নিজস্ব প্রতিবেদক
Published:04 Mar 2024, 02:16 PM
ফায়ার সার্ভিসে আসছে পরিবর্তন
অগ্নিকাণ্ড, ভূমিকম্প ও বন্যাসহ অন্য যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এ সংস্থাটিকে তেমন আধুনিকায়ন করা হয়নি। এমনকি প্রতিবছর বাজেটে এই অধিদপ্তরের জন্য সরকারি ব্যয়ও থাকে অপ্রতুল। ফলে নানা সংকটে ধুকছে এ সংস্থাটি। তবে যান্ত্রিক বহরে আধুনিক সরাঞ্জমাদি যুক্তসহ অপারেশনাল কাজের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে এবার ফায়ার সার্ভিসে আসছে আমুল পরিবর্তন। সংস্থাটির অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি সেবার মান উন্নয়নে বাড়ছে এর কর্মীদের নানা সুবিধা।
কোথাও আগুন লাগার খবর পেলে লাল রঙের গাড়িতে সাইরেন বাজিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্যের প্রাণ ও সম্পদ রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়েন। উদ্ধার করেন আটকাপড়াদের। শুধু আগুন নেভানোর ক্ষেত্রেই নয়; ভূমিকম্প, ভূমিধস, পানিতে ভেসে যাওয়া, নৌকাডুবিতে নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে কখনো পিছপা হয় না ফায়ার ফাইটাররা। এমন কর্মকাণ্ডের জন্য মানুষের কাছে অনেকটাই আস্থার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। নানা সংকট থাকলেও এখন ফায়ার সার্ভিসের সেবার সক্ষমতা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। আধুনিক হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের সেবার ক্ষেত্র।
বর্তমান বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি ও অসহায়ত্ব লক্ষ্য করা যায় অগ্নি দুর্ঘটনার সময়। কেননা অগ্নিকাণ্ডে যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয় তার চাইতে বেশি ক্ষতি হয় উদ্ধার ব্যর্থতায়। দেশে ছোটখাটো অগ্নিকাণ্ড ঘটলে তা সহজে নির্বাপণ করতে পারলেও বড় অগ্নিকাণ্ডের সময় দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স নামক সংস্থাটির; যা ইতোমধ্যে বঙ্গবাজার, গুলশান, বসুন্ধরা, আমিনবাজার, পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টা, বনানীর এফআর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ড এবং সীতাকুণ্ড ও সর্বশেষ রাজধানীর বেইলি রোডসহ বিভিন্ন অগ্নিকাণ্ডে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। প্রত্যেকটা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ভয়ঙ্কর মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে শুধু সরঞ্জামের অভাবে উদ্ধার ব্যর্থতায়। এখনে প্রমাণ হয়, অন্যান্য ক্ষেত্রে দেশে প্রভূত উন্নতি সাধন হলেও শুধু অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থায় পিছিয়ে। দেশে অত্যাধুনিক অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম অপ্রতুল।
সত্যিকার অর্থে আমাদের দেশে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনুন্নত। দেশে ১০-১২তলা বা তার অধিক বহুতল ভবনে অগ্নিসংযোগ ঘটলে সেটা অল্প সময়ে নেভানোর মতো অত্যাধুনিক সরঞ্জাম নেই বললেই চলে ফায়ার সার্ভিসের কাছে।
বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যেখানে অগ্নিনির্বাপণের ক্ষেত্রে এলইউএফ সিক্সটি, ফায়ার বল, হাই ফগ, ফায়ার ফাইটিং রোবট, ফায়ার ফাইটিং ড্রোন, স্কাই সেইভার ও স্মার্ট ডিটেক্টরের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার করছে, সেখানে আমাদের দেশে সর্বোচ্চ প্রযুক্তি হিসেবে টিটিএল বা টার্ন টেবল লেডার ব্যবহার করা হয়।
ফায়ার সার্ভিস সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, সরকারের সময়োপযোগী উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা আর অধিদফতরের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ফায়ার সার্ভিসের নানা অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে। অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির সেবার মান অনেক বেশি আধুনিক ও গতিশীল। আর সেবার মান আরো অধুনিকায়নে তৈরি হচ্ছে মহাপরিকল্পনা।
এরই মধ্যে জনসেবায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাষ্ট্রের বেসামরিক সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২৩’ প্রদান করা হয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে। ২০২২ সালের ৪ জুন সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নি নির্বাপণকালে প্রাণ হারানো ১৩ ফায়ার ফাইটারকে সরকারিভাবে ‘অগ্নি বীর’ খেতাবে ভূষিত করা হয়েছে। কিছুদিন আগে তুরস্কের ভূমিকম্পে উদ্ধারকাজে অংশ নিয়ে দেশের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে সুনাম বয়ে এনেছেন প্রতিষ্ঠানটি।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির যান্ত্রিক বহরে যুক্ত হয়েছে বিশ্বের সর্বাধিক ৬৮ মিটার উচ্চতার টার্ন টেবল লেডার, রিমোট কন্ট্রোল ফায়ার ফাইটিং ভেহিক্যালসহ অনেক আধুনিক সরঞ্জাম। সকল বিভাগে টার্নটেবল লেডার গাড়ি প্রদানের মাধ্যমে তার সময়েই বিভাগীয় পর্যায়ে বহুতল ভবনে অপারেশনাল কাজ পরিচালনার সক্ষমতা সৃষ্টি করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি সেবার মান উন্নত হচ্ছে। এর কর্মীদের নানা সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন জানান, বিশ্বমানের উন্নত প্রশিক্ষণ সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের সময়ে মুন্সীগঞ্জে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফায়ার একাডেমি’ স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। এই একাডেমি স্থাপনের কাজসম্পন্ন হলে সেখানে বিশ্বমানের অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজের প্রশিক্ষণ সুবিধা সৃষ্টি হবে।
মহাপরিচালক জানান, ফায়ার সার্ভিসের যান্ত্রিক বহরে যুক্ত হয়েছে বিশ্বের সর্বাধিক উচ্চতার টার্ন টেবল লেডার। সামনে যুক্ত হবে, এলইউএফ সিক্সটি, ফায়ার বল, হাই ফগ, ফায়ার ফাইটিং রোবট ও ফায়ার ফাইটিং ড্রোন। উন্নয়নের এই ধারা চলমান রয়েছে এবং ফায়ার সার্ভিসের সেবা সক্ষমতা আগের তুলনায় বহুগুণ বেড়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ‘দুঃসময়ের বন্ধু’ হিসেবে সব দুর্যোগে সবার আগে বিপদগ্রস্ত মানুষকে সেবা প্রদানের জন্য নিবেদিত রয়েছেন।
© দিন পরিবর্তন