logo

মাঠে বিএনপি সতর্ক আওয়ামী লীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

Published:15 Aug 2022, 05:55 PM

মাঠে বিএনপি সতর্ক আওয়ামী লীগ


বিএনপিকে মাঠে দেখে নড়েচড়ে বসেছে আওয়ামী লীগ।  ফলে দীর্ঘদিন পর রাজনীতিও খানিকটা উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে।  আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিএনপিকে রাজপথে মোকাবিলা করার হুশিয়ারি দিয়েছেন দলটির একাধিক শীর্ষ নেতা।  এজন্য দিনক্ষণও উল্লেখ করেছেন তারা।

বিগত কয়েক বছর ধরে মাঠের কর্মসূচিতে কোণঠাসা বিএনপি।  জনসমাগমের অভাবে জৌলুস হারাচ্ছিল মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সরকারবিরোধী কর্মসূচিগুলো।  এরকম পরিস্থিতিতে সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবারের কর্মসূচিতে বিএনপির নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।  বিএনপির সাংগঠনিকভাবে এ শক্ত হওয়া নিয়ে রাজনীতিতে চলছে নানা আলোচনা। 

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে ঢাকায় আয়োজিত ওই সমাবেশ থেকে বিরোধী দল বিএনপি নেতারা সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি করেন।  তারা বলেছেন, সরকার তাদের দাবিতে কান না দিলে বিএনপি রাস্তায় জোরদার আন্দোলন শুরু করবে।  তবে এই মুহূর্তে হরতাল বা অবরোধের মতো কোনো কর্মসূচি নেওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।  তিনি বলেছেন, এই মুহূর্তে হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচির কথা বিএনপি ভাবছে না।  জনগণকে সম্পৃক্ত করা যায় এমন কর্মসূচির কথা আমরা ভাবছি। 

এদিকে সমাবেশে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি চাঙা করেছে দলটিকে।  এ প্রসঙ্গে বিএনপির নেতারা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে বিএনপির সাংগঠনিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।  একইসঙ্গে দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন করে কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে।  যার ফলে এই মুহূর্তে দল অনেকটা সুসংগঠিত।  যার ফলাফল দেখা দিচ্ছে মাঠের কর্মসূচিতে।  এছাড়া দীর্ঘদিন পর বৃহস্পতিবারের সমাবেশে ঢাকা ও আশপাশের জেলার নেতাকর্মীরাও অংশ নিয়েছেন।  যার ফলে পুরো পল্টন, ফকিরেরপুল ও নাইটিঙ্গেল মোড় এলাকা ছিল কানায় কানায় পূর্ণ।  দলীয় কর্মী ছাড়াও অনেক সাধারণ মানুষও এই সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন বলে দাবি করা হচ্ছে বিএনপির তরফ থেকে। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, আগের চাইতে দল ও অঙ্গ-সংগঠনগুলো অনেক সুসংগঠিত।  আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘদিন চেষ্টা করে এই অবস্থায় নিয়ে এসেছেন।  এছাড়া আওয়ামী লীগের দুর্নীতির কারণে মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ, আমাদের অঙ্গ-সংগঠনগুলোর ওপর সরকারের যে নির্যাতনের চিত্র, তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে সমাবেশে।  এখন মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিএনপির সমাবেশে যোগ দিচ্ছে। 

বিএনপির এই সমাবেশকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।  কোনোভাবেই বিএনপিকে রাজপথ ছেড়ে দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার করেছেন দলটির নেতারা। 
ক্ষমতাসীন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, আওয়ামী লীগকে রাজপথের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।  বিএনপিকে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেছেন, আগস্ট মাসটা যাইতে দেন, তারপর টের পাবেন কত ধানে কত চাল।  গতকাল শনিবার ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।  তিনি বলেন, পরিষ্কারভাবে বলতে চাই- মির্জা ফখরুল সাহেব, নৈরাজ্যের পথ ছেড়ে দেন, নৈরাজ্য সৃষ্টি করে শব্দবোমা ব্যবহার করে হুমকি-ধমকি দিয়ে এই আওয়ামী লীগকে ভয় দেখানো যাবে না।  এই আওয়ামী লীগ আপনাদের প্রতিরোধ করেছে।  জনগণকে সাথে নিয়ে ঘাড় ধরে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে নিয়েছে।   আর এই আওয়ামী লীগকে ভয় দেখান! ‘নৈরাজ্যের পথ ছেড়ে’ নির্বাচনের পথে হাঁটার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, নির্বাচনকে মোকাবিলা করেন। সেই নির্বাচন সংবিধান সম্মতভাবে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনে যদি আপনারা জয়লাভ করতে পারেন, আপনাদের ফুলের মালা দিয়ে আমরা বরণ করে নেব।  আপনাদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করব।  

একই অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আপনারা যদি মনে করে থাকেন- আমরা আপনাদের নেতাদের মতো পালিয়ে যাব, তাহলে ভুল করবেন।  আমরা বীর সন্তান, আমরা জাতির পিতার আদর্শের সন্তান, আমরা আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশে আছি, আমরা থাকব।  আমরা আমৃত্যু যে কোনো অপশক্তির বিরুদ্ধে যেকোনো সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যেকোনো অপকর্ম, অগ্নিসন্ত্রাসী, বোমাবাজদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের শান্তি সমৃদ্ধি অক্ষুণ্ন রাখার জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বে লড়াই করে যাব। 

আওয়ামী লীগের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, কোনো দুষ্কৃতিকারীদের আমরা রাজপথ ইজারা দিইনি।  রাজপথ দখল করে সাধারণ মানুষের ওপর পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করবে সেটা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হতে দেবে না।  বিএনপির ব্যানারে দুষ্কৃতিকারীরা আবার যাতে মানুষের কোনো ক্ষতি করতে না পারে সে জন্যই আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত আমরা রাজপথ দখলে রাখবো।  গত বৃহস্পতিবার রাজশাহী মহানগরীতে দলীয় এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। 
এদিকে ক্ষমতার ‘দাপট’ না দেখিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের কথাবার্তায় সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। 

সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের একটি মন্তব্যকে ঘিরে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।  সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের যখন মুদ্রাস্ফীতির পারদ ঊর্ধ্বমুখী, সেসময় গত শুক্রবার সিলেট এক সভা শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বৈশ্বিক মন্দায় অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ ভালো আছে। আমরা সুখে আছি, বেহেশতে আছি। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম উল্লেখ না করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের আমি বলবো, প্রত্যেককে কথাবার্তায়, আচার-আচরণে দায়িত্বশীল হতে হবে।  এ সময় দায়িত্বজ্ঞানহীন কোনো কথা বলা সমীচীন নয়, এ সময় ক্ষমতার দাপট দেখানো সমীচীন নয়। ঠান্ডা মাথায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।  মানুষের জন্য কাজ করতে হবে, এটাই আজকে আমাদের সবচেয়ে বড় মেসেজ। 

গতকাল শনিবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহিলা শ্রমিক লীগের শোক দিবসের আলোচনা সভায় একথা বলেন কাদের।  একইসাথে বিএনপিকেও হুঁশিয়ার করেন তিনি। 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে হুঁশিয়ার করে কাদের বলেন, বেপরোয়া ড্রাইভার এখন ফখরুল সাহেব, বেপরোয়া রাজনীতির চালক কখন যে কোথায় অ্যাক্সিডেন্ট ঘটায়! তিনি বলেন, আগুন নিয়ে আসবেন না, বলে দিচ্ছি, সতর্ক করে দিচ্ছি।  শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আপনাদের কেউ বাধা দিচ্ছে না।  কিন্তু আগুন সন্ত্রাস নিয়ে যদি নামতে চান, মোকাবিলা করতে চান, তাহলে বলব- সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।  



© দিন পরিবর্তন