নিজস্ব প্রতিনিধি
Published:01 Feb 2024, 02:38 PM
বগুড়ায় উত্তাপ ছড়াচ্ছে আলু, খুচরা বাজারে অজুহাত
নজরুল ইসলাম দয়া, বগুড়া :
ভরা মৌসুমেও খুচরা বাজারে আলুর দাম না কমায় বাজারে গিয়ে আয়-ব্যয়ের হিসাব মিলাতে পারছেন না স্বল্প আয়ের ক্রেতারা। বাজারে চাহিদা ও দাম বেশির সুযোগে আড়ৎদাররা সরাসরি মাঠে গিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে আলু সংগ্রহ করছেন। বগুড়া শহরসহ ১২টি উপজেলার বাজারগুলোতে মান ও জাতভেদে প্রতি কেজি আলু ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে। তবে পাইকারি মোকামে বেশি দামসহ নানা অজুহাত দিচ্ছেন খুচরা দোকানিরা। কৃষক পর্যায় থেকে পাইকারি বিক্রেতা পর্যন্ত দাম ঠিক থাকলেও খুচরা পর্যায়ে অনেক বেশি দামে আলু বিক্রি করা হচ্ছে। ক্রেতারা বলছেন, উত্তোলনের ভরা মৌসুমেও বাজারে উত্তাপ ছড়াচ্ছে আলু। দোকানিরা যে যার ইচ্ছেমত দাম নিচ্ছেন। আলু চাষিরা বলছেন, প্রতি বিঘা আলু উৎপাদনে জাতভেদে ৩০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ পড়েছে। পাইকারি বাজারে ২৫ থেকে ২৭ টাকার ওপরে দাম মিলছে না। অথচ খুচরা বাজারে দাম চড়া। দেশের বড় পাইকারি সবজি বাজারের অন্যতম বগুড়ার মহাস্থান হাট। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ছোট-বড় আড়ৎদার রয়েছেন। পাইকারি বাজারে আলুর ব্যাপক আমদানি হচ্ছে।
কৃষি বিভাগ সুত্র জানায়, চলতি মৌসুমে বগুড়া জেলায় আলুর চাষ হয়েছে ৫৫ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে। ১৩ লাখ ২০ হাজার ৪৭৫ মেট্রিকটন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। হেক্টর প্রতি ফলন পাওয়া গেছে ১৭ দশমিক ৯৩ মেট্রিকটন। এরমধ্যে ৯ হাজার ৯০৮ হেক্টর জমির আলু উত্তোলন সম্পন্ন হয়েছে। গত বছর ৫৩ হাজার ২১ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদন হয়েছিল ১২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিকটন। কৃষি কর্মকর্তারা জানান, গত বছর অন্য সবজির মূল্য বৃদ্ধির কারণে আলু উপর চাপ বেশি পড়েছিল। এবার বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলার শিবগঞ্জ, কাহালু, নন্দীগ্রাম, শাজাহানপুর ও দুপচাঁচিয়া উপজেলায় বেশি আলু চাষ হয়ে থাকে। নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত আলু বীজ রোপন করা হয়। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত আলু উত্তোলন করেন চাষিরা।
পাকড়ি, এস্টারিক্স, কারেজ, কার্ডিনাল, ডায়মন্ড, গ্র্যানোলাসহ ৩০ জাতের আলু চাষ হয় বগুড়ায়। জমিতে উচ্চ ফলনশীল সানসাইন জাতের আলু চাষ হয়েছে।
নন্দীগ্রাম উপজেলার আলু চাষি শাহ আলম ও দুপচাঁচিয়া উপজেলার আলু চাষি তোফাজ্জল হোসেন বলেন, পাইকারি বাজারে আলুর দাম কম হলেও খুচরা দোকানে দাম বেশি। বীজ, সার, কীটনাশক ও সেচসহ প্রতি বিঘা আলু উৎপাদনে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পাইকারি বাজারে ২৫ থেকে ২৭ টাকার ওপরে দাম মিলছে না।
কাহালু উপজেলার আলু চাষি আজাদ ও মিজানুর বলেন, প্রতিবিঘা আলু উৎপাদনে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। জাতভেদে কারো কারো প্রতিবিঘা খরচ ৩০হাজার টাকা। আড়ৎদাররা সরাসরি জমি থেকে কৃষকের কাছ থেকে আলু কিনছেন। শুরুর দিকে অপরিপক্ক আলু বিক্রি করে বাড়তি লাভ করেছেন চাষিরা। বর্তমানে চাষির চেয়ে লাভবান হচ্ছেন আড়ৎদার ও দোকানিরা।
ভরা মৌসুমেও খুচরা বাজারে আলুর দাম না কমায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। গতকাল বৃহস্পতিবার নন্দীগ্রাম উপজেলার শিমলা বৈশাখী বাজারে হাট বসে। সেখানে জাতভেদে আলু বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০টাকা। সেখানে বাজার করতে আসা আনোয়ার ও ফারুক নামের দুই ক্রেতা বলেন, খুচরা বাজারে সব সবজিরই দাম বেশি। ভরা মৌসুমে আলুর দাম বেশি হওয়ায় নিম্নআয়ের মানুষেরা বিপাকে পড়েছেন। বাজারে এতো আলু অথচ দাম কমে না।
© দিন পরিবর্তন