logo

সম্পদ বেড়েছে মন্ত্রী-এমপিদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

Published:06 Dec 2023, 03:21 PM

সম্পদ বেড়েছে মন্ত্রী-এমপিদের


এম এ বাবর

বর্তমান সরকারের মন্ত্রী ও এমপিদের পাঁচ বছরে সম্পদ বেড়েছে একশ’ থেকে তিনশ’ গুণ পর্যন্ত। কারও কারও সম্পদ বেড়েছে অস্বাভাবিক ও বিস্ময়কর গতিতে। স্ত্রীরাও পাল্লা দিয়ে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। ধারদেনা করে নির্বাচন করেছেন এমন এমপিরাও এখন কয়েকশ কোটি টাকার মালিক। সম্পদের তালিকায় যোগ হয়েছে বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, ব্যাংকে নগদ টাকা, জমি, শিল্প প্রতিষ্ঠান, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, এফডিআর ইত্যাদি।

জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার শর্ত হিসেবে নির্বাচন কমিশনে তাদের স্বেচ্ছায় দাখিল করা হলফনামায় ঘোষিত সম্পদের বিবরণী বিশ্লেষণে দেখা গেছে অস্বাভাবিক সম্পদ বৃদ্ধির চিত্র।

গোলাম দস্তগীর গাজী:
টানা তিন মেয়াদে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) গোলাম দস্তগীর গাজী। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দেওয়া হলফনামায় প্রাপ্ত তথ্যমতে, গোলাম দস্তগীরের সম্পদের পরিমাণ প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার মতো। তার ২০১৪ ও ২০১৮ সালের হলফনামা অনুযায়ী সম্পদ বেড়েছে বহুগুণে।

হলফনামা অনুযায়ী, মন্ত্রীর বাড়ি ও অন্যান্য ভাড়া থেকে বার্ষিক আয় ১ লাখ ২৬ হাজার। ব্যবসা থেকে আয় ৮২ কোটি ৩ লাখ ৬২ হাজার ৬০০ টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংকে আমানত আছে ৯১ লাখ ৮২ হাজার ৩৭৫ টাকা। সংসদ সদস্য হিসেবে প্রাপ্ত ভাতা ৩২ লাখ ৯৪ হাজার ৩৪৮ টাকা। কাছে নগদ টাকা আছে ৯ কোটি ৬২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৯৬ টাকা।

অথচ ২০১৮ সালের হলফনামায় বাড়ি ও অন্যান্য ভাড়া থেকে তার বার্ষিক আয় উল্লেখ ছিল দুই লাখ ৫৯ হাজার ২০০ টাকা। ব্যবসার আয় ছিল ৩৪ কোটি ৭১ লাখ ৯ হাজার ৫৩৭ টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত দুই কোটি ৫১ লাখ ৮৮ হাজার ৫৪৮ টাকা। বোর্ড মিটিং ফি ও সংসদ সদস্য হিসেবে প্রাপ্ত ভাতা ২৩ লাখ ৯২ হাজার ৭১৫ টাকা। কাছে নগদ ছিল আট কোটি ১১ লাখ ২৫ হাজার ৮৮৮ টাকা।

ড. এ কে আব্দুল মোমেন:
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. এ কে আব্দুল মোমেনের আয় কমলেও তার সম্পদ গত পাঁচ বছরে বেড়েছে। মন্ত্রীর বর্তমান স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে যা গত ২০১৮ সালে ছিল ৭ কোটি ১৫ লাখ টাকার কিছু বেশি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামার তথ্যের সাথে ২০১৮ সালে দাখিলকৃত হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা যায়।

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রথমবারের মতো প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন এ কে আব্দুল মোমেন। সে সময় নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত মনোনয়নপত্রে তিনি পেশা হিসেবে উল্লেখ করেন শিক্ষকতা ও অন্যান্য এবং তার মোট বার্ষিক আয় ৩৫ লাখ ৮৯ হাজার ১৭১ টাকা, যার মধ্যে ২৭ লাখ ৪১ হাজার ২২৪ টাকা আসে শিক্ষকতা থেকে। বাদবাকি আয় বাসাভাড়া, ব্যবসা, শেয়ার বা সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য খাত থেকে।

আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে দাখিলকৃত হলফনামায় মোমেন পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন রাজনীতি ও তার মোট বার্ষিক আয় ২৬ লাখ ১৮ হাজার ৯৬৬ টাকা যা ২০১৮ সালের তুলনায় প্রায় ১০ লাখ টাকা কম।

বর্তমানে মোমেনের আয়ের মধ্যে ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৪ টাকা আসে বাড়িভাড়া থেকে, ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা পেশাগত আয় ও ৯ লাখ ৬০ হাজার ৫৫২ টাকা ব্যাংক মুনাফা থেকে আসে।
তবে আয় কমলেও স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত এ প্রার্থীর। ২০১৮ সালে মোমেনের অস্থাবর সম্পত্তির মোট পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকার কিছুটা বেশি। নতুন হলফনামা অনুযায়ী মোমেনের অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকারও বেশি। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর স্থাবর সম্পদ ২০১৮ সালের তুলনায় বর্তমানে তেমন বাড়েনি।

শাহরিয়ার আলম:
পাঁচ বছরে রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের এমপি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের আয় বেড়েছে আড়াই গুণের বেশি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

শাহরিয়ার আলমের ২০১৮ সালের হলফনামায় দেখা গেছে, ওই সময় তাঁর বার্ষিক আয় ছিল ৩ কোটি ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৩৮৮ টাকা। এখন তা আড়াই গুণেরও বেশি বেড়ে হয়েছে ৭ কোটি ৯২ লাখ ৯১ হাজার ২৫৪ টাকা। শাহরিয়ার আলমের হাতে নগদ টাকাও বেড়েছে তিন গুণের বেশি। ২০১৮ সালে নগদ ছিল ৬ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৭০৬ টাকা। এখন আছে ২১ কোটি ৪৫ লাখ ৪৯ হাজার ১৫৩ টাকা। তাছাড়া শেয়ার আছে ৬৬ কোটি ৪১ লাখ ৩২ হাজার ৭০০ টাকার। আগে শেয়ার ছিল ৫৮ কোটি ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০ টাকার। আগে সঞ্চয়পত্র ছিল ১০ লাখ টাকার, এখন ৩০ লাখ টাকার। পাঁচ বছর আগে শাহরিয়ারের গাড়ির দাম ছিল ৭৬ লাখ ৬৩ হাজার ৩১৫ টাকা। এখন লাক্সারি কারের দাম ১ কোটি ১০ লাখ ৩ হাজার ১০০ টাকা।

ইমরান আহমদ:
পাঁচ বছরে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ ও তার স্ত্রী ড. নাসরিন আহমদের সম্পদ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি সিলেট-৪ আসনের পাঁচবারের সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ।

২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্রের সাথে জমা দেয়া হলফনামায় নিজের এবং স্ত্রীর সম্পদের বিবরণ দেন ইমরান আহমদ। এতে তিনি উল্লেখ করেন, স্ত্রীর নামে ব্যাংকে জমা রয়েছে ১ কোটি ৫৪ লাখ ৫৮ হাজার ৮৬০ টাকা। আর এবারের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামায় ইমরান আহমদ জানিয়েছেন, স্ত্রীর নামে ব্যাংকে ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৮৩ হাজার ৯ টাকা রয়েছে। ফলে এই পাঁচ বছরে স্ত্রীর ব্যাংকে জমাকৃত টাকার পরিমাণ বেড়েছে প্রায় দুই কোটি টাকা।

এবার হলফনামায় ইমরান আহমদ ব্যবসা থেকে বছরে আয় দেখিয়েছেন ৬ লাখ ৬৩ হাজার ৩৮০ টাকা। শেয়ার-সঞ্চয়পত্রে আমানত ৩ লাখ ৩১ হাজার ২০০ টাকা, চাকরি থেকে আয় ৩২ লাখ ৮৪ হাজার ১৯৬ টাকা, ব্যাংক সুদ থেকে প্রাপ্ত এক লাখ ৬১ হাজার ৪৭৫ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ আছে ৩১ লাখ ৫৫ হাজার ১৯ টাকা। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমার পরিমাণ এক কোটি ৫৭ লাখ ৫৭ হাজার ৪০৭ টাকা, ৯ লাখ ৬২ হাজার টাকা শেয়ারে বিনিয়োগ আছে।

এনামুল হক শামীম:
শরিয়তপুর-২ (নড়িয়া-সখিপুর) আসনের সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী
এনামুল হক শামীমের স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ৩৮ লাখ ৭৯ হাজার ৩৭ টাকা। বর্তমানে তার স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ এক কোটি ৭১ লাখ ১৯ হাজার ৩৬৩ টাকা। পাঁচ বছর আগে তার স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের অস্থাবর সম্পদ ছিল এক কোটি ৩২ লাখ ৪০ হাজার ৩২৬ টাকা। বর্তমানে তার স্ত্রীর নামে হলফনামায় দেখানো হয়েছে ৪৩ হাজার ১৬৯ (ইউএসডি) ডলার রয়েছে। পাঁচ বছর আগে তার স্ত্রী কোনো (ইউএসডি) ডলারের মালিক ছিল না।

ডা. মনসুর রহমান:
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের এমপি ডা. মনসুর রহমান পাঁচ বছরে অনেক সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ডা. মনসুর ২০১৮ সালে প্রথমবার এমপি হন। এবার মনোনয়ন পাননি। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। হলফনামায় দেখা গেছে, পাঁচ বছরে তাঁর বার্ষিক আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৫৭ গুণ। ব্যাংকে গড়ে উঠেছে টাকার পাহাড়।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় মনসুর রহমান শিক্ষকতা, শেয়ার ও চাকরি থেকে বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ১৪ লাখ ৯ হাজার ৯৬১ টাকা। এবারের হলফনামায় তিনি তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৯২ লাখ ৭০ হাজার ২৮৯ টাকা।

হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, মনসুরের হাতে এখন নগদ আছে ১ লাখ ৯ হাজার ১৬২ টাকা। ২০১৮ সালে ছিল ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ৮৩৪ টাকা। ব্যাংকে ছিল ৩ লাখ ১১ হাজার ১২৪ টাকা। এখন ব্যাংকে আছে ২ কোটি ১৯ লাখ ৯৭ হাজার ১৭৬ টাকা। আগে সঞ্চয়পত্র ছিল ৩৫ লাখ টাকার। এখন তা বেড়ে হয়েছে ২ কোটি ৪৬ লাখ ৯৭ হাজার ৭৬৭ টাকা।

মনসুরের আগে ঋণ ছিল ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৬১ টাকা। ঋণের পরিমাণ এখন কমে ৮ লাখ ৯৫ হাজার ১৮ টাকায় নেমে এসেছে। এই পাঁচ বছরে ঋণের টাকা প্রায় ১২ লাখ শোধ করেছেন।

কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা:
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ২৯৮নং সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) কুজেন্দ্রলাল ত্রিপুরা। তার বার্ষিক আয় ৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তিনি তা উল্লেখ করেছেন। একাদশ সংসদের নির্বাচনের হলফনামায় নগদ টাকা দেখিয়েছিলেন ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ব্যাংকে ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ।

হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, বর্তমানে আর ৪ কোটি ৭৮ লাখ ১৬ হাজার ৩৩৯ টাকা নগদ এবং ব্যাংকে রয়েছে ৫৩ লাখ ৯২ হাজার ৯শত ৬১ টাকা। এফডিআর রয়েছে ১ কোটি ১৫ লাখ ৫ হাজার ১৫৬ টাকা এবং ডিপিএস ১৪ লাখ ১৭ হাজার ৮৪১ টাকা।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তিনি কৃষিখাতে বাৎসরিক আয় দেখিয়েছিলেন ৩ লাখ টাকা এবং ব্যবসা থেকে আসতো ৫৫ লাখ টাকা। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় কৃষিখাতে তার বাৎসরিক আয় ৬৭ লাখ ৬৪ হাজার ৯৪৬ টাকা এবং ব্যবসা থেকে বাৎসরিক আয় দেখিয়েছেন ৩ কোটি ৭ লাখ ৪৩ হাজার ৭০১ টাকা। বেড়েছে বাড়ি-গাড়ির সংখ্যা। ঢাকার পূর্বাচলে কিনেছেন প্লট। উত্তরায় রয়েছে ১৭৮৩.২৩ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট। কমেছে ব্যাংক ঋণ।

ফজলে হোসেন বাদশা:
পাঁচ বছরে ব্যাংকের টাকা বেড়ে পাঁচগুণ হয়েছে রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশার। আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ২০০৮ সাল থেকে তিনি এ আসনের এমপি। এবারও ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বাদশা তার ব্যাংক হিসাবে দেখিয়েছিলেন ২৫ লাখ ৯৭ হাজার ৮০০ টাকা। এখন তার ব্যাংকে আছে ১ কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার ২৪৫ টাকা। আগে সাড়ে ১৬ লাখ ও ৩৮ লাখ টাকার দুটি গাড়ি থাকলেও এখন একটি জিপের দামই ৭০ লাখ।

পাঁচ বছর আগে ফজলে হোসেন বাদশার হাতে নগদ ছিল ১৫ লাখ ১৮ হাজার ৬৮৬ টাকা। এখন আছে ২৬ লাখ ১৩ হাজার টাকা। পাঁচ বছরে ৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কারের মালিক হয়েছেন তিনি। আগে দোকান ভাড়া থেকে কোনো আয় না থাকলেও এখন মার্কেট ভাড়া থেকে বছরে আয় দেখিয়েছেন ১৭ লাখ ৩২ হাজার ৮২৩ টাকা। তিনি এমপি হিসেবে বছরে ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা সম্মানি ও ১৭ লাখ ৯৩ হাজার ৮৩ টাকা আয় দেখিয়েছেন।

হাসানুল হক ইনু:
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুর কাছে নগদ টাকা ছিল ৬ লাখ ৮৫ হাজার। এখন তাঁর কাছে নগদ টাকা আছে ৩ কোটি ৫৬ লাখ ১৫৫ টাকা। অর্থাৎ, ১০ বছরের ব্যবধানে তাঁর নগদ টাকা বেড়েছে প্রায় ৫২ গুণ। এ ছাড়া তাঁর স্ত্রী আফরোজা হকেরও নগদ টাকা বেড়েছে।

হাসানুল হক ইনু কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দেওয়া হলফনামা এবং দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা পর্যালোচনা করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

জি এম কাদের:
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের সম্পদ বেড়েছে তিন গুণ। ২০১৮ সালে লালমনিরহাট-৩ আসনে সংসদ নির্বাচনকালে নগদ টাকা ছিল ১৪ লাখ ৪৭ হাজার ৯৭৩ টাকা। পাঁচ বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ লাখ ৮৮ হাজার ২৫৩ টাকা। একই সঙ্গে স্ত্রী শেরীফা কাদেরের নগদ সম্পদ ছিল ২৭ লাখ ৬৪ হাজার ৭০১ টাকা। পাঁচ বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯ লাখ ৫৯ হাজার ৫৬৩ টাকা। এ ছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পাঁচ বছর আগে জমা ছিল ১৩ লাখ ২ হাজার ৪৩৫ টাকা। এবার নিজের ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার ৭৯৩ টাকা এবং স্ত্রীর ছিল ৪ লাখ ৭ হাজার ২৫৮ টাকা নগদ দেখিয়েছেন। পাঁচ বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখ ৯ হাজার ৩৫৯ টাকা।

সালাম মুর্শেদী:
খুলনা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর ২০১৮ সালের নির্বাচনে হলফনামা অনুযায়ী সম্পদ ছিল ৯৫ কোটি ১১ লাখ টাকা। গত পাঁচ বছরে তার সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। বার্ষিক আয় ছিল ৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। পাঁচ বছরের ব্যবধানে আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ২ লাখ টাকা।

মাশরাফি বিন মর্তুজা:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য নড়াইল-২ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে আবারও মনোনয়ন পেয়েছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।

হলফনামা অনুযায়ী বর্তমানে তার বার্ষিক আয় ৮৮ লাখ ৫৪ হাজার ৪৫৮ টাকা। পাঁচ বছর আগে হলফনামায় যা ছিল ১ কোটি ৯৯ লাখ ১৮ হাজার ৭০০ টাকা। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচনী হলফনামায় মাশরাফি জানিয়েছেন, শেয়ার মার্কেটে ১৪ লাখ ১ হাজার ৯৫৩ টাকা, চাকরি ও বিভিন্ন সম্মানী বাবদ ২৩ লাখ ৩ হাজার ২০ টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে ৫১ লাখ ৪৯ হাজার ৪৮৫ টাকা আয় করেন।

গত একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে হলফনামায় আয় ছিল-কৃষি খাত থেকে বছরে ৫ লাখ ২০ হাজার, ব্যবসা (এমডি, দি ম্যাশ লি.) থেকে ৭ লাখ ২০ হাজার, চাকরি (ক্রিকেট খেলে) করে ৩১ লাখ ৭৪ হাজার এবং অন্যান্য খাত থেকে ১ কোটি ৫৫ লাখ ৪ হাজার ৭০০ টাকা আয় করেন।

সম্পত্তির বিবরণীতে তিনি জানান, তার মোট ৯ কোটি ৪২ লাখ ৬৯ হাজার ৬৩১ টাকা সম্পত্তি রয়েছে। পাঁচ বছর আগে ছিল মোট ৯ কোটি ১৪ লাখ ৫৯ হাজার ৫১ টাকার (৫০ তোলা স্বর্ণবাদে) সম্পত্তি রয়েছে। এর মধ্যে তার হাতে রয়েছে ১ কোটি ৮০ লাখ ৫৪ হাজার ৪০২ টাকা রয়েছে।


টিআইবির উদ্বেগ : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের দেয়া নির্বাচন কমিশনের হলফনামার তথ্য অনুযায়ী মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের গত পাঁচ বছরে অস্বাভাবিক সম্পদের মালিক হওয়ার সংবাদে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এই ব্যাপক সম্পদ আহরণ যদি জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয় তবে তা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং সংবিধানের ২০(২) ধারা অনুযায়ী অসাংবিধানিক। বৈধ সূত্রবহির্ভূত সম্পদ আহরণজনিত অনিয়মের ক্ষেত্রে দুদকের স্বপ্রণোদিত হয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের যে আইনি ক্ষমতা রয়েছে তার প্রয়োগে দুদকের অনীহা প্রতিষ্ঠানটির মৌলিক চরিত্রকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।



© দিন পরিবর্তন