logo

ভাইরালের নেশায় তরুণ প্রজন্ম

দিন পরিবর্তন ডেস্ক

Published:27 Dec 2023, 07:12 PM

ভাইরালের নেশায় তরুণ প্রজন্ম


ভাইরাল হতে কে না চায়? এ যেন এক নেশা, যে নেশায় পড়ে মানুষ ভুলে গেছে তাদের মনুষ্যত্ব, ভুলে গেছে তাদের আচার-আচরণ। ভাইরাল হতে এসে কত কাজেই না জড়িয়ে পড়ছে ইদানীংকালকার তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী। তাদের মাথায় যেন সারাক্ষণ ভাইরাল হওয়ার নেশা ঘুর-পাক খাচ্ছে। তাদের যেন একটাই উদ্দেশ্য তারা ভাইরাল হবে, লোকমুখে ছড়াবে তাদের সুনাম। তবে ক’জনই বা তাদের সুনাম করছে কিংবা তাদের ভালো চোখে দেখছেই বা ক'জনে? আসুন একটু গভীরে যাওয়া যাক-


কথা বলছি তাদেরই নিয়ে, যারা কিনা টিকটক নামের প্লাটফর্মে নাম জড়িয়েছে। বলা হয়ে থাকে, এদের টিকটকার। যাদের কাছে যেন ভাইরাল হওয়াটাই একটা বৃহৎ উদ্দেশ্য। অনেকের কাছে এটি আবার আয়ের উৎস্যও। কি এক আজব জায়গা। যে জায়গায় নিজেকে পরিচিত কিংবা ভাইরাল করতে হতে হয় অর্ধ-নগ্ন। নানা অঙ্গ-ভঙ্গিতে নিজেদের প্রদর্শন করতে তারা ব্যস্ত দিবানিশি। এরা কেমন আচরণে উপস্থিত হচ্ছে পাবলিক প্লেসে ভেবে দেখছেন কি?


অথচ, তারুণ্য- জীবনের সূচনাময়ী সূর্যোদয়, জীবন বিচ্ছিন্ন ভাব নয়। যা হচ্ছে এক অকল্পনীয় সাইক্লোন চেতনা, প্রাণচঞ্চল, আলো পিয়াসী, নবযাত্রার অভিলাষী, প্রাণসম্পদ, ইস্পাত কঠিন বিদ্ৎুদীপ্ত। এ জীবন কেবল নতুনত্বের ছোঁয়ায় ভরপুর। এ তারুণ্যের ছোঁয়ায় হয়ে উঠে সকলে নতুনত্বের জয়গানের স্লোগান মাষ্টার। স্বপ্ন দেখে রঙিন যত দিনের। নিজেদের মাঝে কাজ করে উজ্জ্বল ও সজীবতার মতো গভীর আবেগ আর চিন্তাভাবনার।


কিন্তু এত এত সমসম্ভাবনায় তরুণ ও তারুণ্য আজ নানা দুর্বিপাকে আবদ্ধ হচ্ছে। আজকালের সার্বিক সমাজ ব্যবস্থাপনা তারুণ্যকে সমস্যার নিম্ন থেকে নিম্ন পর্যায়ে নিমজ্জিত করেছে। বর্তমানে বিনোদনের নামে চলচ্চিত্রের নগ্নতা আর উলঙ্গপনার ছড়াছড়ি, ফ্যাশন শোর মতো পাশ্চাত্য কালচারটা ধ্বংস করছে আমাদের তরুণ সমাজকে। ইদানীংকার ১৪ ফেব্রুয়ারী খ্যাত বিশ্ব ভালবাসা দিবস নামে যে দিবসের চর্চা করা হয়ে থাকে তা কেবলই তারুণ্যের ধ্বংসাত্মক শক্তির এক ভিন্ন রকমের জোয়ার সৃষ্টির প্রচেষ্টা মাত্র।


আজকাল টিকটকের কিংবা ভাইরাল নেশায় পড়ে ছেলে-মেয়েদের এক সঙ্গে মেলামেশা আর নাচানাচির তালে এরা ভাইরাল হতে চাই। এরা নিজেদের এ ভাইরাল রোগে আক্রান্ত করে ভুলে গেছে তাদের মনুষ্যত্ব আর নীতি-নৈতিকার জায়গাটা। এরা বেড়ে উঠছে নানা দূষণীয় পল্লিতে। এরা নিজেদের সেলেব্রিটি হিসাবে প্রমাণ করতে যেকোনো ধরনের খারাপ ট্রেন্ড তৈরি করছে। এমনকি এরা শিক্ষনীয় বিষয়ের দোহাই দিয়ে ধর্মকে চরম ভাবে ব্যবহার করছে। যা কেবল অবমাননা। এরা ভাইরাল নেশার মোহে পড়ে নিজেদের চরিত্রকে বিসর্জন দিতে মোটেও দ্বিধাবোধ করছে না।
ছেলে ত আছেই পাশাপাশি মেয়েরা সামান্য লাইক পাওয়ার জন্য নিজেদের লোকলজ্জা সব বিসর্জন দেয় টিকটক প্লাটফর্মে। হাতে নিলপলিশ আর ভ্রু-প্লাক তারপর পরখা চুল ইত্যাদি ব্যবহার করে নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ করতে তারা অনবরত ছুটছে। এরা হালালকে হারামভাবে নিচ্ছে ভীষণভাবে। এরা গান-বাজনার নামে নিজেদের অঙ্গ-ভঙ্গি প্রদর্শনে মানুষের আকর্ষণ করাতে যেন নিজেদের চরিত্রকে চরমভাবে নিন্দনীয় জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে।


এরা প্রতারণা করছে মানুষের কাছে। নানাধরনের ফিল্টার আর তথ্যপ্রযুক্তির অপ-ব্যবহার করে সৌন্দর্য প্রদর্শন করছে যা সম্পূর্ণ রূপে প্রতারণা। হাজরো যুবক ছেলে-মেয়ে প্রতারিত হচ্ছে এসব কান্ডকারখানায়। এরা আবার নানা অনৈতিক কাজে নিজেদের জড়িয়ে নিচ্ছে। প্রকাশ্যে সেই অনৈতিকতার ভিডিও ভাইরাল করে ভাইরালের মাত্রা ছড়াচ্ছে দ্বিগুণ ভাবে। পরে এরাই সংবাদ সম্মেলন ডাকছেন এসব বিষয়ে আর সাংবাদিক ভাইয়েরাও সেই সংবাদ সম্মেলনে হাজির হচ্ছেন নিমিষেই। আর এদের সামনে ডজন খানেক মাইক্রোফোন যেন মন্ত্রী-পরিষদ কিংবা কোনো রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশকে হার মানাচ্ছে।


এভাবে চলতে থাকলে আমাদের উঠন্ত, টগবগে কৌতূহলী যুবকরা কি শিখবে? ভবিষ্যতে বড় হয়ে এরা কিসের স্বপ্ন বুনবে? নাকি টিকটকার কিংবা ভাইরাল হওয়ার নেশায় নিজেদেরকে খারাপ পথে পরিচালিত করবে একবার ভেবে দেখেছেন কি? ঝিনুকের ভেতর মুক্তার মতো থাকার ন্যায় আমাদের ভবিষ্যতের তরুণ-যুবকেরা এসব নিয়ে ভাবতে থাকলে নিমিষেই অসুস্থ সংস্কৃতিতে হারিয়ে যাবে। তখন এদের ফেরানো যেমন আর সম্ভব হবে না, ঠিক তেমন তারা নানা অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়বে। তখন এ দায়ভার কে নিবে? তাই এর জন্য দরকার যথাযথ আইনী পদক্ষেপ আর পরিবারের বলিষ্ঠ ভূমিকা। আর তখনই আমরা সমস্বরে বলতে পারবো যে আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ।

লেখক : শিক্ষার্থী ও নিবন্ধকার।

 



© দিন পরিবর্তন