নিজস্ব প্রতিবেদক
Published:20 Jul 2022, 04:04 PM
রাজধানীতে কিডনি বেঁচা কেনার অভিযোগে গ্রেপ্তার ৫
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবৈধভাবে কিডনি বেঁচা-কেনার অভিযোগে রাজধানীতে ৫
জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. শহিদুল ইসলাম মিঠু (৪৯), মিজানুর রহমান (৪৪), মো.
আল মামুন ওরফে মেহেদী (২৭), মো. সাইমন (২৮) ও রাসেল হোসেন (২৪)।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১ এর কমান্ডিং অফিসার (অধিনায়ক) লেফটেনেন্ট কর্ণেল
আব্দুল্লাহ আল মোমেন জানান, রাজধানীর ভাটারা, বনশ্রী ও মিরপুর এলাকায় কিডনি
ক্রয়-বিক্রয় সিন্ডিকেটের সদস্যদের ধরতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও
র্যাব-১ এর সদস্যরা যৌথ অভিযান চালায়। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৮টার দিকে
অভিযান শুরু হয়। তা আজ বুধবার ভোর ৫টা পর্যন্ত চলে।
গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ভিকটিমের সাথে চুক্তির এফিডেভিট
কপি, ভুক্তভোগীদের পাসপোর্টসহ মোট ১৪টি পাসপোর্ট, কিডনি ক্রসম্যাচিং এর
বিভিন্ন দলিলাদি, দেশী ও বিদেশী মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র ও
ফটোকপি, বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই ও এটিএম কার্ড, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি
দপ্তরের জাল সীলমোহর, খালি স্ট্যাম্প, সিপিইউ, মোবাইল ও সীমকার্ড জব্দ করা
হয়।
আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা র্যাবকে
জানায়, কিডনি কেনা-বেচা এ চক্রের সদস্য সংখ্যা ১৫-২০ জন। তারা মূলত ৩টি
ভাগে বিভক্ত হয়ে কিডনি ক্রয়-বিক্রয়ের এই অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করে
আসছিল। এই চক্রের সদস্যরা পাশ্ববর্তী দেশে অবস্থানরত কিডনি কেনা বেচা
সদস্যদের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রায় শতাধিক মানুষকে পার্শ্ববর্তী দেশে
পাচার করেছে বলে জানা যায়। এ সংঘবদ্ব চক্রের ১ম গ্রুপ ঢাকায় অবস্থান করে
এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রয়োজন এমন
বিত্তশালী রোগীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে। চক্রের ২য় দলটি ১ম দলের চাহিদা
মোতাবেক দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরীব ও অভাবী মানুষদের চিহ্নিত করে এবং
তাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে টাকার বিনিময়ে কিডনি
ট্রান্সপ্লান্টেশনের জন্য ডোনার হতে প্রলুব্ধ করে ঢাকায় নিয়ে আসে।
পরবর্তীতে ৩য় অন্য একটি গ্রুপ প্রলোভনের শিকার ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারদের
ঢাকায় বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রত্যাশী
রোগীর সাথে ব্লাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য পরীক্ষা নিরিক্ষা সম্পন্ন করে।
ব্লাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য ডায়াগনস্টিক টেস্টে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের
উপযুক্ততা নিশ্চিত হলে, তার পাসপোর্ট, ভিসা প্রসেসিং এবং ভূয়া কাগজপত্র
তৈরির মাধ্যমে ভূক্তভোগী ডোনারকে পাশের দেশে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করে।
এই চক্রের সাথে পার্শ্ববর্তী দেশে অবস্থানকারী আরেকটি চক্র পারস্পরিক
যোগসাজশে ভূক্তভোগী কিডনি ডোনারকে বিদেশের এয়ারপোর্ট অথবা স্থলবন্দরে রিসিভ
করা থেকে শুরু করে হাসপাতালের ডকুমেন্টেশন, অস্ত্রপাচারসহ যাবতীয়
কার্যক্রম শেষে ভিকটিমদের বৈধ অথবা অবৈধ উপায়ে বিমান বা উত্তর পূর্বাঞ্চলের
সীমান্ত এলাকার মাধ্যমে দেশে ফেরত পাঠায়।
গ্রেপ্তারকৃতরা এই চক্রের মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থ অবৈধ উপায়ে হাতিয়ে
নিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করে। প্রতিটি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য
তারা রোগী প্রতি ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা গ্রহণ করতো। বিপরীতে তারা কিডনি
ডোনারকে মাত্র ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করে এবং
অগ্রীম ২ লাখ টাকা প্রদান করতো। কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের পর কিডনি
দাতাদের প্রতিশ্রুত অর্থ না দিয়ে নানাবিধ ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হতো।
এখন পর্যন্ত এ চক্রের সদস্যরা অর্ধশতাধিক কিডনি ক্রয়-বিক্রয় করেছে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে ডিএমপি ভাটারা থানায় মানব দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ
ক্রয়-বিক্রয় অপরাধসহ বিভিন্ন আইনে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আসামিদেরকে ভাটারা থানায় সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানান র্যাবের এ কর্মকর্তা।
© দিন পরিবর্তন