logo

ফখরুলের প্রশংসা নির্লজ্জ দালালি : কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

Published:17 Sep 2022, 05:28 PM

ফখরুলের প্রশংসা নির্লজ্জ দালালি : কাদের


বর্তমানের চেয়ে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পাকিস্তান আমলে আরো ভালো ছিলেন বলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও তারা ‘পেয়ারে পাকিস্তান’ মন্ত্র জপছে।  এটি সরাসরি রাষ্ট্রদ্রোহ।

বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে তার জবাব দেন মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।  তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে যারা রাজনৈতিকভাবে এবং পারিবারিকভাবে পাকিস্তানি দর্শনের রাজনীতিকে লালন করে তারা স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এখনও ‘পেয়ারে পাকিস্তান’ মন্ত্র জপছে! 

ফখরুলের এই বক্তব্য ‘নির্লজ্জ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি শুধু রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিলই নয় বরং ৩০ লাখ শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি।  বিএনপি মহাসচিবের এ ধরনের বক্তব্য বিএনপিসহ একটি মহলের বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ। 

আগেরদিন ঠাকুরগাঁওয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময়ে মির্জা ফখরুল বলেন, পাকিস্তান সরকার থেকে বর্তমান সরকার আরও নিকৃষ্ট।  আমরা পাকিস্তান আমলে আর্থিক ও জীবনযাত্রার দিক থেকে এর থেকে ভালো ছিলাম। 

‘ভালো থাকার’ পরও মুক্তিযুদ্ধ কেন, সে কারণও ব্যাখ্যা করেন তিনি।  বলেন, পাকিস্তান সরকার যেহেতু আমার অধিকার ও সম্পদ হরণ করতো, সে কারণে আমরা যুদ্ধ করেছি।  কিন্তু এখন তার থেকেও খারাপ অবস্থায় আমরা আছি। 

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, পাকিস্তান আমলে না কি ওনারা আরও ভালো ছিলেন! এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে বিএনপির চিরাচরিত বাংলাদেশবিরোধী অবস্থান ও স্বাধীনতাবিরোধী অপরাজনীতির গোপন অভিসন্ধির আবারও বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, প্রগতি ও দেশপ্রেমে বিশ্বাসী কোনো ব্যক্তি কিংবা সংগঠন এ ধরনের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী মন্তব্য করতে পারে না বলেও মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতা।  বলেন, প্রকৃতপক্ষে তাদের এ ধরনের বক্তব্য প্রমাণ করে যে, মহান স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে তারা এখনো বাংলাদেশে পাকিস্তানি ধারার রাজনীতি প্রবর্তন করতে চায়। 

আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, বাংলাদেশের অগ্রগতি, সাফল্য, উন্নয়ন ও অর্জন যখন বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত, তখন বিএনপি নেতারা পাকিস্তান আমলের প্রশংসা করেন! যেখানে খোদ পাকিস্তানের পার্লামেন্টে ও গণমাধ্যমে বাংলাদেশের অগ্রসরমান অর্থনীতির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করা হচ্ছে; তখন বিএনপি নেতারা নির্লজ্জভাবে পাকিস্তানের দালালি করছে।  যখন তাদের বুদ্ধিজীবীরা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার মতো একজন সুদক্ষ নেতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন তখন বিএনপি মহাসচিব পাকিস্তান আমলে ফিরতে চাচ্ছেন! 

দেশে সুশাসন নেই বলে মির্জা ফখরুল যে অভিযোগ করেন, তারও জবাব দেন কাদের।  তিনি স্মরণ করান বিএনপি শাসনামলের কথা।  আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, বিএনপি আজ দেশে সুশাসনের কথা বলছে! মানুষের নিরাপত্তার কথা বলছে! দরিদ্রতার কথা বলছে! কিন্তু তারা ভুলে গেলেও দেশবাসী ভুলে যায়নি, বিএনপি-জামায়াত অশুভ জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশকে তারা কীভাবে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল।  দেশকে নিমজ্জিত করেছিল বিদ্যুৎহীন অন্ধকারে। 

বিদ্যুৎ ও সারের দাবিতে  আন্দোলন করায় কৃষককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।  হাওয়া ভবন খুলে অবাধ দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হয়েছিল, হাওয়া ভবনের মদতে অবৈধ কারসাজির মাধ্যমে রাষ্ট্রের সকল স্তরে নিজেদের দলীয় ক্যাডারদের নিয়োগ দিয়ে দেশের সকল প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছিল বিএনপি।

১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার সৃষ্টি ও ছাত্রদলের ক্যাডারদের নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগসহ অসংখ্য ষড়যন্ত্রমূলক কার্যকলাপের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনসহ দেশের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছিল বিএনপি।

শায়খ আবদুর রহমান, মুফতি হান্নান ও বাংলা ভাইয়ের মতো কুখ্যাত জঙ্গি নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত করা হয়েছিল। ১০ ট্রাক অস্ত্র, সিরিজ বোমা হামলাসহ অসংখ্য জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলায় ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল বাংলাদেশ।’

বিএনপি শাসনামলে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার কথা তুলে ধরে কাদের বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের নারকীয় গ্রেনেড হামলার নেপথ্য কারিগর ও হামলাকারীদের পৃষ্ঠপোষকদের মুখে নিরাপত্তার কথা জনগণের সঙ্গে উপহাস ছাড়া আর কিছু নয়।

মেগা প্রকল্পের নামে দুর্নীতির যে অভিযোগ ফখরুল করেছেন, তারও জবাব দেন আওয়ামী লীগ নেতা।  তিনি বলেন, বাংলাদেশের মেগা প্রকল্প দেখলে বিএনপি মেগা-যন্ত্রণায় ভোগে।  কারণ বিএনপির সময় বাংলাদেশের অর্থনীতি এতটাই নাজুক অবস্থায় ছিল যে, তারা দেশে কোনো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের মানসিকতা, সাহস, দক্ষতা এবং আর্থিক সামর্থ্যের কথা চিন্তাও করতে পারে নাই। 

কারণ, তারা দুর্নীতি ও লুটপাটে আকণ্ঠ নিমজ্জিত ছিল।  বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা সুদক্ষ নেতৃত্ব, প্রজ্ঞা, সততা ও মেধা দিয়ে বাংলাদেশকে আজকে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছেন।  বিশ্বসভায় আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।  বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে ক্ষুধা-দুর্ভিক্ষ মঙ্গা-খরা ও দারিদ্র্যকে জয় করে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের নবতর অভিযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে। ’  

পাকিস্তানি প্রেতাত্মা ও ষড়যন্ত্রকারীরা’ যতই অপচেষ্টা চালাক না কেন, বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে বাংলার জনগণ দেশবিরোধী সকল চক্রান্ত মোকাবিলা করে উন্নয়নের এই অভিযাত্রা অব্যাহত রাখবে বলেও উল্লেখ করেন কাদের।  বলেন, ‘আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা একটি উন্নত-সমৃদ্ধ শান্তিপূর্ণ ও কল্যাণকর রাষ্ট্র বিনির্মাণে সক্ষম হব, ইনশাল্লাহ্। ’ 



© দিন পরিবর্তন