নিজস্ব প্রতিবেদক
Published:03 Mar 2024, 06:39 PM
বিভক্ত জাপা, দেবরকে ‘চাপে’ রাখতে ভাবির সম্মেলন
জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। সম্প্রতি তিনি নিজেকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন। কয়েকবার বিভক্ত হওয়া জাতীয় পার্টির সম্মেলনও করতে যাচ্ছেন তিনি। রওশন এরশাদ নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করলেও জিএম কাদেরকে দল থেকে অব্যাহতি দেননি। আবার নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন অনুযায়ী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের। ফলে দলীয় অবস্থান থেকে রওশন এরশাদ সম্মেলন করতে পারেন না বলে দাবি জিএম কাদেরপন্থি নেতাদের। মূলত জিএম কাদেরকে চাপে রাখতেই এই সম্মেলনের আয়োজন বলে জানান তারা।
অন্যদিকে রওশন এরশাদের সঙ্গে রয়েছেন জিএম কাদেরের কাছ থেকে অব্যাহতি পাওয়া একাধিক হেভিওয়েট নেতা। আগামী( ৯ মার্চ) রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)-এ অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে নতুন করে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হবে। এতে জিএম কাদেরের ক্ষমতা কমবে বলে মনে করছেন রওশনপন্থিরা। সম্মেলনে চমক আসার কথাও বলছেন কেউ কেউ।
তবে জিএম কাদেরপন্থিদের দাবি, এই সম্মেলন হালে পানি পাবে না। আবার সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দূরে সরে গেছেন রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নেতা।
সম্মেলন আয়োজনের সঙ্গে জড়িত নেতারা বলছেন, জাপার দশম জাতীয় সম্মেলন করতে জোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। রাজধানীতে সাঁটানো হচ্ছে পোস্টার। সারাদেশ থেকে তাদের কয়েক হাজার নেতাকর্মী ওইদিন ঢাকায় আসবেন। সম্মেলনের পর তারা নির্বাচন কমিশনে (ইসি) কার্যবিবরণী জমা দেবেন।
রওশনপন্থি অংশের মুখপাত্র সুনীল শুভ রায় জাগো নিউজকে বলেন, ‘সম্মেলন ভালো হবে। সারাদেশ থেকে কয়েক হাজার কাউন্সিলর থাকবেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব গঠিত হবে। আমরা ইসিকে জানিয়ে দিয়েছি, রওশন এরশাদ আমাদের নেতা। এটা নিয়ে কোনো সংশয় নেই।’
জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর থেকে দলে তার প্রথম স্ত্রী রওশন এরশাদ এবং ভাই জিএম কাদেরের বিরোধ ও টানাপোড়েন চলে আসছে। সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে এ বিরোধ আরও প্রকট হয়। নির্বাচনে অংশ নেননি রওশন ও তার ছেলে শাদ এরশাদ। সমঝোতায় ২৬টি আসন পেয়েও নির্বাচনে জাপার ভরাডুবি হয়। এর জেরে গত ২৮ জানুয়ারি রওশন নিজেকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে তিনি জাপার চেয়ারম্যান পদ থেকে জিএম কাদের ও মহাসচিব পদ থেকে মুজিবুল হক চুন্নুকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘোষণা দেন। এর আগেও রওশন নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছিলেন।
অন্যদিকে রওশনের পক্ষ নেওয়ায় জিএম কাদের একাধিক সিনিয়র নেতাকে অব্যাহতি দেন। অব্যাহতি পাওয়া এই শীর্ষ নেতারা ভিড়েছেন রওশনের দলে। গুঞ্জন রয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত জাতীয় পার্টির ১১ সংসদ সদস্যের মধ্যে দু-তিনজন রওশনের সম্মেলনে অংশ নিতে পারেন। এ প্রসঙ্গে জিএম কাদেরের কাছ থেকে অব্যাহতি পাওয়া নেতা সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, ‘দেখতে থাকেন। অনেক কিছুই হতে পারে।’
সম্মেলনের বিষয়ে জাপার স্বঘোষিত চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ বলেন, ‘সম্মেলনের বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র হতে পারে। সম্মেলন সফল করার সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আমরা পুলিশ প্রশাসনের অনুমতিও পেয়েছি। ৯ মার্চ কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের নিয়ে উপস্থিত হবেন।’
এ বিষয়ে জাপার বহিষ্কৃত কো-চেয়ারম্যান ও সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘সম্মেলনটা জাতীয় পার্টির ইতিহাসে একটা টার্নিং পয়েন্ট হবে। এর মাধ্যমে পার্টি ঘুরে দাঁড়াবে। ভোটে আমাদের যে বিরাট ক্ষতি হয়েছে, সেটা কাটিয়ে নতুন পরিকল্পনায় আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবো। সারাদেশে থেকে সাড়া পাচ্ছি।’ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোনো দল টিকে থাকতে পারে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কারও কাছ থেকে কোনো বাধা আসবে না। সম্মেলন বর্ণিল হবে।’
যদিও একাধিক নেতাকর্মী জানিয়েছেন, জাতীয় পার্টিতে জিএম কাদের স্বেচ্ছাচারিতা চালাচ্ছেন। এই সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি কিছুটা চাপে পড়বেন এটা নিশ্চিত। এরই মধ্যে জিএম কাদের বলেন, ‘জাতীয় পার্টিতেও সংকট আছে।’ সম্মেলনপরবর্তী চাপ জিএম কাদের কীভাবে সামলান সেটাই এখন দেখার বিষয়।
জিএম কাদেরপন্থি এক নেতা বলেন, ‘সরকারের নির্দেশে জাপাকে চাপে রাখতেই এই সম্মেলন হচ্ছে। তবে এসব হালে পানি পাবে না। রওশনপন্থিদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে।’ এদিকে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে রওশন এরশাদের কাছ থেকে সরে গেছেন তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নেতা। যার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ, ইকবাল হোসের রাজু। রওশন এরশাদের সাম্প্রতিক অনুষ্ঠানে তাদের দেখা যায়নি।
ইকবাল হোসের রাজুর দাবি, সম্মেলনে তারা নেই। তিনি বলেন, ‘আমরা এই সম্মেলনে নেই। এমন কী ঘটনা ঘটলো যে রওশন ম্যাডাম চেয়ারম্যান হলেন? মামুনের কী ব্যাকগ্রাউন্ড আছে তাকে মহাসচিব করা হলো? রওশন এরশাদ বললেই জিএম কাদের বাদ হয়ে যাবেন? এই কাউন্সিল আগে কেন করা হলো না? ভোটের আগে কাউন্সিল করলে জিএম কাদের চাপে থাকতেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘রওশনের সঙ্গে যারা আসছেন, তাদের জিএম কাদের সিট দিতে পারেননি। তাই রওশনের সঙ্গে তারা আসছেন। ডুবন্ত জাহাজে কিছু ডুবন্ত নেতা উঠেছেন। কাউন্সিল হলেও কোনো লাভ হবে না। রোজায় একটা ইফতার পার্টি হবে। কোরবানির আগেই এই কাউন্সিলে যেটা জন্ম নেবে সেটার কোরবানিও হয়ে যাবে।’
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘যখন তাদের (রওশনের) দলে কেউ যাবে, তখন দেখা যাবে। জাতীয় পার্টির নাম নিয়ে আরও ১০টি দল হতে পারে। এটা নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। কাউন্সিল হলেও তাদের নিবন্ধন পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
/মামুন
© দিন পরিবর্তন