logo

পাটুরিয়ায় ফেরি উদ্ধার কাজে উদ্ধারকারী জাহাজ পত্যয়

প্রতিনিধি

Published:20 Jan 2024, 02:41 PM

পাটুরিয়ায় ফেরি উদ্ধার কাজে উদ্ধারকারী জাহাজ পত্যয়


হাসান চৌধুরী শিবালয় (মানিকগঞ্জ)
গত তিনদিনেও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি ডুবে যাওয়া রজনীগন্ধা ফেরি। ফেরিতে ডুবে যাওয়া যানবাহন ও মালামালের মালিক ও শ্রমিকদের আহাজারী ও ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় ঘাট এলাকায়।

শুক্রবার ভোর হতে বিভিন্ন যায়গা থেকে আগত ওই সব যানবহন ও মালের মালিকরা পাটুরিয়া ৫নং ঘাট এলাকায় এসে জটলা করতে শুরু করেছে। গত বুধবার রজনীগন্ধা ফেরিটি ডুবে যাওয়ার পর থেকে গত দুইদিনে মাত্র তিনটি কভার ভ্যান ও ট্রাক উদ্ধার করেছে।

বিআইডব্লিউটিএ’ এর হামজা ও রোস্তম নামক উদ্ধারকারী জাহাজ দুটি ডুবে যাওয়া রজনীগন্ধা ফেরিটি উদ্ধার করতে অক্ষম। জানা যায়, ডুবে যাওয়া ফেরিটির ওজন ২৪০টন, তার ভেতরে জানা মতে ৯টি ছোট বড় ট্রাক ছিল। যার প্রেক্ষিতে রোস্তম ও হামজা মাত্র ৬০ টন করে উঠানোর সক্ষমতায় বাধ্য হয়ে শুক্রবার দুপুর ২টায় পাটুরিয়াতে ডুবে যাওয়া রজনীগন্ধা ফেরির ঘটনাস্থলে এসে পৌছিয়েছে। এদিকে জানা যায়, ডুবে যাওয়া রজনীগন্ধা ফেরির দ্বিতীয় যন্ত্র চালক মোঃ হুমায়ুন কবীর ফেরিতে আটকা পরে আছে বলে অনেকের অভিমত।

রজনীগন্ধা ফেরিটি ডুবে যাওয়ার পর থেকে মোঃ হুমায়ুন কবীরের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। শুক্রবার সকাল ১০টায় পাটুরিয়াস্থ ৫নং ঘাট এলাকায় নৌ-কারিগরি, বিমা ও ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের নেত্রীবৃন্দ ক্রোধ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে হুমায়ুন কবিরের অনুসন্ধানের জোর দাবী জানান। হুমায়ুন কবীর একদিকে রজনীগন্ধা ফেরির দ্বিতীয় ইঞ্জিন চালক অন্যদিকে পাটুরিয়াস্থ ওয়ার্কর্স ইউনিয়নের সভাপতি। জানা যায় যে, উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়ের সক্ষমতা ২৮০ টন হওয়ায় অনেকেরই ধারণা যে উদ্ধার তৎপরতা তরান্বীত হবে বলে বিজ্ঞ জনদের অভিমত।

ডুবে যাওয়া ঘটনাস্থল আনুমানিক প্রায় ২৫ থেকে ৩০ ফিট পানির তলদেশ। গত দুইদিনে ফায়ার সার্ভিসের ১১জন, নৌ-বাহিনি ও বিআইডব্লিউটিএ এর ডুবুরিরা উদ্ধার কাজ চালিয়েছে। বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে শুরু করে রাত আটটা পর্যন্ত অনুসন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করলেও তা আশানুরূপ হয়নি বলে ভুক্ত-ভোগীদের অভিমত। বুধবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়াতে রজনীগন্ধা ফেরিতে ৯টি ছোট বড় ট্রাক সহ বিভিন্ন যানবাহন পদ্মার গর্ভে নিমজ্জিত হয়।

এই ধরনের ফেরি দুর্ঘটনা নজির বিহীন হলেও ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর আমানত শাহ্ নামে একটি রো রো ফেরি নিমজ্জিত হয়েছিল। জানা যায় দৌলতদিয়া ঘাট থেকে রজনীগন্ধা ফেরিটি যানবাহন লোড নিয়ে পাটুরিয়া ঘাট অভিমুখে রওনা দেয়। মাঝ নদীতে ফেরিতে পানি উঠতে শুরু করলে পাটুরিয়া ৫নং ঘাটে আসার আগেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এ সময় যাত্রীদের আত্ম চিৎকারে বিভিন্ন নৌ-যান এগিয়ে যাত্রীদের জীবন রক্ষা করতে সক্ষম হয়। এ ফেরিটি ২০২১ সালে ডকইয়ার্ড থেকে এসেছে বলে কতৃপক্ষ জানান।

তবে দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এমতবস্থায় নিরুপন করা সম্ভব হয়নি। ইতমধ্যে দুর্ঘটনা কবলিত স্থান পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার সহ অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ। সংবাদ পাঠানো পর্যন্ত কোনো প্রানহানির খবর পাওয়া যায়নি। তবে উদ্ধার শেষ হওয়া পর্যন্ত আশংকা করা হচ্ছে। বেশ কয়েকটি যানবাহন ভেসে ভাটিতে ভাসতে দেখা গেলে গত দুইদিনে উদ্ধার করা হয়েছে।

একটি সূত্র জানায় যে, ফেরিতে নিয়মিত নিয়জিত কর্মকর্তা কর্মচারীরা ফেরিতে থাকে না। যেমনÑ ইঞ্জিন ইনচার্জ, ক্যাপ্টেন, মাস্টার, সুকানী, কোয়াটার মাস্টার। বদলী জনবল দিয়ে ফেরি চলাচল করানো হয়।

আর একটি সূত্র জানান যে, অধ্যক্ষ দায়িত্বহীনতা, দুর্নীতি পরায়ন এমনকি রাজনৈতিক প্রতি হিংসার ছাপ প্রতিয়মান বলে অনেকের ধারণা যে ফেরিটি পরিকল্পিতভাবে এই দুর্ঘটনার আবির্ভাব। একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে বলে জানা গেছে তবে তদন্ত কমিটির নিরপেক্ষ তদন্তের স্বাপেক্ষে মূল ঘটনার সত্যতা বেরিয়ে আসবে বলে বিজ্ঞ মহলের ধারণা।

ঘটনার পরপরই পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজীর হাট নৌ-রুট থমকে যায়। তবে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও আরিচা-কাজীরহাট নৌ-রুটে বেশ কয়েকদিন যাবৎ রাত থেকে সকাল অবধি ঘন কুয়াশার কারণে যানবাহন ও যাত্রীদের দুর্ভোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে। চরম যানজট ও যাত্রী দুর্ভোগ হলেও সংবাদ পাঠানো পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। আরও জানা যায় যে, ঘটনার সময় মাত্র দশ বারো জনকে উদ্ধার করা গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, বিভিন্ন যানবাহনে থাকা শ্রমিক ও যাত্রীদের শলীল সমাধি হয়েছে।

 

 



© দিন পরিবর্তন