়ে ডিপিডিটি পরিচালক মো. মুনিম বলেন, জি আই সনদের প্রক্রিয়া আছে। এটা অঞ্চলভিত্তিক। যেটা যে অঞ্চলের, সেটা সেখানকার বিখ্যাত। এখন কাঁচাগোল্লা তো অনেক জায়গায়ই হয়, কিন্তু নাটোরের কাঁচাগোল্লা তো শুধু ওখানেই পাওয়া যায়। তাই সুন্দরবনের মধু বা টাঙ্গাইল শাড়ি জি আই সনদ পেতে পারে কি পারে না, সেই সিদ্ধান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে হবে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
© দিন পরিবর্তন