নিজস্ব প্রতিনিধি
Published:04 Feb 2024, 05:21 PM
মাথা থেকে রক্ত ঝরছিল, তারপরও গোলপোস্ট পাহারা দিয়েছি
কিছুটা ঝিমিয়ে পড়া প্রিমিয়ার লিগ যেন হঠাৎ করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। তাও ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান স্পোর্টিংয়ের নান্দনিক পারফরম্যান্সে। আগের দিনই কিংস অ্যারেনাতে বসুন্ধরা কিংসকে ১-০ গোলে হারিয়ে বড় চমক দেখিয়েছে আলফাজ আহমেদের দল। এই ম্যাচে মিনহাজুর আবেদীন রাকিব দারুণ এক গোলে দলকে জয় এনে দেন। এছাড়া গোলকিপার সুজন হোসেন রক্তাক্ত মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে তেকাঠি পাহারা দিয়ে দলকে কোনও গোল হজম করতে দেননি। গোলপোস্টের নিচে ছিলেন অটল-অবিচল।
কিংস অ্যারেনাতে বসুন্ধরা কিংসকে এর আগে কোনও দল হারাতে পারেনি। ভারতের মোহনবাগান কিংবা মালদ্বীপের মাঝিয়াও পারেনি জয়ের স্বাদ পেতে। পেরেছে শুধু ক্ষয়িষ্ণু মোহামেডান। রাকিবের গোলটি যেমন দুর্দান্ত হয়েছে, ঠিক গোলপোস্টের নিচে নিয়মিত গোলকিপার সুজন হোসেন দারুণ সফল ছিলেন।
ম্যাচ ঘড়ির ৭৩ মিনিটে বলের দখল নিতে কিংসের দোরিয়েলতনের সঙ্গে সংঘর্ষে সুজন লুটিয়ে পড়েন। মাঠে প্রাথমিক চিকিৎসার পর মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে বাকি সময় খেলেছেন। তবে ম্যাচ শেষ হওয়ার দুই মিনিট আগে আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারেননি। বদলি সাকিব আল হাসান নেমে সুজনের দেখানো পথে দলের জাল অক্ষত রেখেছেন।
মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে খেলা নিয়ে ২৭ বছর বয়সী সুজন বলেছেন, ‘আসলে কিংসের বিপক্ষে আমরা এক গোলে এগিয়ে আছি। সেই সময় যদি আমি মাঠ থেকে উঠে যাই তাহলে দল সমস্যায় পড়তে পারতো। কেননা বদলি যারা আছে তাদের অভিজ্ঞতা কম। সংঘর্ষে মাথা থেকে রক্ত পড়ছিল তারপরও ব্যান্ডেজ বেঁধে কোনোমতে খেলেছি। যেন দলের জাল অক্ষত থাকে। তবে নির্ধারিত সময়ের দুই মিনিট আগে চোখে ঝাঁপসা দেখায় মাঠ ছাড়তে বাধ্য হই।’
এরপর সুজনকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছিল। সেখানে সেলাই পড়ার কথা থাকলেও হয়নি। ক্লাবে এসে আপাতত বিশ্রামে আছেন। সুজন বলছিলেন, ‘কিংসের বিপক্ষে জয়টা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ওদের কোনও আক্রমণকে আমরা সফল হতে দেইনি। ওরা যেন গোল করতে না পারে সেই চেষ্টা করে আমরা সবাই সফল হয়েছি। এই আনন্দ অন্যরকম। তাই নিজের শরীরের দিকে তাকাইনি। যতটুকু পেরেছি খেলে গেছি। কষ্ট হলেও নিজেকে এরপর থেকে সফল মনে হচ্ছে।’
কিংসকে হারিয়ে লিগ জমিয়ে তোলা মোহামেডান স্বপ্ন দেখছে শিরোপারও। কিংসের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে সাদা-কালোরা। আবাহনী লিমিটেডও আছে দৌড়ে। তাই সাদা-কালো দলে পাঁচ বছর ধরে খেলা সুজন বলেছেন, ‘সামনের দিকে আমাদের আরও ভালো খেলতে হবে। যেন শিরোপা লড়াইয়ে থাকতে পারি। সবাই এখন উজ্জীবিত। কিংসের মাঠে দুই বছর পর তাদের কোনও দল হারিয়েছে। সেটা আবার মোহামেডান। তাই এমন জয়ে খুশি।’
সুজনরা দুই ভাই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলে খেলছেন। সুজন মোহামেডান আর পাপ্পু হোসেন আবাহনী লিমিটেডে। বড় ভাইয়ের মাঠে এমন নিবেদন বা আত্মত্যাগ দেখে ছোট ভাই নিশ্চয়ই রোমাঞ্চিত।
© দিন পরিবর্তন