logo

নদী দখলকারীদের তালিকায় আসছে পরিবর্তন

নিজস্ব প্রতিবেদক

Published:06 Feb 2024, 04:28 PM

নদী দখলকারীদের তালিকায় আসছে পরিবর্তন


তরিকুল ইসলাম সুমন:


সারা দেশে নদীদখল চলছেই। নদ-নদী দখলমুক্ত করার জন্য সরকারিভাবে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না। সরকারি বিভিন্ন দফতর থেকে বিভিন্ন সময়ে নদী দখলমুক্ত করা হলেও ফের হচ্ছে দখল। এ কারণে নতুন করে নদী দখলদারদের তালিকা হালনাগাদ করে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে জেলা প্রশাসকদের কাছে চিঠি দেবে পানিস¤পদ মন্ত্রণালয় ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। সংশ্লিষ্ট দফতর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, তাদের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, সারা দেশের ছোট নদী, খাল ও জলাশয়ের অবৈধ দখলদারের সংখ্যা ছিল ৪৫ হাজার ৯৫। এর মধ্য থেকে ২৩ হাজার ৮০২টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এখনো বাকি রয়েছে অবশিষ্ট ২১ হাজার ২৯৩টি স্থাপনা। এসব স্থাপনা সরানোর জন্য বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও নানা কারণে উচ্ছেদ সম¢ব হয়নি। দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন দখলদারদের তালিকা করাসহ পুরনোদের উচ্ছেদ করে বনায়ন করা হবে।

অপর দিকে নদী রক্ষা কমিশনের তথ্যানুযায়ী নদ-নদী দখলদারদের সংখ্যা মোট ৬৩ হাজার ২৪৯ জন। কমিশনের সুপারিশের আলোকে উচ্ছেদ করা হয়েছে ১৬ হাজার ৮৬৭ জনের স্থাপনা। এখনো বাকি ৪৬ হাজার ৩৮২ জনের স্থাপনা।

দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে দখলের কবলে পড়ে নদ-নদীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিপন্ন অবস্থায় পড়েছে কুমিল্লা জেলা। এ জেলায় নদ-নদীর জমি দখলদার ৫ হাজার ৯০৬ জন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চট্টগ্রাম জেলা। এখানে দখলদার ৪ হাজার ৭০৪। তৃতীয় অবস্থানে নোয়াখালী জেলা। এখানে নদ-নদী দখলদার ৪ হাজার ৪৯৯ জন।

প্রতিবেদনে কক্সবাজারে দখলদার ২৭৮ জন, চাঁদপুরে ৫৩৮, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৬৭৮, ফেনীতে ৩০১, লক্ষ¥ীপুরে ১ হাজার ১৫৯, খাগড়াছড়িতে ২৬, বান্দরবানে ৩৬৮, রাঙ্গামাটিতে ৮০, ঢাকায় ৯৫৯ (আংশিক), নারায়ণগঞ্জে ৭৮৫, মুন্সীগঞ্জে ৫৭, গাজীপুরে ১০৫, মানিকগঞ্জে ১ হাজার ৩৯৯, শরীয়তপুরে ২৬১, কিশোরগঞ্জে ১২৩, নরসিংদীতে ২৫০, মাদারীপুরে ৩৮৩, গোপালগঞ্জে ৫৪০, রাজবাড়ীতে ২৬, ফরিদপুরে ১ হাজার ৮৩৪, টাঙ্গাইলে ১ হাজার ৭৮৮, খুলনায় ২ হাজার ৮৬৮, নড়াইলে ৯৭, কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার ১৩৪, মাগুরায় ১৩৩, ঝিনাইদহে ১৬৯, যশোরে ৬৯৪, সাতক্ষীরায় ৪৮৫, মেহেরপুরে ২২৪, চুয়াডাঙ্গায় ১ হাজার ২৮৩। বাগেরহাটে ২ হাজার ১৫৮, মৌলভীবাজারে ৪১৮, সিলেট ৩৩০, সুনামগঞ্জে ৬৯৬, হবিগঞ্জে ৬০০, ময়মনসিংহে ২ হাজার ৪৭৯, জামালপুরে ৭০৫, নেত্রকোনায় ১ হাজার ৩৮৬, শেরপুরে ২৭৮, রংপুরে ৩০, দিনাজপুরে ১ হাজার ৪৭, নীলফামারী ৭০৯, লালমনিরহাটে ১৩, কুড়িগ্রামে ৫২, ঠাকুরগাঁওয়ে ৩০৮, পঞ্চগড়ে ১৩৩, গাইবান্ধায় ২৭৬, রাজশাহীতে ১৯৭, নাটোরে ১ হাজার ৫৪১, নওগাঁতে ১৯৫, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫৫, পাবনায় ৩৬০, সিরাজগঞ্জে ২২৫, বগুড়ায় ৪০, জয়পুরহাটে ৮০, বরিশালে ২ হাজার ২৭২, বরগুনায় ১ হাজার ৫৫৪। পিরোজপুরে ১২৯, পটুয়াখালীতে ৯৯৯, ভোলায় ৪৫৪ এবং ঝালকাঠিতে ২০৩। মোট দখলকারী ৫৬ হাজার ৫৬ জন।

 
এ বিষয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ একটি চলমান প্রক্রিয়া। এ উচ্ছেদ অব্যাহত থাকবে। যারাই নদী দখল করে রাখুক না কেন তাদের উচ্ছেদ করা হবে। এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ চলছে। নদীকে তার নিজস্ব রূপ ফিরিয়ে দিতে আমরা কাজ করছি। সম্প্রতি জেলা প্রশাসকদের বৈঠকে নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে সারা দেশে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।

নদী রক্ষা কমিশন সূত্র জানায়, নতুন বছরের পরিকল্পন অনুযায়ী দেশের সব নদ-নদীর অবৈধ দখলদারদের সংখ্যা, উচ্ছেদ, খালের নাম ও সংখ্যা, দূষণ পয়েন্ট ও দূষণকারীদের তালিকা হালনাগাদ করা হবে। এর আগে ২০২৩ সালে দেশে প্রথমবারের মতো ১ হাজার আটটি নদ-নদীর নাম প্রকাশ করে নদী রক্ষা কমিশন। এর আগে ২০২১ সালে ৬৩ হাজার ২৪৯ জন নদী দখলদারের তালিকা প্রকাশ করেছিল। এরপরে আর তেমন করে তালিকা করা হয়নি। তার পরেও বিভিন্ন সময়ে জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে কমিশনে নতুন নতুন তালিকা জমা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নদী রক্ষা কমিশনের সদস্য (অবৈতনিক) ও সরকারে সাবেক অতিরিক্ত সচিব মনিরুজ্জামান জানান, আমাদের প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে নদী দখল ও দূষণকারীদের নামের তালিকা রয়েছে। ওই তালিকার বাইরেও বিভিন্ন সময়ে ডিসি ও বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে দখলদারদের নামের তালিকা আসছে। আমরা এখন নদীদখল ও দূষণকারীদের তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে হাত দেব। তবে অনেক জায়গায় আমাদের তালিকার অনুযায়ী উচ্ছেদ করা হয়েছে। সেগুলো এখনো তালিকায় রয়েছে গেছে। নতুন তালিকায় সংযোজন ও বিয়োজন করা হবে। এ জন্য জেলা প্রশাসকদের দ্রুত সময়ের মধ্যে চিঠি দেওয়া হবে বলেও জানান এ সদস্য।

 



© দিন পরিবর্তন