logo

পথে যেতে একদিন- [৭]

দিন পরিবর্তন ডেস্ক

Published:29 Dec 2023, 07:41 PM

পথে যেতে একদিন- [৭]


জীবিকার তাগিদে প্রকৃতির বন্ধু

লেখা ও ছবি মোবারক হোসেন:

দুপুর গড়িয়ে বিকেল টানছে সূর্যকে। সোনালি রোদের প্রখরতা তখনো কমেনি। বিস্তীর্ণ জায়গায় ধোয়া পলিথিন ছড়ানো। ঘাসের সবুজ চাদরকে আবৃত্ত করেছে আরেকবার। নীল আকাশে ভাসছে সাদা মেঘের ভেলা। এরই ফাঁকে সূর্যরশ্নি লুটোপুটি খাচ্ছে বিছানো পলিথিনে।
রাজধানীর হাতিরঝিলের লেকের পাড়। এফডিসির উল্টো পাশে অদূরে। কাওরানবাজারের রেললাইনের খুব কাছাকাছি। পলিথিন শুকানোর দীর্ঘ প্রতীক্ষা এখানে।
পাশাপাশি কর্মব্যস্ত দুই যুবক। দুজনার শরীরে ঘামের ধারা। অবিরাম বইছে গা বেয়ে। শরীরের কাপড় ভিজে ছোপ ছোপ ঘামদাগ। কপাল বেয়ে নামছে ঘর্মবিন্দু। তবুও ফুরসত নেই দুজনার। সময়ান্তে শেষ করতে হবে বাকি কাজ। অনবরত কর্ম-প্রচেষ্টায় দীর্ঘ হচ্ছে শ্বাস-প্রশ^াস।
একজনের হাতে শে^ত বর্ণের জীর্ণ বস্তা। আরেকজন এতে শুকানো পলিথিন পুরছে। সাদা পলিথিনের মুঠো ডেবে দিচ্ছে বাহুজোরে। সড়সড় শব্দে মুখরিত চারদিক। বস্তাটা ক্রমেই ভরে যায়। ফুলে ওঠে আপন রূপে। এরপর আরেকটা খালি বস্তা...। এভাবে চলছে পরপর। অবশেষে যানবাহনে চেপে চলে যায় অজানা শেষ গন্তব্যে।
কাওরানবাজারের মাছের আড়ত। এখানে আশপাশে জমে ব্যবহৃত পলিথিন। নিত্যভোরে জনাদশেক টোকাই সংগ্রহে নামে। হাতবদলে চলে আসে মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীর কাছে। টোকাইরা প্রতি কেজিতে পায় ৩৬ টাকা। ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেন আরো বেশি দরে। এরপর চলে যায় পুরনো দ্রব্যের পাইকারি আড়তে। সেখান থেকে ট্রাকেবোঝাই পলিথিনের বস্তা ছুটে চলে প্রক্রিয়াকরণ কারখানায়। আবার নতুন রূপে উদিত হওয়ার কর্মপরিধিতে।
পলিথিন পরিবেশ দূষণের সহজ উপকরণ। নগরের ড্রেনে পড়ে সুয়ারেজ প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা বাড়ায়। নালা-নর্দমা ভরে ওঠে দুর্গন্ধময় পানিতে। বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে শহরজুড়ে। এগুলোয় চলে যায় নর্দমা বেয়ে নদীতে। নদীর তলদেশে জমে ঘটায় ভয়াবহ দূষণ। পরিবেশ হয়ে ওঠে বিষাক্ত। জনস্বাস্থ্য ঝুঁকিপূর্ণ হয় দিনদিন। ময়লা-দুর্গন্ধ হাতে ঠেলে টোকাইরা সংগ্রহ করে এসব পলিথিন।
ক্ষৃধার তাড়নায় বেছে নেয়া ওদের এ পেশা। জীবিকার তাগিদে ওরা না জেনেই হয়েছে প্রকৃতির বন্ধু। পেশাগত কাজের গুরুত্ব হয়তো বুঝে না। বোঝে না দূষণ রোধে কতটাই বা গুরুত্ব তাদের।
তবে কর্মপেশা কখনোই ছোট্ট নয়। নানা পেশার সমন্বয়ে গড়ে ওঠা আমাদের সমাজ। নগরে নিত্যদিন কাজ করছে হাজারো পরিছন্নতাকর্মীর হাত। চামার-কামার, মেথর-ছুথার লড়ছে এ সভ্যসমাজে অংশী হয়ে। তাদের অবদানের স্বীকৃতিতে কেউ জানাবে না অভিবাদন ।
ইচ্ছার বহরে ওদের যোগ হচ্ছে নতুন চেতনা। আগামীদিনের স্বপ্নবোনা বিস্তীর্ণ কল্পনার মাঠে। ভালো কিছুর হাতছানি ইশারায় ডাকছে কি না জানে না। তবুও দিনের টানে ধাবমান ওদের স্বপ্নেরা। মানুষের স্বভাবজাত প্রবৃত্তি ওখানেই করে শেষ নোঙর। তাই নিত্য ব্যস্ততা ওদের; প্রকৃতিকে শুদ্ধ করার কঠিন লড়াইয়ে। ওদের শত হাত প্রকৃতির বন্ধু হয়ে থাক আমাদের পৃথিবীতে।



© দিন পরিবর্তন