logo

সুবর্ণচরের ধর্ষণ মামলার রায়

দিন পরিবর্তন ডেস্ক

Published:07 Feb 2024, 09:06 PM

সুবর্ণচরের ধর্ষণ মামলার রায়


বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা বাড়াবে

দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সব নাগরিকেরই প্রত্যাশা। সমাজে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে সেই অপরাধের আইনিব্যবস্থা যথাযথভাবে নেয়া হবে- এটা সব সভ্য রাষ্ট্রের বিধান। কিন্তু কখনো কখনো আইনের চলমান ধারাকে ব্যাহত করে ক্ষমতার দুর্দণ্ড প্রতাপ। বিচার থেকে বঞ্চিত হয় অত্যাচারের শিকার সাধারণ নাগরিক। তখন রাষ্ট্রের প্রতি সব শ্রেণির মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি হয়। বিচারহীনতার সংস্কৃতি জাতির অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করে। আর যখন বিচারের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া মামলাজটে আটকা পড়ে, তখনও অপরাধীরা যেমন আস্কারা পায়। আর অত্যাচারিতরা হন আশাহত। কিন্তু সদ্যঘোষিত একটি মামলার রায় নতুন করে মানুষের মনে আশা জাগিয়েছে। রায়ে ওপরে উল্লিখিত সব বাধা অতিক্রম করে বিচারের ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে পেরেছেন বিচারক।


২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে ওই গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বিপরীত আদর্শের এক নারীকে তার স্বামী-সন্তানদের বেঁধে রেখে এই ধর্ষণ কাজ সংঘটিত করে। সে সময় ঘটনাটি দেশজুড়ে গণমানুষের মনে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার করেছিল।


ঘটনার পর পেরিয়ে গেছে পাঁচ বছর। বিচারপ্রক্রিয়া চলেছে আপন গতিতে। তৎকালীন ক্ষমতাসীনরা এখনো বর্তমান। কিন্তু তারা বিচারকের কার্যপ্রক্রিয়া ব্যাহত করতে সচেষ্ট হয়নি এ কারণে বলা যায় যে, অপরাধীরা উপযুক্ত সাজা পেয়েছেন। যদিও কোনো কোনো নিম্ন আদালতে রাজনৈতিক প্রভাব থাকে। কিন্তু এই বিচারের রায় প্রমাণ করে বিচারপ্রক্রিয়া চলেছে স্বাধীন গতিতে। রায়ে নোয়াখালীর সুবর্ণচরের ওই ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ১০ আসামির মৃত্যুদণ্ড ও ছয় আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। যদিও এই ঘটনার পাশবিকতা আগের সব অপরাধকে ম্লান করে দিয়েছিল ক্ষমতার দাপটে। এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডের মাত্রা বেশি মনে হলেও সমাজের শৃঙ্খলার জন্য এমন পুঙ্খানুপুঙ্খ রায়ের বেশি প্রয়োজন ছিল। বিজ্ঞ বিচারকের চোখে এটাই দৃশ্যমান হয়েছে।


দেশে অনেক নিম্ন আদালতে প্রভাবিত বিচারকাজ চলে- এমন অভিযোগ প্রায় শোনা যায় বিপরীত মতাদর্শের মানুষের মুখে। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাসীনরা প্রতিপক্ষকে দমন করতে আদালতে প্রভাব বিস্তার করেন। কিন্তু সুবর্ণচরের ধর্ষণ মামলায় এরকম কিছু ঘটেনি, এমনটা জোর দিয়ে বলা যায়। তাই যদি হতো তাহলে পাঁচ বছরে এই মামলা একেবারে স্তমিত হয়ে যেত। দেশের উন্নয়নের জন্য আইনশৃঙ্খলা ও বিচারব্যবস্থার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। আইন ও বিচার বিভাগ আপন গতিতে না চলে উন্নয়নের বিভিন্ন পর্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে স্বাভাবিকভাবেই এর চাপ গণমানুষের ওপর এসে পড়বে। এজন্য আইন ও বিচারপ্রক্রিয়াকে আপন গতিতে চলতে দেয়া কর্তব্য।
উন্নয়নের পথে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে- এই কৃতিত্ব ক্ষমতাসীনদের একার নয়। এতে বহুমুখী অংশীদারি রয়েছে। তবে ক্ষমতাসীনদের দায়িত্ব বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রীয় প্রক্রিয়াকে নির্বিঘ্নভাবে চলতে দেয়া। তাহলেই কেবল সুষম উন্নয়নের সিংহদ্বার জাতি স্পর্শ করবে।

 



© দিন পরিবর্তন