logo

পথে যেতে একদিন-২

দিন পরিবর্তন ডেস্ক

Published:12 Dec 2023, 07:16 PM

পথে যেতে একদিন-২


মোবারক হোসেন:

শীত আসে শরতের সাদা মেঘের সিঁড়ি ভেঙে। বাতাসে আসে হীম, ঠান্ডার অন্তর্ভেদ অনুভূতি। পাল্টে যায় প্রকৃতির স্বভাব। গাছে গাছে আগুনরঙা পলাশ, লাল শিমুল। পৃথীবিকে জানায় আগমনীবার্তা। ঠিক এসময় শহরের পাড়া-মহল্লায় বসে পিঠার দোকান।

রাজধানীর অনেক রাস্তার সংযোগকেন্দ্র ফার্মগেট। এর অনতি দূরে কাওরান বাজার। কাঁচাসবজির জমজমাট সমারোহ। এই কাওরান বাজারকে ওভারব্রিজ যুক্ত করেছে গার্ডেন রোডের সঙ্গে। আগে এখানে ছিল পাতালপথ। এ গার্ডেন রোডের প্রান্ত ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে বসুন্ধরা শপিং মল। এরই পশ্চাৎভাগের পাদদেশে আবুলের পিঠার দোকান।

সাদা শার্ট আর লুঙ্গি পরিহিত আবুল হোসেন। বয়স ছুঁয়েছে পঞ্চাশকে। উচ্চতা মধ্যম। উজ্জ্বল ফর্সা মুখমণ্ডলে এখনো যুবকের হাসি। খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে সাদা আর কালোর লড়াই। এরই মাঝে উপচে পড়ছে জীবনযুদ্ধে আত্মবিশ্বাসের ছাপ। গল্পের ভাঁজে ঢেউ ভাঙে স্মৃতির জলরাশি।
পিরোজপুর জেলার ছায়াঘেরা ছাতনি গ্রাম। এখানে পড়ে আছে দূরন্ত কৈশোর। স্মৃতিকাতরতা আজও টেনে নিয়ে যায়- ফেলে আসা দিনগুলোয়। ওখানে রাতের প্রহর নামে শিয়ালের ডাকে। পাখি ডাকে গাছে গাছে সাঁজবেলায়। ভোরেও গেয়ে ওঠে গানের পাখি। সংসারের প্রয়োজনে জীবন এখন বাঁধা পড়েছে ইট-পাথরের কঠিন শহরে। সাতসকালে ঘুম ভাঙে যন্ত্রদানবের বুক ভাটা চিৎকারে। আরও কত কৃত্রিমতা জীবনকে করেছে যান্ত্রিক।

থাকেন মিরপুরের কালশিতে। বউ, দুই ছেলে আর এক মেয়ের সংসার। যে রোজগার হয়, তা দিয়ে চলে যায় দিন। সারা দিনে বেচাবিক্রি দুই-আড়াই হাজার টাকা। এর মাঝে লাভের সমীকরণ। সন্তোষজনক মাত্রা ছুঁয়ে যায় নিত্যদিন। তার প্রেরণায় আরও কজনা; তারাও ধরেছেন জীবিকার এ পথ। আবুল হোসেনের অভিজ্ঞতা থেকে তারা নেন চেতনা। তিনি এখন তাদেরই জীবন-সংগ্রামের প্রেরণা।

আবুল হোসেন ব্যবসার পসরা সাজান বেলা দশটায়। তার পিঠাঘরে রয়েছে চিতই পিঠা, তেলপিঠা আর ভাঁপা পিঠা। আতপ চালের গুঁড়ার তৈরি চিতইপিঠা। শীতের সন্ধ্যার আরেক অনুষঙ্গ। আর তেল পিঠা তো গ্রামীণ মানুষের ঐতিহ্যের অংশ। ভাঁপাপিঠার সঙ্গে খেজুরের গুড়ের ঘ্রাণ আর নারকেলের শাঁস, অন্যমাত্রায় নিয়ে যায় স্বাদকে। তাই সাঁঝের আঁধার ঘনিয়ে আসার পর অগনিত মানুষের ভিড় জমে, গরম পিঠার উনুনের উত্তাপে।

তার দোকানের প্রধান আকর্ষণ ভর্তা আর চাটনি। সারি সারি সাজানো ৪০ রকমের চাটনি। গাড়ো লাল, হালকা কমলা, ঈষৎ সবুজ আর হালকা হলুদ রঙের বাটিভরা চাটনি। টক, ঝাল, মিষ্টি। জিভে জল আসা স্বাদ। শুঁটকি ভর্তা আর ধনেপাতা বাঁটা; ঝাঁঝালো সরিষা বাঁটা। কালজিরা ভর্তা, বেগুন ভর্তা। আরো কত স্বাদ, কত রঙের সমাহার। উচ্চবিত্ত আর নিম্নবিত্ত সবারই ভিড় বাহারি স্বাদের কাছে। তাই সকাল-সন্ধ্যা পিঠার দোকানে এত মানুষের সমাগম।

শীতের সন্ধ্যায়, শহুরে পথে ছুটে আসে পিঠার ঘ্রাণ। মৃদু বাতাসে আশপাশে ভেসে যায়। বেড়ে যায় পথিকজনের স্বাদ নেয়ার আকূলতা।



© দিন পরিবর্তন