নিজস্ব প্রতিবেদক
Published:24 Feb 2024, 02:06 PM
বাজারে ক্রেতার হাহাকার
শীত যাই যাই করছে। চলে যাচ্ছে সবজির ভরা মৌসুম। তবুও চড়া দাম। ধান ঘরে তোলার সময়ও উল্টো হাঁটে চালের বাজার। পেঁয়াজ-আলু ক্রেতাদের পুড়াচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। খাসি-গরুর মাংস নিম্ম ও মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে। রুই-কাতলা কেনা তো দূরের কথা; ওদিকে তাকানোরই সাহস করেন না সাধারণ মানুষ। এদের কাছে মাছ বলতেই এতদিন ছিল-পাঙাস, তেলাপিয়া, চাষের কই, ছোট সিলভার কার্প। এগুলোরও দাম বেড়ে গেছে। লবণ থেকে শুরু করে চিনি, চাল-আটা-ময়দা থেকে শুরু করে সব ধরনের ডাল ও ছোলা-খেজুর এবং মসলাসহ প্রতিটি মুদি সদাইয়ের দাম চড়া। সামনে আবার রমজান মাস। সব মিলিয়ে বাজারে চলছে ক্রেতার হাহাকার।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দাভাব, বাজার মনিটরিংয়ের অভাব, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটসহ নানাবিধ কারণে বাজারে অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে, পণ্যের দাম কী পরিমাণে বাড়া উচিত এবং কী পরিমাণে বেড়েছে, এ খবর রাখতে কোনো সংস্থাকেই মাঠে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে না। ফলে, যে যার মতো পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। এতে সব শ্রেণির ক্রেতারা পড়ছেন ভোগান্তিতে।
রোজার আগেই মুরগির বাজারে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। ক্রেতারা বলছেন, রোজা না আসতেই মুরগির দামের এই অবস্থা। এভাবে সবকিছুর দাম বাড়তে থাকলে আমরা চলব কী করে?
গতকাল রাজধানীর বাজারগুলোয় ঘুরে দেখা যায়, সব ধরনের মুরগির মাংসের দাম ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০ থেকে ২১০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩১০ টাকা, পাকিস্তানি মুরগি ২৯০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, মুরগির দাম বেশ কয়েকদিন ধরেই বেড়েছে। কেনা দাম বেশি পড়ায় বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। দাম বেড়ে যাওয়াতে বিক্রিও কিছুটা কমে গেছে।
মুসলেম উদ্দীন নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মুরগির দাম সবসময় বাড়া-কমার মধ্যেই থাকে। তবে বাড়ার প্রবণতাই বেশি। এখন আমাদের কেনা দাম বেশি হলে কিছু করার থাকে না।
তবে বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে মুরগির দামের এই ঊর্ধ্বগতি বিপাকে ফেলেছে সাধারণ ক্রেতাদের। মোস্তাফিজুর রহমান নামে এক ক্রেতা বলেন, কয়েক সপ্তাহ আগেও মুরগির দাম কম ছিল, হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। কেন বেড়েছে, তার কোনো উত্তর নেই। কিনলে এই দামেই কিনতে হবে।
চাকরিজীবী আব্দুল আজিজ বলেন, রোজা না আসতেই মুরগির দাম বেড়ে গেছে। সবকিছুর দামেই ঊর্ধ্বগতি। এভাবে যদি সবকিছুর দাম বাড়তে থাকে, তাহলে আমরা চলব কীভাবে?
স্থানীয় ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বলেন, গরুর মাংসের দাম বেশি বিধায় সাধারণ ক্রেতারা মুরগিই কিনে থাকে। এখন সেটাও বেড়ে যাচ্ছে রোজার আগেই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
সেগুনবাগিচা বাজারে একজন ক্রেতা বলেন, কোন কিছুর দাম কমছে না। একবার বাড়লে সেটা আর কমে না। আমরা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। আর সেটা দেখার কেউ নেই।
বাজারে বেশিরভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যও চড়া দামে গিয়ে আটকে গেছে। বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীতের সিম, মুলা, শালগম, ফুলকপি ও বাঁধাকপি এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকার মধ্যে। যা গত সপ্তাহের চেয়ে প্রকারভেদে ১০-২০ টাকা কম। এরমধ্যে প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি আকারভেদে ৩০ থেকে ৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া আলুর কেজি ৩০ টাকা, বেগুন ৬০-৮০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, টমেটো গাজর ও শসার কেজি ৪০ টাকা, চিচিঙা ৭০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, বরবটি ও করলা ৮০-১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, রোজার বাজারে প্রায় প্রতিবছরই দাম বাড়ে চিনির। এবার দাম কমাতে পণ্যটি আমদানিতে কিছুটা শুল্কছাড় দিয়েছে সরকার। এছাড়া ভোজ্যতেল চাল ও খেজুরের শুল্ক কর কমানো হয়েছে। তবে এসব পণ্যের দামে তার কোনো প্রভাব পড়েনি।
রাজধানীতে এখন এক কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫-১৫০ টাকায়। গত বছর একই সময়ে দর ছিল ১১০-১২০ টাকা। এছাড়া বাজারে চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, আটা, পেঁয়াজ, মাছ, মাংস ও ডিমের দাম এখনও চড়া।
এদিকে, বাজারে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা বেড়েছে গরুর মাংসের দাম। ভোটের আগে প্রতি কেজির গরুর মাংস ৬০০ টাকা পর্যন্ত নামলেও ভোটের পরে তা ৭০০ টাকায় গিয়ে ঠেকে। কিন্তু গত এক সপ্তাহে আরও দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়।
গরুর মাংসের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মুর্তজা বলেন, রোজা ও কোরবানিকে সামনে রেখে খামারিরা গরু বিক্রি কমিয়েছে। সে জন্য বাজারে সরবরাহ কম, দাম বাড়ছে।
এদিকে, গরুর মাংসের দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। সব মিলিয়ে মানুষ স্বস্তিতে নেই। এদিকে, বাজারে চড়া দামে আটকে আছে ব্রয়লার মুরগি ও ফার্মের মুরগির ডিমের দাম। প্রতি হালি বাদামি ডিম ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বড় বাজারে। আর পাড়া মহল্লার দোকানে প্রতি হালি ডিমের দাম ৫০ টাকা, ডজন ১৫০ টাকা। এছাড়া ব্রয়লার মুরগির কেজি ২২০ থেকে ২৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
শতক পেরিয়ে যাওয়া পেঁয়াজের দাম এখনও কমেনি। প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়। একই সঙ্গে চড়া দামে আদা ও রসুন দুই-ই বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা দরে।
একই সঙ্গে ছোট মসুর ডাল ১৪০ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১০ টাকা, মুগ ডাল ১৭৫ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, বুটের ডাল ১১০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেখা যায়, ছোট মসুর ডাল ৫ টাকা, বুটের ডাল ১০ টাকা, ছোলা ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া মুদি পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৩ টাকা, খোলা সয়াবিন ১৪৯ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৪৫ টাকা, খোলা চিনি ১৪০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১৩০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
© দিন পরিবর্তন