নিজস্ব প্রতিনিধি
Published:19 Feb 2024, 04:53 PM
লংগদুতে মাঘের শেষে দেখতে পাওয়া দর্জি পাখি টুনটুনি বিলুপ্তির পথে
বিপ্লব ইসলাম, লংগদু,(রাংগামাটি):
গাছের পাতা একসঙ্গে সেলাই করে বাসা তৈরী করার জন্য এই পাখি খুবই জনপ্রিয়। এই চড়ই জাতীয় পাখিকে বৈশিষ্ট্যমুলকভাবে দেখা যায় খোলা খামার জমিতে, ঝোপঝাড়, বন ও বাদারে।
দর্জি পাখি নামটা এসেছে বাসা গড়ার ঢং থেকে। আগে গ্রামবাংলার আনাচে-কানাচে ঝোপঝাড়, বনজঙ্গল ও বাদারে দেখতে পাওয়া যেত কিন্তু এখন অার আগের মতো তেমনটা চোখে পড়ে না। পরাগায়নে সাহায্য করে এই পাখি। ফুলের মধু খেয়ে বিভিন্ন ধরনের ফুলে ফুলে ঘুরে পরাগায়নেও সাহায্য করে থাকে।
ফসলের ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খেয়ে পরিবেশ সুন্দর রাখতে সাহায্য করে।
হরেক নামে ডাকা হয় টুনটুনি পাখিকে তার হিসাব করা মুশকিল। অঞ্চলভেদে বিভিন্ন নামে ডাকা হয় এই টুনটুনি পাখিকে যেমন -টুনি, মধুচুষকি, দুগাটুনটুনি, বেগুন টুনটুনি , মৌটুসি, নীলটুনটুনি, দর্জি, মৌটুসকিসহ অারও কত যে নামে ডাকে।
এখন বিলুপ্ত প্রায় সেই ছোট নিপুণ বাসা তৈরির কারিগর পাখি টুনটুনি। যদিও পাখিদের মধ্যে বাবুই পাখিকে (arcitect) স্থপতি পাখি বলা হলেও এই ছোট পাখি টুনটুনির নির্মাণ শৈলী সম্পুর্নভাবে আলাদা। আকারে এই ছোট পাখিটাকে যতটা আমরা চালাক ভাবিনা কেন প্রকৃত পক্ষে ততটা চালাক নয় একটু বোকা প্রকৃতির এরা। সব সময় মানুষের খুব কাছাকাছি থাকতে ভালবাসে।
এরা চঞ্চল প্রকৃতির পাখি। এরা এক জায়গায় স্থির থাকতে চায় না। দুরন্ত বালকের মত ছুটে চলে। সব সময় গাছের ডালে লাফা-লাফি করে উড়ে বেড়ায়। ডালে-ডালে উড়ে বেড়ার সময় পিঠের উপরের লেজ নাড়িয়ে টুনটুন শব্দ করে উড়ে বেড়ায়। চোখে না দেখলে এই টুনটুনি পাখির ডাক শুনে মনেই করতে পারবেননা যে এরা আকারে এতই ছোট।
গ্রামগঞ্জের মানুষেরা খুব আদর করে একে দর্জি পাখি বলে ডেকে থাকেন। এই দর্জি পাখির ডাক খুবই তীব্র ও অনেক দুর থেকে ডাক শোনা যায়। এই দর্জি পাখিটি ঠোঁট দিয়ে গাছের পাতা সেলাই করে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে খুবই মজবুত সুন্দর বাসা তৈরি করে থাকে। এরা সাধারণত ঝোপঝাড় জাতীয় গাছ বা ছোট মাঝারী উঁচু গাছের পাতায় বাসা বাধঁতে খুব পছন্দ করে-যেমন খোকশা গাছ, লেবু, ডুমুর, সূর্যমুখী,সেঁকুন কাঠবাদাম ইত্যাদি। তবে এরা সবচেয়ে বেশী বাসা বাধঁতে পছন্দ করে সেঁকুন গাছে।
স্ত্রী ও পুরুষ উভয় মিলে গাছের ১-২টি পাতা দিয়ে সেলাই করে বাসা তৈরি করে থাকে। ১টি বাসা তৈরি করতে স্ত্রী ও পুরুষ টুনটুনির প্রায় ৪-৫ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। এরা তুলা, সুতা, লতা-পাতা, গরু,ঘোড়া, মহিশের লেজের চুল, পালক মিশিয়ে দৃষ্টিনন্দন বাসা তৈরি করে থাকে।
টুনটুনি পাখির বাসা তৈরি ও প্রজনন মৌসুম মাঘ মাসের শেষের দিকে এবং ফাল্গুন – অাশ্বিন মাসের মধ্যে বাসা বাধাঁ শেষ হলেই ৪-৫টি ডিম পাড়ে । স্ত্রী ও পুরুষ উভয়েই ডিমে তা দিয়ে ১০দিনের মধ্যে বাচ্চা ফুটানোর পরে বাচ্চাসহ বাসা পরির্বতন করে।
বছরের প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী টুনটুনি ২-৩ বার ডিম দিয়ে বাচ্চা ফুটায়। এ সময় কেউ টুনটুনির বাসার কাছে আসলে স্ত্রী ও পুরুষ মিলে এক সঙ্গে উড়া উড়ি এবং টুনটুন শব্দ করে ডিম ও তাদের বাসা রক্ষা করার জন্য। অনেক সময় বাসাসহ পাতা ঝড়ে পড়ে ডিম ও বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায়।
গ্রামের ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের টুনটুনির বাসার প্রতি প্রবল আকর্ষন থাকে। আবার অনেক সময় গ্রামের ছেলে মেয়েরা টুনটুনি পাখির বাসা, ডিম বা বাচ্চা নষ্ট করে। আজকাল টুনটুনি পাখির দৃষ্টিকাড়া বাসাও খুব তেমনটা চোখে পড়ে না। বন উজাড় মনোভাবের কারণে অনেক পাখিই ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে।প্রকৃতিও হুমকির মুখে সবুজ বনায়নের অভাবে।
© দিন পরিবর্তন