logo

বসন্তের আগমনে সেজেছে রাবিপ্রবি

নিজস্ব প্রতিনিধি

Published:09 Mar 2024, 05:42 PM

বসন্তের আগমনে সেজেছে রাবিপ্রবি


আহ্সান হাবীব,(রাবিপ্রবি প্রতিনিধি):

শীতকে বিদায় জানিয়ে নতুন রূপে সেজেছে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রাবিপ্রবি)। হিমেল হাওয়া, কুয়াশার চাঁদর ছেড়ে ফাগুন হাওয়ায় নানান ফুলের সমারোহে নিজেকে রাঙিয়েছে ৬৪ একর। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে পাহাড়ের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরজুড়েই গরম হাওয়া উপলব্ধি করা যায়। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, শীতে কুঁকড়ে থাকা পাহাড় গুলো বসন্ত আসলেই নতুন রূপে সেঁজে ওঠে।

পাহাড়ের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাহাড়গুলো যেন এক-একটি দৃশ্যমান ছবির গল্প। যে গল্প একেক সময় একেক ঋতুর গল্প শোনায়। পাহাড়ের প্রতীক এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে চলা কাপ্তাই লেকের চরিত্রের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনেকটা নির্ভরশীল। ভরা যৌবনা কাপ্তাই লেকের বুকে নৌকা, সাম্পান ছুটে চলার যে প্রতিযোগিতা তা কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিঙ্গেল ব্রিজ নামক জায়গায় না আসলে বোঝা যায় না। ভাবনার গভীরতা মনের উন্মুক্ত দরজায় বারে বারে কড়া নেড়ে জানিয়ে দেয় সিঙ্গেল ব্রিজের অপরূপ সৌন্দর্য। প্রতিবছর শীত শেষে নিয়ম করেই বসন্ত আসে। তবে অন্যান্য বছরের বসন্তের বিপরীতে চলতি বছর একটু আলাদা।

এবারের বসন্তে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীনদের বরণ করে নেন প্রবীণরা। নবীন বরণে কিছুটা দেরি হলেও বসন্তের আবহাওয়া সে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যুক্ত করেছে নতুন মাত্রা। প্রশাসনিক ভবন থেকে একাডেমিক ভবন পর্যন্ত সব জায়গায় যেন ফুলের সমারোহ। বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে লাগানো গাছের ফোটা ফুলে মৌমাছি, পিঁপড়া, প্রজাপতির ছোটাছুটি, মধু সংগ্রহ ও ব্যস্ততা দেখলে মনে হতেই পারে শীতের তীব্রতা পার করে ওরা ঋতুরাজ বসন্তে আবারো কর্মচঞ্চল।

বসন্ত মানে নতুন ফুল, পাতা ও গ্রীষ্মের ফলের আগমনের বার্তা। কাঁঠাল,আমের নতুন মুকুল, আর তেঁতুল তলায় আড্ডার পাশাপাশি ক্যাফেটেরিয়ার টঙ্গের আড্ডার সাথে সাথে দূর দিগন্তে চোখে পরে ঘাসফুলের শুভ্র সাদা চিত্র। পাহাড়ের নীচ থেকে দেখলে মনে হতেই পারে এ যেন পাহাড় উপর থেকে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আকাশকে ধরার কাশফুলের ব্যর্থ চেষ্টা। মাঝে মাঝে বাঁশের টঙ্গে ছয় তারের গিটারে কেউ কেউ গেয়ে ওঠে দুই-এক লাইনের মন ভোলানো গান। চায়ের আড্ডার সাথে সাথে সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকাল। আস্তে আস্তে নামে সন্ধ্যা। শেষ সাদা গাড়িটাও ততক্ষণে রওনা দিয়েছে নিজের গন্তব্যে।

বসন্তের কথা বলতে গেলে যে দৃশ্য চোখে ভেসে ওঠে তা হচ্ছে পরিষ্কার আকাশ। বর্ষার গুমট আকাশের তুলনায় এই আকাশ বেশি আলো ছড়ায়। সেই আলোর ছটার প্রতিফলনে ঝলমলিয়ে ওঠে সবুজের প্রতীক রাবিপ্রবির একাডেমিক দালানগুলো। দূরে আঁকা-বাঁকা সাপের ন্যায় রাস্তা থেকে থেমে থেমেই ভেসে আসে যানবাহনের শব্দ। ক্লাসের পাশাপাশি রাবিপ্রবিয়ানদের পাখির গান শোনার অভ্যাসটা পুরানো হলেও বসন্তে তা যেন নতুন হয়ে ওঠে। দূরের পাহাড়ের বনফুল আর রঙিন দৃশ্যের মুগ্ধতার ধন্দে পরে ক্লাসে কেউ কেউ হয়ে ওঠে অমনোযোগী।

বিভিন্ন পর্যটকের আগমনে পুরো বছর জুড়ে ব্যস্ত থাকে রাঙ্গামাটি। রাঙ্গামাটি ও কাপ্তাই লেক ভ্রমণের কারণে প্রায় সময় বিভিন্ন পর্যটকরা ভিড় জমায় এই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রান্তে। ক্যাম্পাসের প্রাণ সিঙ্গেল ব্রিজ, কাফেটেরিয়া, মুজিব ম্যুরাল ভ্রমণ শেষে পছন্দের কিছু ছবি প্রায়ই তারা মুঠোফোনে বন্দি করে ফিরে যান আপন গন্তব্যে। এসব দৃশ্য রাবিপ্রবিয়ানদের এখন চির-চেনা প্রতিদিনের অভ্যাস। তবে অচেনা দৃশ্য যেটা তা হলো অল্প সময়ে তাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ভালোলাগা তৈরি হওয়া।

নানান ফুল আর বাহারি রঙের সাজে সজ্জিত ক্যাম্পাস এখন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। অথচ কিছুদিন আগেও শীতের কুয়াশায় জড়সড় ছিল রাবিপ্রবিয়ানদের প্রাণের ৬৪ একর। বসন্তের আগমনেই এই ক্যাম্পাস ফিরে পেয়েছে তার হারানো যৌবন। সে যৌবন আমৃত্যু লালন করা প্রতিটি ক্যাম্পাস প্রেমিক হৃদয়ে ভালোবাসার নিরেট স্পন্দন হয়ে থাকুক যুগ থেকে যুগান্তরে।



© দিন পরিবর্তন