নিজস্ব প্রতিবেদক
Published:10 Mar 2024, 08:18 PM
রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি সাংবাদিক দোলন
ঢাকা টাইমস সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলনকে মানি লন্ডারিংয়ের একটি মামলার আসামি হিসেবে কারাগারে পাঠানোকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ বলে মনে করছেন সাংবাদিক নেতারা। তারা বলছেন, আইনানুগভাবে এখনো তিনি মামলার আসামিই নন। এ ঘটনাকে দুঃখজনক ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার বলে মন্তব্য করেছেন নেতৃবৃন্দ।
খ্যাতিমান সাংবাদিক ও জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ আরিফুর রহমান দোলনকে কারাগারে পাঠানোর প্রতিক্রিয়ায় রবিবার সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-১ আসন থেকে ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন দোলন। ক্ষমতাসীন দলের একজন প্রভাবশালী নেতা ছিলেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী। যিনি নির্বাচিত হয়ে এখন মন্ত্রী হয়েছেন। আরিফুর রহমান দোলন সেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন, সেটা বোঝাই যাচ্ছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, ফরিদপুরের দুই ভাই বরকত-রুবেলের বিরুদ্ধে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি ২০২০ সালে রাজধানীর কাফরুল থানায় যে মামলা করে তাতে দোলনের নাম নেই। প্রথম তদন্ত শেষে যে ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয় সেখানেও নাম নেই তার। পরে ‘পরিকল্পিতভাবে’ তার নাম ঢুকিয়ে সিআইডি একটি সম্পূরক চার্জশিট দেয়। যাতে মামলার সবশেষ আসামির স্থানে অর্থাৎ ৪৬ নম্বর আসামি করা হয় দোলনকে। যে চার্জশিট আদালত এখনো গ্রহণই করেননি। অথচ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সাংবাদিক দোলন সেই মামলায় হাজির হলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয় গত ৫ মার্চ।
এ দিকে আরিফুর রহমান দোলনকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সর্বস্তরের সাংবাদিকরা। তারা অতিদ্রুত তার মুক্তি দাবি করেছেন।
সাংবাদিক আরিফুর রহমান দোলনকে কারাগারে পাঠানোর প্রতিক্রিয়ায় রবিবার ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, মামলার এজাহারে নাম না থাকলেও আরিফুর রহমান দোলনকে কারাগারে প্রেরণ খুবই দুঃখজনক ঘটনা। সাংবাদিকতার পাশাপাশি যেহেতু তিনি স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, সেহেতু তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার কি না, তা খতিয়ে দেখা উচিত।
এ বিষয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, মামলায় প্রমাণিত হওয়ার আগেই একজন সাংবাদিককে এভাবে কারাগারে পাঠানো খুবই দুঃখজনক। দেশের অনেক ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে এমন অনেক মামলাই রয়েছে, তাদেরকে তো এভাবে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে না। দোলন ভাই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন, এটা বোঝাই যাচ্ছে। তবুও বিষয়টি অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা উচিত। এভাবে একজন সাংবাদিককে কারাগারে পাঠানো উচিত নয়।
এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, যেহেতু মামলা চলমান রয়েছে, এখন পর্যন্ত রায় হয়নি এবং আরিফুর রহমান দোলন ভাই একজন সাংবাদিক, তাকে কারাগারে না পাঠিয়ে রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করা যেতো। তিনি তো আর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাননি। আর তিনি একটি পত্রিকার সম্পাদক, দেশ ছেড়ে পালাতেনও না।
অন্য দিকে ঢাকা টাইমস সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলনকে মানি লন্ডারিংয়ের মামলার আসামি হিসেবে কারাগারে পাঠানো হলেও বাস্তবে আইনানুগভাবে এখনো তিনি ওই মামলার আসামিই নন। ফরিদপুরের দুই ভাই বরকত-রুবেলের বিরুদ্ধে সিআইডি রাজধানীর কাফরুল থানায় যে মামলা করে তাতে প্রথমে ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয় ও ৪১ জনকে অব্যাহতি (ঘঙঘ ঝঊঘঞ টচ) দেয়।
দালত অভিযোগপত্র গ্রহণও করে। পরে অভিযোগ গঠনের সময় আদালত অধিকতর তদন্তের জন্য পাঠায় সিআইডিকে। এই মামলায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দেন ছয়জন।
তারা হলেন- বরকত, রুবেল, নাজমুল ইসলাম খন্দকার লেভী, আশিকুর রহমান ফারহান, নিশান মাহমুদ শামীম ও বিল্লাল হোসেন।
এদের মধ্যে শুধুমাত্র বরকত গণহারে ৫১ জনের নাম বলেন, ওই জবানবন্দিতে এক জায়গায় শুধু একবার আরিফুর রহমান দোলনের নাম আছে (বাকি পাঁচজনের কেউই দোলনের নাম বলেননি)।
সিআইডি অধিকতর তদন্তে প্রথম ১০ জনের (বরকত, রুবেল, মোহতাশেম হোসেন বাবর, এইচ এম ফোয়াদ, ফারহান, ফাইন, বিল্লাল, মিনার, নাসিম, ডেভিড) সঙ্গে আরও ৩৬ জনের নাম যুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয় ৮ মাস আগে। এখনো আদালত সেটি গ্রহণ করেননি। এই সম্পূরক অভিযোগপত্রে শেষ নামটি দোলনের, যার শুনানির দিন ধার্য রয়েছে আগামী ২২ এপ্রিল। যতদিন এই অভিযোগপত্র গৃহীত না হচ্ছে, আইন অনুযায়ী ততদিন পর্যন্ত দোলন আসামি নন।
এ দিকে অধিকতর তদন্তে অভিযোগপত্রে নাম যুক্ত হতে পারে দু-একটি মিডিয়ায় আসা এমন খবরের ভিত্তিতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হওয়ার আশঙ্কা থেকে আরিফুর রহমান দোলন ৮ মাস আগে হাইকোর্ট থেকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন নেন। পরবর্তীতে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণও করেন। তিনি প্রতি ধার্য তারিখে নিম্ন আদালতে হাজিরও হচ্ছিলেন- যদিও আদালত এই ৮ মাসে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেননি, শুনানিও করেননি। শুধুমাত্র প্রতি মাসে শুনানির দিন ধার্য হয়। অভিযোগপত্র গ্রহণ না হওয়ায় দোলন আসামিও নন। ওই মামলায় দ্বিতীয় দফায় যুক্ত হওয়া বাকি ৩৬ জনের কেউ কারাগারে নেই।
৫ মার্চ আরিফুর রহমান দোলন যথারীতি আগের মতোই আদালতে হাজিরা দেন। এদিনও সম্পূরক অভিযোগপত্র গ্রহণের শুনানির তারিখ দেওয়া হয় ২২ এপ্রিল। কিন্তু আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিয়মিত হাজিরা দেওয়া ঢাকা টাইমস সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলনকে কারাগারে পাঠান আদালত। অথচ এই মামলায় প্রথম অভিযোগপত্রে নাম থাকা ১০ জনের মধ্যে জামিনে আছেন সাতজন। এরা হলেন- বাবর, লেভী, ফারহান, মিনার, নাসিম, বিল্লাল ও ডেভিড।
আরিফুর রহমান দোলন ফরিদপুর-১ আসনে গত জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোট পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পরাজিত হন। তিনি ৮৫ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। ওই আসনে বিজয়ী আবদুর রহমান এখন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী। আরিফুর রহমান দোলন বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য।
আরিফুর রহমান দোলন ঢাকা টাইমস ছাড়াও সাপ্তাহিক এই সময় পত্রিকার সম্পাদক। তিনি আলফাডাঙ্গার বেগম শাহানারা একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা এবং কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমীর সভাপতি ও আলফাডাঙ্গা আদর্শ কলেজের সভাপতি। পাশাপাশি তিনি একজন লেখক। উপন্যাসসহ তার লেখা ছয়টি বই বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত।
এছাড়াও আরিফুর রহমান দোলন সমাজসেবামূলক সংস্থা কাঞ্চন মুন্সী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তিনি মানবিক সহায়তামূলক নানা কর্মকাণ্ড করে সব মহলের মানুষের কাছেই প্রশংসিত হয়েছেন। গত দুই দশক ধরে ফরিদপুর-১ আসনের তিন উপজেলা আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী ও মধুখালীতে বহুমুখী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন দোলন।
কর্মজীবনে আরিফুর রহমান দোলন আমাদের সময় পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর উপ-সম্পাদক ও প্রথম আলো পত্রিকার ডেপুটি চিফ রিপোর্টার ছিলেন।
তিনি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য। খ্যাতিমান সাংবাদিক আরিফুর রহমান দোলনকে দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন ঢাকা টাইমস-এ কর্মরত সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।
© দিন পরিবর্তন