logo

সুনামগঞ্জের মধ্যনগর সীমান্তে বেড়েছে চোরাচালান

নিজস্ব প্রতিনিধি

Published:11 Feb 2024, 03:51 PM

সুনামগঞ্জের মধ্যনগর সীমান্তে বেড়েছে চোরাচালান


সুনামগঞ্জ :
নৈস্বর্গিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর মধ্যনগর উপজেলা সীমান্ত এখন চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য। রাত হলেই চোরাকারবারিরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার সীমান্ত এলাকা। সীমান্তের কাঁটাতার পেরিয়ে অবৈধ পথে প্রতিদিন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে ভারতীয় চিনি, বিভিন্ন ধরনের মশলা, চা-পাতা, বিভিন্ন র্ব্যান্ডের প্রসাধনী, কাপড়, মাদকদ্রব্য ও গরু-মহিষ।

এছাড়ারও ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আমদানীকৃত সুপারি অবৈধভাবে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ওই চোরাকারবারিদের মাধ্যমে ভারতে পাচার করা হচ্ছে। এতে করে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। অবৈধ পথে ভারত ও বাংলাদেশ থেকে আনা নেওয়া এসব পণ্য, গরু-মহিষ চোরাকারবারে বেশি লাভ হওয়ায় এতে বিনিয়োগ করছেন সাধারন মানুষ থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধিরা।

এসব চোরাচালান পরিবহনে জরিয়ে পরছেন উপজেলার তরুন কিশোর, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে নানান বয়সের খেটে খাওয়া মানুষ। কম পরিশ্রমে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়ায় চোরাচালান সিন্ডিকেট ছড়িয়ে পরছে উপজেলার গ্রাম থেকে গ্রামে। এদিকে নীরব অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনী(বিজিবি) ও পুলিশ। মধ্যনগর উপজেলা সীমান্ত যেন চোরাকারবারিদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, চোরাচালানের সুবিধাজনক পথগুলো হলো উপজেলার বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের বাঙ্গালভিটা সীমান্ত, কড়ইবাড়ি সীমান্ত, মাটিয়ারবন্দ সীমান্ত, গঙ্গানগর সীমান্ত ও মহিষখলা সীমান্ত।

এসব সীমান্ত এলাকা পার হয়ে চোরাচালানের পণ্য নৌপথে উপজেলার টাংগুয়ার হাওর, শালদিঘা বিলের ঘাটে আসে। পরে সেখান থেকে ইঞ্জিন চালিত ট্রলি দিয়ে বংশীকুন্ডা দক্ষিণের হামিদপুর চৌরাস্তা, চামরদানী ইউনিয়ন হয়ে মধ্যনগর সদরে ও মধ্যনগর-মহিষখলা সড়কে হয়ে কখনো বা মহিষখলা থেকেই কালাগড় সড়ক হয়ে পাশ্ববর্তী কলমাকান্দা উপজেলায় এসব পণ্য পাঠানো হয়।

এছাড়াও অবৈধ পথে ভারত থেকে আনা গরু-মহিষের পাল বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শ্রমিক দ্বারা হেঁটে মহিষখলা-মধ্যনগর সড়ক হয়ে চামরদানী ইউনিয়েনের কায়েতকান্দা নদীর ঘাটে পৌঁছালে সেখান থেকে নৌপথে মধ্যনগরে সদর ইউনিয়নের গলইখালী ঘাট পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে করে পাশ্ববর্তী ধর্মপাশা-মোহনগঞ্জ ও ধর্মপাশা-বারহাট্টা রোডে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। আর এদিকে এসব চোরাচালান পরিবহনের সময় রাতের আঁধারে বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নাম ভাঙিয়ে নেশাখোর ও বখাটেরা চাঁদাবাজিতে মেতে উঠেছে।

কখনো কখনো চাঁদাবাজদের সাথে চোরাকারবারিদের চাঁদার পরিমাণের বনিবনা না হলেই ঘটছে হাতাহাতির মতো অপ্রীতকর ঘটনা। এতে করে অবনতি হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলার । চোরাচালান পরিবহনের সাথে জড়িত নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জানান, আমরা গরীব মানুষ। কোন কাজ-কাম না থাকায় আমরা চোরাচালান পণ্য পরিবহনের কাজ করি। এতে আমরা লেবার প্রতি এক থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত পেয়ে থাকি। এই টাকায় আমাদের সংসার চলে।

অন্যদিকে গরু-মহিষ চোরাচালানে নিয়োজিত কয়েকজন শ্রমিকের সাথে কথা বলতে গেলে তারা প্রতিবেদকের সাথে ক্ষিপ্ত আচরণ করে। এসময় তাদের বুঝিয়ে বললে তারা জানায় যে, তারা মহিষখলা সীমান্ত থেকে প্রতিদিন শতশত গরু-মহিষ ৫-১০ টি করে পাল বেঁধে একেকজন দক্ষ শ্রমিক দ্বারা গন্তব্যে পৌঁছানো কাজ করে থাকে। এছাড়াও সপ্তাহের রবি ও বুধবার গভীর রাতে গরু-মহিষ বেশী পরিমাণে পাল বেঁধে গন্তব্যে পাঠানো করে তারা।

এবিষয়ে উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউপির ১নং ওয়ার্ডে সদস্য মো. নুরুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, চোরাচালান পরিবহনের কারণে আমাদের রাস্তাঘাট নষ্ট হচ্ছে এবং জনদূর্ভোগ বাড়ছে। এছাড়াও অবাদে চোরাচালান পণ্য আনা নেওয়া করায় এলাকাতে বখাটে ও চাঁদাবাজদের উৎপাত বেড়েছে। এবিষয়ে জানতে চাইলে মধ্যনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মোহাম্মদ এমরান হোসেন জানান, আমরা চোরাচালান প্রতিরোধে প্রতিদিন মাঠে তৎপর রয়েছি। গত কয়েকদিন আগে আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে চোরাকারবারিরা চোরাচালানে বেপরোয়া হয়ে উঠলে আমরা তা কঠোর হস্তে প্রতিহত করার চেষ্ট করেছি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনী(বিজিবি) সুনামগঞ্জ-২৮ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মাহবুবুর রহমান বলেন, চোরাচালান প্রতিরোধে কয়েকদিন আগে আমরা মধ্যনগর সীমান্তে ¯েপশাল টিম পাঠিয়েছিলাম। এছাড়াও আমাদের সদস্যরা সার্বক্ষণিক টহলরত রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সার্বিক সহযোগীতায় চোরাচালান প্রতিরোধ সম্ভব হবে বলে আশা রাখি।



© দিন পরিবর্তন