নিজস্ব প্রতিবেদক
Published:02 Jul 2022, 10:38 AM
ভাড়া কমিয়েও যাত্রী মিলছে না বরিশালের লঞ্চে
পদ্মা সেতু ওপর দিয়ে যান চলাচল শুরুর ভাড়া কমিয়েও যাত্রী পাচ্ছে না বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে চলাচলকারী লঞ্চগুলোতে। এতে বিপাকে পড়েছেন লঞ্চমালিকরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সাপ্তাহিক ছুটির আগের দিন গত বৃহস্পতিবার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের বরিশালের ঘাটে রাত ৮টা পর্যন্ত তেমন যাত্রীই ছিল না। অন্যান্য সময় ডেকে যাত্রীতে কানায় কানায় পূর্ণ থাকলেও পদ্মা সেতু চালুর পর থেকেই ডেকের অনেক সিটই ফাঁকা রেখেই ঘাট থেকে লঞ্চ ছাড়ছে। তাছাড়া ভাড়া কমিয়েও কেবিনের অধিকাংশই ভাড়া হয়নি।
এ বিষয়ে ডলার কোম্পানির ২৪টি লঞ্চের মালিক ও যাত্রী পরিবহন সংস্থার সহসভাপতি আবুল কালাম বলেন, ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা থাকলে যাত্রীরা সুফল ভোগ করবে। পদ্মা সেতুর কারণে লঞ্চযাত্রায় কিছুটা প্রভাব পড়েছে। তবে তা বেশি দিন স্থায়ী হবে না। কারণ লঞ্চে চলাচল আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী। আর লঞ্চে যাত্রীদের জন্য থাকা-খাওয়াসহ বিনোদনেরও ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া বেশির ভাগ লঞ্চে রয়েছে ওয়াইফাই সুবিধা। সব মিলিয়ে আমাদের যাত্রী কমবে না।
সুন্দরবন নেভিগেশনের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার সিনিয়র সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, একটি লঞ্চ ভাড়া কমালে তো অন্যরা কমাবেই। তা না হলে তো আর লঞ্চ চলবে না। আনুষ্ঠানিকভাবে বা যৌথভাবে লঞ্চের ভাড়া কমানোর কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি মালিকরা। তবে যে যার মতো করে যাত্রীর সংখ্যা বাড়াতে ভাড়া কমিয়েছে। তবে পদ্মা সেতুর কারণে যে লঞ্চের যাত্রী কমবে এটা ঠিক না। আর লঞ্চের যাত্রী যে কমেছে সেটা এখনো বলা যাচ্ছে না, এতে সময় লাগবে। ঈদের পর তা বলা যাবে।
লঞ্চের সুপারভাইজার আর টিকিট কাউন্টারে যোগাযোগ করে জানা গেছে, বরিশাল রুটে সুন্দরবন লঞ্চে সিঙ্গেল কেবিনের আগে ভাড়া ছিল ১৪০০ টাকা, এখন নেওয়া হচ্ছে ১২০০ টাকা। এ ছাড়া ডাবল কেবিনের ভাড়া ছিল ২৫০০, এখন ২২০০ টাকা। এসি কেবিন নেওয়া হচ্ছে ২২০০ টাকা, আগে ছিল ২৫০০ টাকা। নন এসি কেবিনের আগে ভাড়া ছিল ২২০০ টাকা, এখন ২০০০ টাকা। সোফার ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা যা আগে ছিল ৭০০ টাকা।
এ ছাড়া লঞ্চের ডেকে যেখানে ভাড়া নেয়া হতো ৩৫০ টাকা (সরকার নির্ধারিত ৩৫২ টাকা) সেখানে এখন নেওয়া হচ্ছে মাত্র ২০০ টাকা। আর ভিআইপি কেবিন ৮০০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে।
বরিশালগামী আরেক জনপ্রিয় লঞ্চ মানামি। তবে এ লঞ্চে কেবিনের ভাড়া অপরিবর্তিত রয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য ছোট লঞ্চগুলোতেও ভাড়া কমানো হয়েছে। তবে ভাড়া কমিয়েও যাত্রী পাচ্ছে না লঞ্চগুলো। ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রীও মিলছে না। যদিও লঞ্চমালিকদের দাবি, রোজার ঈদের পর থেকেই যাত্রীর চাপ কম। তবে পদ্মা সেতু চালুর পর তা আরো কমে গেছে বলে জানিয়েছেন লঞ্চ সুপারভাইজার, স্টাফ ও অন্য কর্মকর্তারা।
বরিশালগামী লঞ্চ সুন্দরবন-এর ধারণক্ষমতা ১ হাজার ৩৫০ হলেও বেশ কয়েকদিন ধরে মাত্র ৩০০-৪০০ যাত্রী নিয়ে লঞ্চটি যাতায়াত করছে। এ ছাড়া ৯০০ ধারণক্ষমতার লঞ্চ মানামি যেখানে ৬০০-৭০০ জন যাত্রী নিয়ে ঘাট ছেড়ে যেত, সেখানে তিন দিন ধরে ২৫০-৩০০ জন যাত্রী নিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে। লঞ্চটির সর্বশেষ ট্রিপে ১৬৭টি কেবিনের মধ্যে ৬৮টিই ছিল ফাঁকা।
এদিকে ঢাকা থেকে পটুয়াখালী, গলাচিপা রুটে ডেকের ভাড়া অপরিবর্তিত রয়েছে। সরকার নির্ধারিত ৫৩৪ টাকা হলেও ডেকে পটুয়াখালীর ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৪০০ টাকা। আর গলাচিপার ভাড়া ৫০০। তবে এ রুটের লঞ্চগুলোতে কেবিনের ভাড়া কমানো হয়েছে। তবে ঈদে যাত্রী বাড়বে বলে আশা লঞ্চ কর্তৃপক্ষের।
ঢাকা থেকে বরিশালগামী লঞ্চ এমভি মানামির ইনচার্জ সোহেল বলেন, ‘যাত্রীসংখ্যা এখনো স্বাভাবিক আছে। এক সপ্তাহ পর ঈদের মৌসুম আসবে, তখন এখনকার চেয়ে যাত্রী বাড়বে।
বরিশালগামী পারাবাত-৯ লঞ্চের সুপারভাইজার আব্দুল বারেক বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার পর সড়কপথে বরিশালে সাড়ে ৩ ঘণ্টায় যাবে, যাত্রীসংখ্যা কিছু কমবেই। তবে এখনো তেমন কমেনি, আগে প্রতিদিন আমাদের ৪০০-৫০০ যাত্রী হতো। ছুটির দিনে ৭০০ জনের মতো হতো। এখনো এ রকমই। বরিশালের অনেক যাত্রী মনে করে রাতে জার্নি করবে। কেবিনে করে রিল্যাক্সে যাবে। তারা সব সময় লঞ্চেই যাতায়াত করবে।
সুন্দরবন-১১ লঞ্চের সুপারভাইজার সিরাজ মিয়া জানান, পদ্মা সেতুতে লঞ্চে কতটুকু প্রভাব পড়বে তা ঈদের পর বোঝা যাবে। এখন তো এমনিতেই মানুষ বাড়ি কম যায়। কয়েকদিন পর ঈদের চাপ বাড়বে।
© দিন পরিবর্তন