নিজস্ব প্রতিনিধি
Published:10 Feb 2024, 04:29 PM
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় ট্রেন তৈরিতে বেড়েছে উৎপাদন কার্যক্রম
মোঃ মাইনুল হক, নীলফামারী :
নতুন নতুন রেলরুট চালু ও পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ চালুর পর বেড়েছে কোচের চাহিদা। নতুন ট্রেন চালু করতে অনেক কোচ প্রয়োজন। এ অবস্থায় সীমাবদ্ধতা সত্বেও দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় বেড়েছে উৎপাদন কার্যক্রম। দিনে ৩ ইউনিট মেরামত লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ৪ ইউনিট কোচ মেরামত লক্ষ্যমাত্রা (টার্গেট) ছাড়িয়েছে কারখানাটিতে।
রেলের সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার রেলবান্ধব। ফলে সারাদেশে রেলপথ বাড়ানো হচ্ছে। পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ চালুর পর পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে বেশ কিছু নতুন ট্রেন চালু হয়েছে। দিতে হচ্ছে কোচের জোগান। ফলে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার উপর চাপ বেড়েছে। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ক্যারেজ শপের (উপকারখানা) ইনচার্জ উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোমিনুল ইসলাম বলেন, এখানে প্রতিদিন ৩ ইউনিট কোচ মেরামতের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। প্রতিদিন দুই ইউনিটে একটি পূর্ণাঙ্গ কোচ বুঝানো হয়। সেক্ষেত্রে আমরা চলতি অর্থ বছরে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে ৩১৭টি কোচ মেরামত করেছি।
অর্থাৎ প্রতিদিন ৪ ইউনিট মেরামত কাজ হয়েছে এখানে। কারখানা সূত্র জানায়, সৈয়দপুর কারখানায় চরম লোকোবল সংকট রয়েছে। এখানে দুই হাজার ৮৫৯ জনের স্থলে লোকোবল রয়েছে মাত্র ৮২০ জন। কারখানার ২৮টি উপকারখানায় (শপ) উৎপাদন চলছে সীমিত সংখ্যক লোক নিয়ে। মাত্র ২৮ শতাংশ লোক কর্মরত আছেন ১১০ একর জমির উপর গড়ে ওঠা বিশাল ওই কারখানাটিতে।
এছাড়াও কারখানায় বাজেট স্বল্পতা রয়েছে। চলতি বছরে মাত্র ২০ কোটি টাকা বাজেট মিলেছে। বাজেটের টাকায় মেরামত কাজে ব্যবহৃত উৎপাদন ও উপকরণ সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। তবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন হয়ে থাকে রাজস্বখাত থেকে। সূত্রটি বলছে কারখানার উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে শূন্যপদে লোক নিয়োগ জরুরি। একইভাবে বাজেট দ্বিগুন করা হলে উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা সম্ভব।
কারখানা সূত্রে জানায়, উপরের চাহিদা অনুযায়ী অবিশ্রান্ত কাজ করছেন কারখানার শ্রমিক কর্মচারীরা। রেলপথে চলাচলের পর অনুপোযোগী হয়ে পড়া কোচগুলো সৈয়দপুর কারখানায় এনে প্রয়োজনে মেরামত সেরে পূনরায় পাঠিয়ে দেওয়া হয় রেলপথে।
দেখা যায়, ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলছে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায়। ক্যারেজ শপে চলছিল ভারি মেরামত কাজ।
একটি ক্যারেজের বগির ওপর (আন্ডারফ্রেম) ক্রেনের মাধ্যমে স্থাপন করা হচ্ছে সুপার স্ট্রাকচার। পাশেই বগি শপে চলছিল চ্যাচিজ মেরামতের কাজ। এছাড়া ক্যারেজ শপে চলছে রেলকোচে রংয়ের প্রলেপ। ১২ হাজার রকম যন্ত্রাংশ তৈরি হয় মেশিনসহ কয়েকটি শপে। যা রেলকোচ, ওয়াগন ও ইঞ্জিনে ব্যবহার করা হয়। একটি শপে ট্রেনের ব্রেক তৈরি হচ্ছিল।
একটিতে তৈরি হচ্ছিল একটি কোচের সাথে অপর কোচকে জুড়ে দেওয়ার কাপলিং যন্ত্র। এছাড়া ঢাকায় পুড়ে যাওয়া ৩টি কোচও আনা হয়েছে কারখানায়। যেগুলো মেরামত করছিলেন শ্রমিকরা। সব মিলিয়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ।
এ নিয়ে কথা হয় সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্বাবধায়ক (ডিএস) সাদিকুর রহমানের সাথে তিনি বলেন, এখন কাজে তৎপরতা অনেক বেশি। দেশের রেলপথ বাড়ছে। তাই আমাদের ওপর চাপও বেড়েছে। তিনি কারখানাটিতে লোকবল সংকট নিরসনের ওপর গুরুত্ব দেন। তবে সীমাবদ্ধতার মাঝেও কারখানার গতি নজীরবিহীনভাবে ধরে রেখেছে শ্রমিক কর্মচারীরা।
তিনি এজন্য ধন্যবাদ জানান সংশ্লিষ্টদের।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী মুহাম্মদ কুদরত ই খুদা জানান, এখন ম্যানেজমেন্ট লেভেল অনেক ভালো। মূলত ব্যবস্থাপনার কারণেই সৈয়দপুর কারখানায় উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। অবিলম্বে রেলওয়ের সব রকম সীমাবদ্ধতা দুর করতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সজাগ আছে বলে জানান তিনি।
© দিন পরিবর্তন