logo

সিরাজগঞ্জ শিল্প পার্ক : ৭ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে

নিজস্ব প্রতিনিধি

Published:03 Feb 2024, 04:41 PM

সিরাজগঞ্জ শিল্প পার্ক : ৭ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে


স্বপন মির্জা, সিরাজগঞ্জ :
ঘরের কাছেই কর্মের সুবিধা ও উৎপাদিত পন্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানী করে শিল্পে সমৃদ্ধ দেশ গড়তে যমুনার পাড়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেসরকারী ‘সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক’ জোন ও সরকারী বিসিক শিল্প পার্ক। এতে জল, স্থল, রেলপথে উৎপাদিত পন্য ও কাচাঁমাল আনা নেয়ায় সহজ ব্যবস্থা বিদ্যামান থাকায় ইতি মধ্যেই অষ্টোলিয়া, কোরিয়া, চিন, ভারত সহ দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

ইতিমধ্যে ইকোনমিক জোনে ২৩টি ভাড়ী শিল্প কারখানা করতে দেশের খ্যাতনামা শিল্প গ্রুপ গুলো প্লট বরাদ্ধ নিয়েছে। এদিকে এই দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অগ্রগতি শেষ পর্যায়ে বলে কয়েক মাসের মধ্যেই শুরু হবে কারখানা স্থাপনের কাজ। সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন কর্তৃপক্ষ বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা দুর ও নতুন সরকার গঠন হওয়ায় পুর্বে উৎকন্ঠিত ব্যবসায়ীরা এখন বিনিয়োগে উৎসাহী হয়ে প্রায় প্রতিদিনই দেশ বিদেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি টিম যমুনা পাড়ের সম্ভবনাময় প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করছে। এদিকে সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৫ লাখ ও সরকারী বিসিক শিল্পপার্কে ২ লাখ সহ মোট ৭ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হলে উত্তরবঙ্গে বাড়বে সামগ্রীক অর্থনৈতিক অগ্রগতি।

জানান যায়, উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বঙ্গবন্ধু সেতু ও যমুনা নদীর পশ্চিম পাড়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে উঠছে দেশের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারী অর্থনৈতিক অঞ্চল সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন। রাজধানী ও এর আশপাশের জেলা গুলোর উপর উত্তরাঞ্চলের মানুষের চাপ কমাতে ঘরের কাছেই বিশেষ কর্মের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য পরিকল্পনা অনুযায়ী ২২ বছর ধরে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরের শিল্প উদ্যোক্তা জাবির সিনেটর শেখ মনোয়ার হোসেন। পরে আওয়ামীলীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এর সহযোগীতায় শুরু হয় এর কাজ। দেশের শীর্ষ ১১টি শিল্পগোষ্টির সার্বিক তত্ত্বাবধানে এর পুরো নির্মান ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার কোটি টাকা।

তাদের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ‘সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন’ এর জন্য সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নে খাসবড়শিমুল, পঞ্চসোনা, চকবয়রা এবং বেলকুচি উপজেলার বেলছুটি ও বড়বেরা খারুয়া মৌজার ১০৪১ একর জায়গা জমি অধিগ্রহন করা হয়। যা উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম পাড় মহাসড়কের দক্ষিন পাশে অবস্থান। এর উত্তর পাশেই রেলপথ ও পুর্ব পাশে নদী পথ বিদ্যমান। এরপর ২০১৯ সালের ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় পুরো নির্মান কাজ।

তখন হতে শুরু হওয়া এ মাটি ভরাট কাজ এখন ৮০ ভাগের বেশি শেষ হয়েছে। এছাড়া সয়দাবাদ হতে ইকোনমিক জোন ফটক হয়ে ২৭শ মিটার রাস্তা নির্মান প্রায় শেষ পর্যায়ে, বিদ্যুৎ সংযোগ সম্প্রসারন, গ্যাস সংযোগের অনুমোদন, নিরাপত্তা প্রাচীরের কাজ চলছে দ্রুত গতীতে। ইতিমধ্যেই দেশের প্রতিষ্ঠিত ১৩টি গ্রুপ ২৩টি টি ভাড়ী শিল্প কারখানা গড়তে প্লট ১১০ এক জায়গা বরাদ্ধ নিয়েছে। তারা আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এখানে কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু করবে বলে অর্থনৈতিক জোনের পরিচালক শেখ মনোয়ার হোসেন জানান।

তিনি জানান, আমরা সামাজিক শিল্প ব্যবস্থাপনাকে প্রধান্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা সফল করতে দেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারী অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মান করছি। যাতে থাকবে সবুজানায়নের প্রাকৃতিক পরিবেশ। এতে আমরা ৪শ টি কারখানা উপযোগী প্লট নির্ধারন করছি। পাশাপাশি যাদের জমি কিনে নিয়ে আমরা শিল্পাঞ্চল গড়ছি তাদের বসতির জন্যও জমি রবাদ্ধ রেখেছি। উৎপাদিত পন্য পরিবহনে ৩টি যোগাযোগ ব্যবস্থা সহ সিরাজগঞ্জ তাঁত, দুগ্ধ শিল্প সমৃদ্ধের পাশাপাশি এ অঞ্চলের মানুষ ঢাকা, গাজিপুর, নারায়নগঞ্জ, চট্টগ্রামে শিল্প ব্যবসায় বিনিয়োগকারী এবং অভিজ্ঞতা সম্পন্ন।

পাশাপাশি সিরাজগঞ্জ, পাবনা সহ উত্তরাঞ্চলে শিল্প পরিচালনায় দক্ষ শ্রমিক থাকায় সহজতর হবে ইকোনমিক জোনে উৎপাদন। এছাড়া উৎপাদিত পন্য পরিবহনে সয়দাবাদে ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) তৈরীর প্রক্রিয়া রয়েছে। পাশাপাশি মহাসড়ক দিয়ে যেমন সারা দেশের সাথে সহজ যোযোগাযোগ সহ নদী পথে চট্টগ্রাম বন্ধরে যাতায়াত ও রেলপথে এশিয় আঞ্চলিক দেশ গুলোতে পন্য পরিবহনে ব্যবস্থা থাকায় সব দিক বিবেচণা করে চিন, জাপান, কোরিয়া অষ্টোলিয়া, ভারত, জার্মান সহ দেশী বিদেশী অনেক বিনিয়োগকারী এখানে পরিদর্শন করে উল প্রসেসিং, প্যাকেজিং, অটোমোবাইলস্, পর্যটন সহ আরো অন্যান্য খাতে বড় বিনিয়োগে আগ্রহী। আশা করছি দেশে বেকারত্ব দুর সহ উৎপাদিত অতিরিক্ত পন্য বিদেশে রপ্তানি করে ৪০ বিলিয়ন ডলার অর্জনে দেশের ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে সিরাজগঞ্জের দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা রাখবে।

কিছুদিন আগে অষ্টোলিয়া-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরামের নেতৃত্বে সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করেন অষ্টোলিয়ার বিনিয়োগকারীরা। তারা এর পরিবেশ দেখে সন্তুষ্ট প্রকাশ করেন। এ সময় অষ্টোলিয়া-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরামের সভাপতি আবুল খান রতন, সে দেশের গ্রেপাস গ্রুপ পরিচালক মি. পিটার, সিইও নাজমুল হাসান এ প্রতিনিধিকে জানান, যেকোন শিল্পকারখানা স্থাপনের আগে মুখ্য ভুমিকায় থাকে উৎপাদিত পন্য সরবরাহে যোগাযোগ ব্যবস্থা। সে দিক থেকে সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন অনন্য। এর পরিবেশ চমৎকার। আমরা চেষ্টা করছি অটোমোবাইল, ভেড়ার পশম হতে উল প্রসেসিং কারখানা, পর্যটন, প্যাকেজিং খাতে বিনিয়োগ করার। এছাড়া এখানে আরেকটি সুবিধা হচ্ছে শত বছর পর প্লটের জায়গা কেনা যাবে। সব মিলিয়ে এ অর্থনৈতিক অঞ্চলটি পুরোপুরি শিল্পবান্ধব। এখানে আমাদের মত আরো অনেকেই বিনিয়োগে আগ্রহী।

অপরদিকে উত্তরবঙ্গের মানুষের আয়বৃদ্ধি ও দারিদ্র বিমোচনে ভুমিকা রাখতে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম পাড়ে মহাসড়কের উত্তরপাশে কালিয়া হরিপুর ও সয়দাবাদ ইউনিয়নের ৪০০ একর জায়গায় ৭১৯ কোটি টাকায় গড়ে উঠেছে সরকারের বিসিক শিল্প পার্ক। ‘সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্প পার্ক’ নামে এ শিল্পাঞ্চলে ৮২৯টি কারখানা গড়তে এখন প্রায় পুরোটা প্রস্তুত। আগামী জুনের পর কারখানা গুলো স্থাপন হলে দেশের অর্থনীতিতে ভুমিকা রাখবে বললেন প্রকল্পের পরিচালক জাফর বায়েজিদ। তিনি জানান, খুব শিগ্রহ আমরা প্লট বরাদ্ধ দেব। এর একটি কিছুদিনের মধ্যে হাতে পাবো। আশা করছি এখানে ২ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

সিরাজগঞ্জে ২টি অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে জেলাবাসী বেশ আশাবাদী। এক ঘরের কাছে কর্মেও ব্যবস্থা। আরেকটি হচ্ছে নিজেদের বিনিয়োগ ও অন্যান্য ব্যবসা-বানিজ্যেও সুবিধা। যাকে কর্মের নতুন ক্ষেত্র ও অর্থনীতিক বিকিন্দকরণে দেশের মধ্যে এ অর্থনৈতিক অঞ্চল দুটি অন্যতম ভুমিকা রাখবে বললেন সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসনের এমপি ড. জান্নাত আরা হেনরী। তিনি জানান, শিল্প ব্যবস্থপনা ও পরিচালনায় অভিজ্ঞ সিরাজগঞ্জবাসীর জন্য স্বপ্ন দুয়ার হচ্ছে শিল্পাঞ্চল দুটি। যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া আমাদের জন্য আশির্বাদ। এজন্য উদ্যোক্তাদের প্রচেষ্টাকেও আমরা সম্মান জানাই। আশা করছি, আগামী কয়েক বছর পর এর সম্ভবনার ফসল সিরাজগঞ্জ সহ আশপাশের জেলাবাসীর ঘরে-ঘরে পৌছে যাবে। বিনিয়োগে ব্যবসায়ীরাও সফল হবে।

 



© দিন পরিবর্তন