নিজস্ব প্রতিবেদক
Published:28 Nov 2023, 03:49 PM
সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপে ইসি
রেজাউল করিম হীরা:
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক দেখতে চায় বিদেশিরা। এজন্য সরকারকে বার বার তাগিদ দিয়ে আসছেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ঢাকাস্থ কূটনৈতিকরা। এ নিয়ে দফায় দফায় সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠকও করেন তারা। যদিও নির্বাচন নিয়ে কোনো চাপ নেই বলে জানিয়ে আসছিলেন সরকার সংশ্লিষ্টরা। তবে নির্বাচনে বিদেশি থাবার বিষয়টি স্বীকার করেছেন খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)।
২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠায় বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য দেখতে চায় আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়। সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিষয়ে ক‚টনীতিকদের কাছে একাধিকবার প্রতিশ্রæতিও দেওয়া হয়। কিন্তু বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে অনড় থাকায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর তরফ থেকে সব রাজনৈতিক দলকে নিঃশর্র্ত সংলাপের তাগিদ দেওয়া হলেও নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয় এখন আর সময় নেই। তবে বিরোধী দলগুলোকে নির্বাচনে আসতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বার বার তাগিদ দেওয়া হলেও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অনড় দলগুলো।
এ অবস্থায় আসন্ন নির্বাচন ঘিরে দেশে সংকট তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন নিয়ে দেশ ‘সংকটে’ রয়েছে। আস্থা নিয়ে সন্দেহ আছে। আমাদের তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রত্যেকেরই দায়িত্বশীলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা উচিত।’’
সিইসি বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনে কিন্তু বাইরে থেকেও থাবা এসে পড়েছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, কিছু বিদেশি রাষ্ট্র নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের ওপর তাদের থাবা বাড়াচ্ছে। আমাদের অর্থনীতি, আমাদের ভবিষ্যৎ, আমাদের অনেককিছুই রক্ষা করতে হলে এই নির্বাচনটাকে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য করতে হবে।’
গতকাল ইলেক্টোরাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (ইটিআই) নির্বাচনি তদন্ত কমিটির প্রশিক্ষণের উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।
সিইসি বলেন, ‘কয়েকটি দেশ বাদ দিলে বেশিরভাগ দেশই সত্যিকারের সার্বভৌম নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে নির্দেশ দিতে পারে, আমরা সেভাবে করতে পারি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশন থেকে প্রতিশ্রæতি দিয়েছি নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য করতে নির্বাচন কমিশন যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। নির্বাচনের দিন গুরুত্বপূর্ণ, হয় সফল না হয় ব্যর্থ হব। অবিতর্কিত ফলাফল চায় কমিশন। তবে আমরা অবশ্যই সফল হব।
তবে নির্বাচন কমিশনের ওপর পশ্চিমাদের কোনো চাপ নেই বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান। তিনি বলেছেন, ‘ইসির ওপর পশ্চিমাদের কোনো চাপ নেই। যেটা আছে, ওটা রাজনৈতিক সমস্যা। আমাদের সমস্যা না। আমাদের প্রতি কোনো চাপ নেই। দেশের প্রতি চাপ আছে কিনা আমি জানি না। সেটা সরকার বুঝবে, সেটা রাজনৈতিক ব্যক্তিরা বুঝবেন।’
গতকাল দুপুরে খুলনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
ইসি আহসান হাবিব আরও বলেন, ‘সব দল অংশগ্রহণ করুক, এটা আমাদের মনে-প্রাণে ইচ্ছা। তফসিল পেছানোর বিষয়ে কোনো দল আবেদন করলে আন্তরিকভাবে কমিশনের মিটিংয়ে আমরা বিবেচনা করার চেষ্টা করব। আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হবে। আমাদের বাধ্যবাধকতা রয়েছে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে শপথ নেওয়াতে হবে। সেই সময় থাকলে আমরা কমিশন বসে আলোচনা করব, আমাদের টাইম ফ্রেমের মধ্যে যদি সম্ভব হয় অবশ্যই করব।’
এদিকে জাতীয় নির্বাচনে দেশের সব রাজনৈতিক দলকে অংশগ্রহণ করতে হবে- এরকম কোনো আইন নেই বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) রাশেদা সুলতানা। পাশাপাশি তিনি এও প্রশ্ন রেখেছেন, কোনো দল যদি স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ না করে তাহলে কমিশন কীভাবে তাদের নির্বাচনে আনবে।
রাশেদা সুলতানা বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত ৪৪টি দলের ৩০টি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে; অর্থাৎ বেশিরভাগ দলই অংশগ্রহণ করছে।
গতকাল দুপুরে বগুড়া বিয়াম ফাউন্ডেশনের অডিটোরিয়ামে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ইসি রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘যাদের (রাজনৈতিক দল) ইচ্ছা নেই, তাদের আমরা কীভাবে নির্বাচনে আনব। আমরা তো তবুও চেষ্টা করেছি। কেউ যদি না আসে, সেজন্য নির্বাচন হবে না -সেটি কিন্তু নয়, নির্বাচন আইনত হয়ে যাবে।’
বিএনপি নির্বাচনে আসবে-নির্বাচন কমিশন এখনও সেই আশা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যদি তারা আসে, অবশ্যই আমরা বিবেচনায় (নির্বাচনের তারিখ) নেব। তবে সেটি নির্বাচনকালীন মেয়াদ ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত (নির্বাচন আয়োজনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা)। এই সময়ের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
তবে বিএনপি নির্বাচনে এলে তারিখ পুনর্নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। তিনি বলেছেন আমরা যে শিডিউল ঘোষণা করেছি, তাদের সুবিধার্থে নির্বাচনের তারিখ পুনর্নির্ধারণ করব। তবে খেয়াল রাখতে হবে সংবিধান অনুযায়ী যে কাট-অফ ডেট রয়েছে সেটার বাইরে যেতে পারব না। এই সময়সীমার মধ্যে নতুন তারিখ ঘোষণা করতে হবে।
গতকাল রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশন সবসময় তাদের (বিএনপিকে) ওয়েলকাম করি। তারা যখনই নির্বাচনে আসার সম্মতি প্রকাশ করবে তখনই আমরা সংবিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আমরা চাই সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে সরকার গঠিত হোক।
জানতে চাইলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকারকে রাষ্ট্রক্ষমতায় রেখে বাংলাদেশে কোনো অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। এটা দেশের জনগণের পাশাপাশি বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো জানে।
উল্লেখ্য, চলতি মাসের ১৫ তারিখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হবিবুল আউয়াল নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়ন ফরম দাখিলের শেষ দিন ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, মনোনয়নের আপিল ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর, নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত এবং ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
© দিন পরিবর্তন