নিজস্ব প্রতিনিধি
Published:01 Feb 2024, 05:22 PM
বিক্ষোভে উত্তাল ব্রাসেলস, ডিম-পাথর নিক্ষেপ
কর এবং ক্রমবর্ধমান ব্যয় বৃদ্ধি মোকাবিলায় জনগণকে সহায়তা করার পদক্ষেপ নিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতাদের সম্মেলন ঘিরে তীব্র প্রতিবাদ করছে ইউরোপের হাজার হাজার মানুষ। বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ডিম এবং পাথর ছুঁড়েছেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা কৃষকরা। একই সঙ্গে ভবনের কাছে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভ করেছেন তারা।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রাসেলসে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ভবনের সামনে বিক্ষোভ ঠেকাতে বসানো প্রতিবন্ধকতা গুঁড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন কৃষকরা। এ সময় পুলিশ গরম পানি ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়।
স্থানীয় একজন কর্মকর্তা বলেছেন, পার্লামেন্ট ভবনের চত্বরের একটি মূর্তির সামনে কৃষকরা তাদের ট্রাক্টর নিয়ে জড়ো হয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্র ব্রাসেলসের প্রধান প্রধান সব রাস্তা প্রায় এক হাজার ৩০০ ট্রাক্টর দিয়ে অবরোধ করে রেখেছেন কৃষকরা। ব্রাসেলসে এই বিক্ষোভে ইতালি, স্পেন এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশের কৃষকরাও অংশ নিয়েছেন।
ইউরোপীয় কাউন্সিলের সদরদপ্তরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নেতাদের বৈঠকের সময় বাইরে বিক্ষোভ করেন ক্ষুব্ধ কৃষকরা। এ সময় ওই এলাকায় দাঙ্গা পুলিশের সদস্যরা নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলেন। কৃষকরা বলছেন, তাদের পর্যাপ্ত অর্থ সহায়থা দেওয়া হচ্ছে না। ক্রমবর্ধমান কর এবং সবুজ বিধি-বিধানের কারণে তাদের দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো দশা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া বিদেশ থেকেও অন্যায্য প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা।
আগামী জুনে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই নির্বাচনে ইউরোপের চরম ডানপন্থীরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। চরমপন্থীদের উত্থানে ইউরোপে কর এবং জনসাধারণের জীবনযাপনের ব্যয় আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যে কারণে ইউরোপজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। গত কিছুদিন ধরে স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি ও অন্যান্য দেশে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ।
স্পেনের কৃষকদের সংগঠন আসাজারের প্রতিনিধি হিসেবে ব্রাসেলসে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন কৃষক হোসে মারিয়া কাস্তিলা। তিনি বলেন, এখানে যা ঘটছে আপনি দেখছেন : ইউরোপীয় নির্বাচন আসছে এবং রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি ইউরোপীয় কমিশনও অত্যন্ত বিচলিত। আমি মনে করি, একসাথে ইউরোপের সব কৃষকের রাস্তায় নামার এটাই সেরা মুহূর্ত।
বেলজিয়াম এবং অন্যান্য দেশের কৃষকরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের বৈঠকে নিজেদের দাবি-দাওয়ার কথা তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। বেলজিয়ামের কৃষকদের একটি ট্র্যাক্টরে ব্যানার দেখা যায়। যেখানে লেখা রয়েছে, ‘‘আপনি যদি পৃথিবীকে ভালোবাসেন, তাহলে যারা এই পৃথিবীকে পরিচালনা করেন তাদের সমর্থন করুন।’’
আরেকটি ব্যানারে ‘‘কৃষক নেই মানে খাবার নেই’’ লেখা রয়েছে। ব্রাসেলসের বাইরে কেভিন বার্টেনস নামের একজন কৃষক রয়টার্সকে বলেন, ‘‘আপনি দেখেন আমরা আজকে এখানে কত মানুষ একসাথে এসেছি, পুরো ইউরোপজুড়ে মানুষ এক হয়েছে। এই দৃশ্য দেখলে আপনাকে অবশ্যই আশা রাখতে হবে। আমাদের অবশ্যই আশা করতে হবে যে, এই সব লোকজন বুঝবে কৃষিকাজ দরকার। আপনি জানেন, এটা খাদ্য।’’
কৃষকদের বিক্ষোভের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট রবার্টা মেটসোলা। পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে অবস্থান নেওয়া কৃষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, আমরা আপনাদের দেখছি, আপনাদের কথা শুনছি। ইউক্রেন থেকে আমদানি সীমিত করতে এবং পতিত জমিতে চাষাবাদের ক্ষেত্রে পরিবেশগত বিধি শিথিল করার বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাহী কমিশনের প্রস্তাবসহ কৃষকদের জন্য ইতিমধ্যে বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ফ্রান্সে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ করছেন দেশটির হাজার হাজার কৃষক। বিক্ষোভের ঘটনায় দেশটির সরকার কৃষি ডিজেলে ভর্তুকি ধীরে ধীরে কমানোর পরিকল্পনা বাতিল এবং আরও সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু দেশটির কৃষকরা বলছেন, সরকারের এই পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। কৃষকদের বিক্ষোভ স্পেন, পর্তুগালসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে।
© দিন পরিবর্তন