নিজস্ব প্রতিবেদক
Published:10 Sep 2022, 06:49 PM
শুভ জন্মদিন : কালজয়ী অভিনেতা
ঢাকাই সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। একজন চিত্রনাট্যকার হিসবেও ছিলেন সমাদৃত। করেছেন সিনেমার পরিচালনাও। জীবনের শেষ দিনগুলোতে সিনেমায় নিয়মিত খুব একটা ছিলেন না। তাকে বেশি দেখা যেত ছোটপর্দায়। দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগে গেল বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি চিরবিদায় নিয়েছেন এ গুণী। তার না থাকার বিরহের সুর বাজিয়ে আজ এলো জন্মদিন। এদিনে ভক্ত-অনুরাগীরা শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন এ অভিনেতাকে। এটিএম শামসুজ্জামানের জন্ম ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর দৌলতপুরে নানাবাড়িতে। বেড়ে উঠেছেন পুরান ঢাকায় দেবেন্দ্রনাথ দাস লেইনে। ১৯৬১ সালে উদয়ন চৌধুরীর বিষকন্যা সিনেমায় সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজের সুযোগ মিলে যায়। পরে নারায়ণ ঘোষ মিতার জলছবি সিনেমার জন্য লেখেন চিত্রনাট্য। সেই সিনেমাতেই অভিষেক ঘটে নায়ক ফারুকের। সিনেমার পর্দায় এটিএম শামসুজ্জামানের অভিনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৬৫ সালের দিকে। শুরুর দিকে মূলত কমেডি চরিত্রেই তাকে দেখা যেত। ১৯৭৬ সালে আমজাদ হোসেনের নয়নমণিতে খলচরিত্রে অভিনয় করে তিনি বোদ্ধাদের নজর কাড়েন। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি।
লাঠিয়াল, অশিক্ষিত, গোলাপী এখন ট্রেনে, পদ্মা মেঘনা যমুনা, স্বপ্নের নায়ক সিনেমার শামসুজ্জামান যেমন খল চরিত্রে ফ্রেমবন্দি হয়ে হয়েছেন, রামের সুমতি, ম্যাডাম ফুলি, যাদুর বাঁশি, চুড়িওয়ালায় তার কমেডি চরিত্রের কথাও মনে রেখেছেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের দর্শকরা। ওরা ১১ জন, স্লোগান, সংগ্রাম, সূর্য দীঘল বাড়ি, ছুটির ঘণ্টা, রামের সুমতি, রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত, পদ্মা মেঘনা যমুনা এবং গেরিলার মতো সিনেমাতেও এটিএম শামসুজ্জামান অভিনয় করেছেন নানা ভূমিকায়। অভিনয়ের জন্য এটিএম শামসুজ্জামানের প্রথম পুরস্কার ছিল বাচসাস পুরস্কার। পরে ১৯৮৭ সালে কাজী হায়াতের দায়ী কে সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। এরপর ১৯৯৯ সালের ম্যাডাম ফুলি, ২০০১ সালের চুড়িওয়ালা, ২০০৯ সালের মন বসে না পড়ার টেবিলে সিনেমায় অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ কৌতুক অভিনেতা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। ২০১২ সালের চোরাবালি সিনেমার জন্য পান পার্শ্বচরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জাতীয় পুরস্কার। আর ২০১৭ সালে ৪২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তাকে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করা হয়। চলচ্চিত্রে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ার আগে ও পরে টেলিভিশনেও বহু নাটকে দেখা গেছে তাকে। ভবের হাট, রঙের মানুষ, ঘর কুটুম, বউ চুরি ও শতবর্ষে দাদাজান তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। ২০১৫ সালে যখন একুশে পদক দেওয়া হল, প্রথমে নিতে চাননি এই অভিনেতা। পরে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তিনি সেই সম্মাননা নেন। এর একটি ব্যাখ্যাও তিনি পরে দিয়েছিলেন।
পুরস্কার নিতে আপত্তির পেছনে এটিএম শামসুজ্জামানের কষ্ট ছিল, ক্ষোভ ছিল। তার বিশ্বাস ছিল, চলচ্চিত্রের অঙ্গনে তার সঠিক মূল্যায়ন কখনো হয়নি।
© দিন পরিবর্তন