নিজস্ব প্রতিবেদক
Published:24 Sep 2022, 04:43 PM
রাশিয়ায় যুক্ত হচ্ছে ইউক্রেনের ৪ অঞ্চল
রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রশ্নে রুশ সেনা ও মস্কোপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ইউক্রেইনের লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, খেরসন ও জাপোরিজিয়া অঞ্চলে গণভোট শুরু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল থেকে শুরু হওয়া এ ভোট আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত চলবে। গণভোটের রায় পক্ষে এলে রাশিয়া ইউক্রেইনের প্রায় ১৫ শতাংশ অংশকে নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে দাবি করার সুযোগ পাবে।
পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, এ পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের ভয়াবহ লঙ্ঘন, যা যুদ্ধের তীব্রতা আরো বাড়িয়ে দেবে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, প্রায় ৭ মাসের যুদ্ধ শেষে এবং চলতি মাসের শুরুর দিকে উত্তরপূর্ব ইউক্রেনে গুরুত্বপূর্ণ একটি যুদ্ধক্ষেত্রে পরাজয়ের পর রুশপন্থিদের নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চলগুলোর কর্তৃপক্ষ গণভোট করতে চাইলে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাতে জোর সমর্থন জানান।
এই অঞ্চলগুলোর মধ্যে দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক (ডিপিআর) ও লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিককে (এলপিআর) পুতিন ইউক্রেইনে সেনা পাঠানোর আগে আগেই স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। এই দুই অঞ্চলকে একসঙ্গে দনবাস বলা হয়। ডিপিআর, এলপিআরের সঙ্গে খেরসন এবং জাপোরিজিয়ায়ও গতকাল থেকে ৫ দিনের এ গণভোট শুরু হয়েছে।
ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলো এ ভোটকে ‘ধোঁকা’ হিসেবে অভিহিত করছে। মঙ্গলবার ভোট শেষ হওয়ার অল্প সময় পরই গণভোটের রায় মিলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে । ফল ঘোষণার পর রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে এই অঞ্চলগুলো নিজেদের ভূখণ্ডভুক্ত করে নেবে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেন বলেছেন, ইউক্রেনের বিভিন্ন অংশের দখল নিতে প্রতারণাপূর্ণ গণভোটের আয়োজন করছে ক্রেমলিন। প্রত্যেক সার্বভৌম দেশের যে অধিকার রয়েছে, ইউক্রেনেরও সেই অধিকার রয়েছে। আমরা ইউক্রেনের পাশে আছি। বিশ্বব্যাপী স্বৈরতন্ত্র ও গণতন্ত্রের মধ্যে যে দ্বৈরথ চলছে ইউক্রেন যুদ্ধকে তার অংশ বলেও চিত্রায়িত করার চেষ্টা করেন তিনি।
১৯৯৪ সালে বুদাপেস্ট স্মারকলিপির আওতায় সোভিয়েত পরবর্তী ইউক্রেনের সীমানাকে স্বীকৃতি দিয়েছিল রাশিয়া। কিয়েভ বলছে, তারা তাদের ভূখণ্ডের কোনো অংশে রাশিয়ার দখলদারিত্ব মেনে নেবে না এবং শেষ রুশ সেনা প্রত্যাহার হওয়া পর্যন্ত লড়বে।
অন্যদিকে ১৯৯৯ সাল থেকে রাশিয়াকে শাসন করে আসা পুতিন বলেছেন, কিয়েভের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হতে চাওয়া অঞ্চল ও এর জনগণকে কখনোই ছেড়ে যাবে না তারা। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে থাকা রুশভাষীদের নির্বিচারে হত্যা ও নিপীড়নের হাত থেকে রক্ষায় এবং রাশিয়াকে ধ্বংসে পশ্চিমাদের ষড়যন্ত্র ভুণ্ডুল করতে এই যুদ্ধ করতে হচ্ছে বলেও ভাষ্য তার।
পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুঁশিয়ারি দিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোকে পুতিন বলেছেন, সর্বশক্তি দিয়ে রাশিয়ার ভূখণ্ডের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে। লুহানস্ক ও খেরসন অঞ্চলের প্রায় পুরোটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও রুশ বাহিনী এখন পর্যন্ত জাপোরিঝিয়ার ৮০ আর দোনেৎস্কের ৬০ শতাংশের মতো দখলে নিতে পেরেছে। সবগুলো অঞ্চলেই এখনও যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ভোট কীভাবে হবে, তা স্পষ্ট না হলেও ফলাফল নিয়ে খুব বেশি সন্দেহ নেই।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি বলেছেন, অঞ্চলগুলোতে রাশিয়ার বসানো কর্মকর্তারা ভোটারের সংখ্যা ও কত শতাংশ রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে ভোট দেবে তা ঠিক করতে কাজ করছেন। কোথাও কোথাও ভোটারের সংখ্যা কত হবে, তা এরই মধ্যে ঠিকও হয়ে গেছে।
২০১৪ সালে ময়দান বিপ্লবে রুশপন্থি প্রেসিডেন্টকে উৎখাত এবং রাশিয়া ক্রিমিয়া দখলে নেওয়ার পর মস্কোপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ইউক্রেনের শিল্পসমৃদ্ধ দনবাসকে কিইভের শাসন থেকে মুক্ত করতে লড়াইয়ে নামলে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে সংঘাত শুরু হয়। ক্রিমিয়াতে জাতিগতভাবে রুশদেরই আধিক্য, সোভিয়েত আমলে রাশিয়ার এ অঞ্চলটিকে ইউক্রেনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল।
২০১৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া সেটির দখল নেওয়ার পর ১৬ মার্চ সেখানে গণভোট হয়, তাতে ৯৭ শতাংশ ভোটার ইউক্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পক্ষে অবস্থান নেয় বলে জানান ক্রিমিয়ার নেতারা।
রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ২১ মার্চ ক্রিমিয়াকে নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করে নেয়। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেসময়ও ওই গণভোটকে ইউক্রেনের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে দেখেছিল।
এদিকে, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই রাশিয়া এই ৪ অঞ্চলকে নিজেদের ভূখ্লভুক্ত বলে বিবেচনা এবং সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে ইউক্রেনের চেষ্টাকে ‘রাশিয়ার ওপর আক্রমণ’ বলতে শুরু করবে, বলেছেন যুক্তরাজ্যের ক্লেভারলি।
দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিজিয়ার মস্কোপন্থি কর্তৃপক্ষগুলো কয়েক মাস ধরেই তাদের অঞ্চলে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রশ্নে গণভোট আয়োজন নিয়ে আলোচনা করছিল; কিন্তু সম্প্রতি খারকিভে ইউক্রেইনের পাল্টা আক্রমণে রুশ বাহিনী পিছু হটার পর তড়িঘড়ি ভোটের দিন ঠিক হয়।
মস্কোর যুক্তি, ইউক্রেনের ওই অঞ্চলগুলোর জনগণেরই নিজেদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার থাকা উচিত। বিশেষ সামরিক অভিযানের শুরু থেকেই আমরা বলছি, ওইসব এলাকার জনগণকেই তাদের ভাগ্য ঠিক করতে দেওয়া উচিত। বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা সেটা পারবে, বলেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।
© দিন পরিবর্তন