দিন পরিবর্তন ডেস্ক
Published:29 Feb 2024, 07:44 PM
মানুষের বড় সমস্যা মূল্যবৃদ্ধি
সরকারকে কঠোর হতে হবে
মানুষের বড় সমস্যা মূল্যবৃদ্ধিকে সরকার গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। কয়েক দিন থেকে স্বয়ং রাষ্ট্রপ্রধান বারবার মূল্যবৃদ্ধি প্রতিরোধের কথা বলছেন। মূল্যবৃদ্ধি যে নাগরিক জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে- এটা বিলম্বে হলেও সরকার উপলব্ধি করছে। মূল্যবৃদ্ধির জন্য দায়ী তিন কারণকে সরকার যথাযথভাবে চিহ্নিত করেছে।
ডলারের দাম বৃদ্ধি, চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেট- এই তিন কারণ মূলত দায়ী মূল্যবৃদ্ধির জন্য। এসব কারণ প্রতিরোধে সরকারকে নিজের ঘর থেকে কর্মসূচি শুরু করতে হবে। যারা চাঁদাবাজি করে, তারা সরকারদলীয় নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে এই বেআইনি কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। এই চাঁদাবাজরা মূলত এক ধরনের এজেন্ট। এদের পেছনে যারা শক্তিদাতা তারা সবাই সরকারের নেতৃস্থানীয় লোক। এই চাঁদাবাজির সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটা অংশও জড়িত। দেশের পথেপ্রান্তরে এই বাহিনীর নামে চলে চাঁদাবাজি। কোথায়, কীভাবে, কারা চাঁদাবাজি করে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারা সব জানেন। কয়েক দিন আগে র্যাব সদস্যরা রাজধানীতে স্পটে স্পটে অভিযান চালিয়ে চাঁদাবাজদের গ্রেফতার করেন। কিন্তু চাঁদাবাজদের গ্রেফতর করলে কি হবে? চাঁদাবাজির নেপথ্যে গডফাদার যারা, তারা তো পর্দার অন্তরালেই রয়ে গেছেন। র্যাবের আইনি হাত তত দূর পর্যন্ত পৌঁছায়নি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখে হয়তো আবারো ফিরে আসবে তারা পুরোনো অভ্যাসে।
বাজারে সিন্ডিকেট যারা করেছেন তারাও কোনো না কোনো ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের, আবারও কেউ কেউ ক্ষমতাসীন দলীয় লোকদের ছত্রছায়ায় থেকে সিন্ডিকেট করে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি করছেন। চাল, চিনি, তেল, সবজি থেকে শুরু সব পণ্যই সিন্ডিকেটের দখলে চলে গেছে। তারা ইচ্ছা করলে বাজারে পণ্য সরবরাহ করেন, পরিস্থিতি অনুযায়ী মূল্যবৃদ্ধি করেন, আবার সংকটও সৃষ্টি করেন। সবই হয় তাদের ইশারায়। এই বাজার সিন্ডিকেটগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণব্যবস্থাকে আস্থার পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এসব পণ্যের চলাচল তাদের মর্জিমাফিক হয়। কখনো কখনো সরকারের সব স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা অকেজো হয়ে যায়। তখন দ্রব্যমূল্য ছুটে পাগলা ঘোড়ার মতো। সরকারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানে কে, কোথায় পণ্য মজুদ করে সংকট সৃষ্টি করছে।
সরকার আন্তরিক হলে সহজেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই সিন্ডিকেটগুলো যদি কৌশলে সরকারের অংশ হয়ে যায়, তাহলে এদের রুখবে কে? এজন্য দ্রব্যমূল্য আজ এত নিয়ন্ত্রণহীন। স্বয়ং রাষ্ট্রপ্রধানকে এ নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, পুরো সরকারব্যবস্থা এই সিন্ডিকেটগুলোর কাছে অসহায়। পণ্যমূল্য বৃদ্ধির আরেকটি বড় কারণ ডলার-সংকট ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধি। দুটি কারণে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। একটি কারণ অভ্যন্তরীণ এবং অন্য কারণ বৈশ্বিক। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে- এটা সচেতন মহল সবারই জানা। কিন্তু হাজার হাজার কোটি টাকা ডলারে রুপান্তর হয়ে, এরপর পাচার হয়ে যে, দেশে ডলার-সংকট সৃষ্টি করেছে- এতে কোনো সন্দেহ নেই। এ ডলার পাচারকারীরা সবাই কোনো না কোনোভাবে প্রভাবশালী। সরকার যদি এই পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে কার্যকারিতা দেখাতে পারে, তাহলে এর প্রভাব শুধু পণ্যমূল্যে নয়, জাতীয় অর্থনীতিতেও পড়বে। ডলার-সংকটের কারণে রপ্তানিপণ্যের কাঁচামাল আমদানিকারকরা এলসি করতে পারেন না। এতে রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হয়। আবার এ সংকটের কারণে টাকার দাম কমে গিয়ে পণ্যমূল্য বেড়ে যায়। এভাবেই পণ্যমূল্যে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে ডলার-সংকট।
আমরা মনে করি, সরকারের উন্নয়নের অনেক দিক আছে, যা আজ শুধু মানুষের কাছে নয়, সারা বিশ্বে বিস্ময়। পণ্যমূল্যের এই অস্থিতিশীল ধারাই সরকারের উন্নয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। মানুষের জীবন যদি আর পাঁচটি দেশের মতো স্বাভাবিক পর্যায়ে না আনা যায়, তাহলে এত উন্নয়ন কার জন্য? তাই সরকার প্রধানকে অন্য ক্ষেত্রগুলোর মতো পণ্যমূল্য নিয়ে কঠোর হতে হবে এবং সংস্কার কাজ নিজ ঘর থেকেই শুরু করতে হবে।
/মামুন
© দিন পরিবর্তন