নিজস্ব প্রতিনিধি
Published:13 Mar 2024, 04:40 PM
লংগদুতে বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী রেফ্রিজারেটর খ্যাত মাটির ঘর
বিপ্লব ইসলাম,লংগদু,(রাংগামাটি):
অন্যান্য অঞ্চলের জেলা গুলোর ন্যায় পার্বত্য অঞ্চলেও রয়েছে এর বেশ প্রচলন,এরই ধারাবাহিকতায় রাংগামাটি জেলার বিভিন্ন উপজেলা গুলোতেও রয়েছে অনেক পুরোনো গ্রাম বাংলার বেশকিছু ইতিহাস ও ঐতিহ্য। তার মধ্যে মাটির ঘর অন্যতম। শীত ও গরমে বেশ আরামদায়ক বলে ধনী-গরিব সবাই এ ঘর তৈরি করতো। হরেক রকম ঘর তৈরি হতো সাধ্যানুযায়ী। কেউ কেউ দুই তলা মাটির ঘরও তৈরি করতেন।
আধুনিক মনোরম কারুকার্য খচিত ইট ও টিনের তৈরি পাকা-আধাপাকা ঘরবাড়ির ব্যাপক বিস্তারে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার সেই ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ অতীত সুখ দুঃখের নিরাপদ আশ্রয় প্রাকৃতিক রেফ্রিজারেটর খ্যাত মাটির ঘর।
জানা গেছে, অতীতে মাটি দিয়ে বিশেষ উপায়ে ঘর নির্মাণ করা হতো। চালা হিসেবে এসব ঘরে মানুষ খড়, ছন, ইকর, টিন এসব ব্যবহার করতেন। আবার চালা তৈরিতে বাঁশ অথবা ইট ব্যবহার করতেন। বাড়ির মালিক স্বহস্তে অথবা কারিগর দিয়ে সুন্দর সুন্দর মাটির ঘর তৈরি করতেন। মাটির ঘর বাড়ির সঙ্গে মিশে আছে গ্রামবাংলার মানুষের নিবিড় সম্পর্ক, রয়েছে হারানো স্মৃতি, প্রিয় মানুষদের সুখ দুঃখের স্মৃতি, আবেগ আর অনুভূতি।
লংগদু উপজেলার বাইট্টা পাড়া সোনাই এবং ইয়ারিংছড়িতে রয়েছে প্রায় তিন শতাধিক মাটির তৈরী ঘর,সোনাই বসবাস কারী মাটির তৈরী ঘরের বাসিন্দা মোঃশাহিদুল ইসলামের নিকট এর সুভিধা সম্পর্কে যানতে চাইলে তিনি বলেন এই ঘরগুলো ইট,টিন,কাঠের তৈরী ঘরের থেকেও বেশ আনন্দ দায়ক এবং লাভ জনক!সাধারণত ইট দ্ধারা সমপরিমাণ একটি গৃহ নির্মাণের ব্যায় প্রায় অনেক টাকা যা সাধারণ মানুষের আয়ত্তের বাহিরে,আর টিন এবং কাঠ দ্ধারা নির্মাণ করলে কয়েক বছর অন্তর অন্তর পরিবর্তন করতে হয় অনেক ধরনের টুকরো টাকরা জিনিস যা প্রায় বেশ ব্যায় বহুল।
আর আমাদের দেশের সকল ঋতুতেই রয়েছে এই ঘরটির বেশ নানান লাভজনক দিক, শীতের মৌসুমে ঘরটিতে বেশ গরম অনুভত হয় এবং গরমের মৌসুমে মনে হয় যেন বসবাস করছি কোন এক এয়ারকন্ডিশনের রুমে।
বাংগালীদের পাশাপাশি পাহাড়ের আনাচে-কানাচেও রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি কারক মাটির তৈরী এমন ঘর গুলো!পাহাড়ের পাহাড়ি জনপদের লোক গুলোও বেশ আনন্দের সাথে উপভোগ করছে মাটির তৈরী গৃহের সুবিধা।
অথচ এখন লংগদুতে বিলুপ্তি হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মাটির তৈরি আধুনিক ঘরগুলোও।গ্রামের মানুষের কাছে মাটির ঘর ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে টিনের চালা দিয়ে কিছু মাটির ঘর দেখা গেলেও বাঁশ, খড়ের ও শনের চালার সেই মাটির ঘরগুলো আজ আর নেই বললেই চলে। বিলুপ্তি হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মাটির তৈরি আধুনিক ঘরগুলোও।
আধুনিকতা আর শহরের প্রভাবে এসব ঘর বিলুপ্তির পথে। লংগদু উপজেলায় বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিনিয়ত মাটির ঘর বাড়ির স্থলে জায়গা করে নিচ্ছে ইট পাথরে নির্মিত আধুনিক বিলাসবহুল পাকাবাড়ি। আধুনিক যুগের আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষের মানসিকতা ও ভাবধারার পরিবর্তন ঘটছে। ধনীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে এ অঞ্চলের খেটে-খাওয়া মানুষরাও। এখন মাটির ঘর ভেঙে তৈরি করছেন দালান ঘর।
প্রাকৃতিক রেফ্রিজারেটরগুলো ভেঙে পাকা ঘর নির্মাণের এক কৃত্রিম প্রতিযোগিতা চলছে সর্বত্র।মাটির ঘর তৈরী কারক এক কারীগর এর সাথে আলোচনায় যানা যায় একটা সময় এই ঘর তৈরীর সময় বাহির করা খুব কষ্ট সাধ্য হতো কিন্তু বর্তমানে বেশ কিছু দিন যাবৎ এর কোনো প্রকার সাড়া পাওয়া যাচ্ছেনা তাই আমারাও সামিল হয়েছি অন্যান্য কাজের সাথে।কারিগর সহ মাটির ঘরে বসবাসকারী অনেকের ধারণা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এ অঞ্চলের মাটির ঘরের অস্তিত্ব সংকট দেখা দেয়ার সম্ভাবনা বেশি। এসব মাটির ঘর তৈরির কাজে গ্রামাঞ্চলে অনেক কারিগর ছিলো। ঘরগুলো বিলুপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কারিগরদের পেশাও পাল্টে গেছে। অনেকের জীবনধারাও পাল্টে গেছে। অনেক কারিগর এখন আর বেঁচে নেই। অনেকে বেঁচে থাকলেও বহু কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। ভিন্ন পেশায় কাজ করলেও কারিগররা মনে এখনো সেই স্মৃতি নিয়ে ঘুরেন।
বাঁশ, খড়ের ও শনের চালার সেই মাটির ঘরগুলো আজ আর নেই বললেই চলে।
© দিন পরিবর্তন