logo

পেয়ারার দাম পেয়ে খুশি কৃষক

নিজস্ব প্রতিবেদক

Published:19 Aug 2022, 06:05 PM

পেয়ারার দাম পেয়ে খুশি কৃষক


পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ ফল পেয়ারা।  বর্তমানে এই ফলটি সারা বছর জুড়ে পাওয়া যাচ্ছে।  ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় এ ফলটি দেশিয় পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে।  এখানকার চাষকৃত পেয়ারা কোনটি গাঢ় সবুজ,আবার কোনটি হালকা সবুজ লাল হলদে আবরনে মিশ্রন রয়েছে।  তবে বাংলার আপেল খ্যাত এখানকার পেয়ারা সুস্বাধু ও রসালো হওয়ায় জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে যতেষ্ট কদর।  তবে পেয়ারা লাভ জনক হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে এ চাষ।  নানা প্রতিকুলতা অপেক্ষা করে স্থানীয় কৃষকরা পেয়ারা চাষে এক সবুজ বিল্পব ঘটিয়েছে।  এ বছর পেয়ারার ফলন ও বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।  

এদিকে উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা জানান, পেয়ারা হলো পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ একটি ফল।  এতে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি ও লাইকোপেন যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।  একটি পেয়ারায় ৪টি আপেল ও ৪টি কমলা লেবুর সমান পুষ্টিগুন।  এতে আছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার, পটাশিয়াম ক্যালশিয়াম প্রোটিন ও খনিজ পদার্থ।  তাছাড়া পেয়ারা ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, চোখ, পেটের জন্য খুবই উপকারী। 

উপজেলার আজমপুর, রাজাপুর, রামধননগর, মনিয়ন্দ ও পৌর এলাকার দূর্গাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বানিজ্যেক ভাবে পেয়ারা চাষ করেছে স্থানীয় কৃষকরা।  গাছে গাছে সবুজ পাতার আড়ালে ও ডালে ডালে ঝুলছে থোকায় থোকায় পেয়ারা।  এখন পেয়ারার ভরা মৌসুম হওয়ায় ক্রেতা বিক্রেতাদের ব্যস্ত সময় পার করছেন।  

ওই সব এলাকার এমন কোন বাড়ি নেই যার ১০-১৫টি গাছ নেই।  যে দিকে দৃষ্টি যায় শুধু পেয়ারা আর পেয়ারা চোখে পড়ে।  এ চাষে কম শ্রমে বেশী লাভ হওয়ায় ফলনশীল ধানজমি গুলোও পেয়ারা বাগানে রুপান্তরিত করছে কৃষকরা।  

এখানকার পেয়ারা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আশুগঞ্জ কসবা,কুমিল্লা ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, মাধবপুর ,শায়েস্তাগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাইকাররা নিয়ে বিক্রি করছে।  

কৃষক মো: ফারুক মিয়া বলেন, তিনি প্রায় ১০ বছরের উপর প্রবাসে কাটিয়েছেন।  গত ৭ বছর আগে তিনি বাড়িতে একে বারে চলে আসায় বেকার হয়ে পড়েন।  জীবন ধারণ করতে বাড়ি সংলগ্ন জায়গায় মৌসুম অনুযায়ী নানা রকমের ফল চাষ শুরু করেন।  পাশাপাশি করছেন সবজিও।  তিনি আরো বলেন এক সময় তার অনেক জায়গা খালি পড়ে থাকতো।  কোন কিছুর আবাদ হতো না।  এখন বানিজ্যেক ভাবে চাষ হচ্ছে।  বর্তমানে তার ২৫টি পেয়ারা গাছে ভালো ফলন হয়েছে।  ইতিমধ্যে বিক্রিও শুরু হয়েছে।  অনাবাদি জমিতে সবজি,পেয়ারাসহ নানা ফল চাষ করে বছরে লাখ টাকা আয় করছে বলে জানায়।  

কৃষক মো: মুমিন মিয়া বলেন, বাড়ি সংলগ্ন পুকুর পাড় ও পতিত জমিতে ৩৫টি পেয়ারা গাছ রয়েছে।  নিয়মিত পরিচর্যায় এ মৌসুমে পেয়ারার ফলন ভালো হয়েছে।  তিনি আরো বলেন গত ১০-১২ ধরে পেয়ারা বিক্রি করছে।  পাইকাররা এসে তার বাড়ি থেকে পেয়ারা ক্রয় করে নিয়ে যায়।  গাছে যে পরিমাণ পেয়ারা এসেছে আর স্থানীয় বাজারে যে দরে বিক্রি হচ্ছে এতে তিনি আশা করছেন নিজেদের চাহিদা মিনিয়ে ২০ হাজার টাকার উপর আয় হবে।  

মো. ইদ্রিস মিয়া বলেন, কৃষি অফিসের পরামর্শে গত কয়েক বছর ধরে দেশিয় পদ্ধতিতে পতিত জমিতে পেয়ারাসহ নানা প্রজাতির ফল চাষ করছেন।  তার ছোট বড় মিলে ৪০ টি পেয়ারা গাছ রয়েছে।  এরমধ্যে ৩০টি গাছে পেয়ারা ফলন হয়েছে।  এরইমধ্যে তিনি ৬ হাজার টাকার পেয়ারা বিক্রি করেন।  তিনি আশা করছেন এবার ২৫ হাজার টাকার পেয়ারা বিক্রি হবে।  তিনি আরো বলেন এক সময় ধান চাষ করা হতো।  কিন্তু জমিতে ধান চাষ করে যে টাকা আয় হয় তার চেয়ে বেশী পেয়ারাতে আয় হচ্ছে বলে জানান।  

পাইকার মো. সুমন মিয়া, এ উপজেলায় বছর জুড়ে নানা প্রকারের মৌসুমী ফল চাষ হয়ে থাকে।  ওইসব ফল আমরা সারা বছর হাট বাজারে বিক্রি করছি।  বর্তমানে তিনি পেয়ারা ক্রয় করে বিক্রি করছেন।  এখানকার পেয়ারা রসালো ও সুস্বাধু হওয়ায় বিক্রিতেও ভাল লাভ হয় বলে জানান।  ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো: সুমন মিয়া বলেন, প্রতিদিন সকালে পেয়ারার বাগ থেকে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকার পেয়ারা ক্রয় করে তিনি বাজারে বিক্রি করছেন।  দুপুরের মধ্যে বিক্রি শেষ হয়ে যায়।  পেয়ারা বিক্রি করে দৈনিক তার ৬শ টাকার উপর আয় হয় বলে জানায়।  

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, এ উপজেলায় কৃষকরা মৌসুম অনুযায়ী পেয়ারাসহ নানা প্রজাতির ফল চাষ করে আসছে।  কৃষিতে আগ্রহ বৃদ্ধি করতে কৃষকদেরকে সার্বিক ভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়।  এখানকার মাটি ওইসব ফল চাষে খুবই উপযোগি।  এ মৌসুমে উপজেলায় পেয়ারার ভাল ফলন হয়েছে বলে জানায়।  



© দিন পরিবর্তন