দিন পরিবর্তন ডেস্ক
Published:23 Feb 2024, 07:30 PM
শিক্ষকদের অবসর ভাতা প্রসঙ্গে হাইকোর্টের আরেকটি যুগান্তকারী রায়
জাতিকে শিক্ষিত করতে যারা বেছে নেন শিক্ষকতার মতো মহান পেশা, তাদের কর্মজীবন থেকে শুরু করে অবসর পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে ধাপে অসচ্ছলতার সঙ্গে লড়াই করে পথ পাড়ি দিতে হয়। সবশেষে যখন অবসরে যান, তখনও পোহাতে হয় সীমাহীন দুর্ভোগ। বছরের পর বছর ঘুরে অবসরভাতা না পেয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন- এমন উদাহরণও সমাজে কম নয়।
এমন সমস্যার সমাধানে হাইকোর্ট একটি যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন। দৈনিক দিনপরিবর্তন-এ প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়েছে, এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের অবসরকালীন ভাতা ছয় মাসের মধ্যে দিতে হবে। এই রায়ের সংবাদটি শিক্ষক মহলে স্বস্তির ছায়া ফেলেছে।
তবে আরেকটি কথা, শিক্ষকদের বেতন থেকে ৬ শতাংশ কেটে রাখার পর আবার নতুন করে যে ১০ শতাংশ কেটে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং তাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আগের নিয়মে ৬ শতাংশের সুবিধা দেবে- এমন সিদ্ধান্ত অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হচ্ছে না। প্রশ্ন হচ্ছে, কেটে রাখা বাড়তি ৪ শতাংশের সুবিধা থেকে কেন তাদের বঞ্চিত করা হবে? এই বিষয়েও হাইকোর্ট নির্দেশনা দিয়েছেন।
সংবাদের ভাষ্যমতে, ২০১৯ সালে সারাদেশের এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার ৫ লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারীর অবসরকালীন ভাতা এবং কেটে রাখা অর্থের সুবিধাসহ আর্থিক অন্যান্য সুবিধার দাবিতে রিটটি করা হয়। রিটে হাইকোর্ট ছয় মাসের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত ঐ শিক্ষক-কর্মচারীদের পাওনা পরিষদের রায় দেন।
শিক্ষকতা পেশায় যারা আসেন, তারা দেশের আগামীদিনের কর্ণধারদের তৈরি করার ব্রত নিয়ে কর্মজীবন অতিবাহিত করেন। চাকরিকালে তাদের জন্য যে সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়, তা অন্যান্য পেশার তুলনায় সন্তোষজনক নয়। বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতার নামে যে বরাদ্দ, তা অন্য পেশার সঙ্গে সঙ্গতিহীন। যে শিক্ষকরা জাতির সেবার জন্য ডাক্তার, প্রকৌশলী থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে তৈরি করতে সারা জীবন কর্মসাধন করেন, তাদের জীবন অতিবাহিত করতে রাষ্ট্রীয় বরাদ্দ কতটা পর্যাপ্ত- এই হিসাব আজ অবধি কোনো সরকার করেছে বলে মনে হয় না।
মোট কথা, শিক্ষকদের প্রদত্ত শিক্ষায় আজ যারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে কর্তব্য পালন করে সচ্ছল জীবনযাপনসহ সামাজিক সম্মান নিয়ে বসবাস করছেন, তাদের জীবনকে গুছিয়ে দিতে সহায়ক শিক্ষকরা সন্তোষজনক বেতনভাতা পান না। আবার এই শিক্ষকসমাজ অবসরে গিয়েও ভোগান্তির শিকার হন।
সমাজের সব শ্রেণির মানুষ- হোক সে মন্ত্রী, এমপি, বিচারপতি, ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার- সবাই কোনো না কোনো শিক্ষকের দেয়া শ্রম পেয়ে জীবনের সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করেন। আর মানুষ গড়ার কারিগর যারা, তারা নিজেরাই জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত আর্থিক ভোগান্তির বোঝা বয়ে বেড়ান। রাষ্ট্রের কর্ণধাররা নানা অজুহাতে তাদের সমস্যার যথাযথ প্রতিকারের এগিয়ে আসেন না। শিক্ষকদের বেতনভাতা দেয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারাও অবলীলায় দিনের পর দিন গাছাড়া ভাব নিয়ে সময় পার করেন। অথচ তারা সবাই কোনো না কোনো শিক্ষকের ছাত্র।
দেরিতে হলেও হাইকোর্ট ছয় মাসের মধ্যে শিক্ষকদের অবসরভাতাসহ চাকরিসুবিধার যাবতীয় পাওনা পরিশোধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। হাইকোর্টের আদেশ দেশের আইনি পরিধিতে সর্বত্র মান্য করা হয়। মানুষের আসার শেষ ভরসাস্থল এই উচ্চ আদালত। সরকারের কর্মপ্রবাহ যখন দৈনন্দিন জীবনে নানা কার্যক্রমে গতি বাড়াতে সম্পূর্ণভাবে সফল হয় না, তখন আদালতে জারি করা বিধি সেই সব কাজে অগ্রগতি আনে। শিক্ষকদের ক্ষেত্রে যে আদেশ দেয়া হয়েছে, তাতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা অনেকাংশেই দায়বদ্ধ থাকবে। এতেই শেষ জীবনে আশার আলো দেখবেন শিক্ষকরা।
আমরা মনে করি, দেশকে এগিয়ে নিতে হলে শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে। আর শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হলে শিক্ষককে গুরুত্ব দিতে হবে। তাদের জীবনে আনতে হবে স্বাভাবিকতা। প্রয়োজনে বাড়াতে হবে শিক্ষায় বরাদ্দ। তাহলেই এগিয়ে যাবে দেশ, সেই সঙ্গে এগিয়ে যাবে জাতি।
/মামুন
© দিন পরিবর্তন